Advertisement
১৮ মে ২০২৪

দূষণে অতিষ্ঠ জনতা ভাঙচুর চালাল চালকলে

চালকলে হামলা চালাল ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে গাইঘাটার ধর্মপুর ১ পঞ্চায়েতের কুলপুকুর এলাকায়।

চুরমার মিলের অফিস। ছবিটি তুলেছেন শান্তনু হালদার।

চুরমার মিলের অফিস। ছবিটি তুলেছেন শান্তনু হালদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০৩:১৯
Share: Save:

চালকলে হামলা চালাল ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে গাইঘাটার ধর্মপুর ১ পঞ্চায়েতের কুলপুকুর এলাকায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ কয়েকশো গ্রামবাসী ওই মিলের সামনে হাজির হন। তাঁরা মিলের অফিসের কাচের দরজা জানলা, চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার ভাঙচুর করেন। একটি গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। মিল মালিককে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। সোমবার বিকেল পর্যন্ত অবশ্য থানার কোনও অভিযোগ হয়নি।

কিন্তু কেন ভাঙচুর?

কুলপুকুর-সহ সংলগ্ন কয়েকটি গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই ওই চালকলটি নিয়ে আপত্তি তুলছিলেন। ওই মিলে ধান সেদ্ধ করার সময়ে তুষ জ্বালানো হয়। আর তা থেকে গোটা এলাকা ছাইয়ে ভরে যায় বলে অভিযোগ। খেতের ফসল নষ্ট হয়। এ কারণে জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে বললে জানালেন গ্রামের মানুষ। এমনকী, এলাকার বাড়িঘরের উপরেও কালো রঙের পোঁচ পড়েছে। এক মহিলার কথায়, ‘‘জামা-কাপড় বাইরে রোদে দেওয়া যায় না। ছাই উড়ে এসে কালো হয়ে যা। খাবারে ছাই পড়ে। রান্না করা খাওয়ারও মাঝে মধ্যে ফেলে দিতে হয়।’’ তা ছাড়া, বাতাসে ছাই মিশে থাকায় অনেকে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।

গ্রামবাসীদের দাবি, ছ’মাস ধরে আন্দোলন করা হচ্ছে। কিন্তু চালকল কর্তৃপক্ষ কোনও কথা শোনেননি। প্রশাসনকেও জানানো হয়েছিল। তারাও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। গ্রামের মানুষ জানান, জানুয়ারি মাসে এ ব্যাপারে পঞ্চায়েতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। ক’দিনের মধ্যেই পঞ্চায়েতে বৈঠকেও হয়েছিল সব পক্ষকে নিয়ে। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ গুহ বলেন, ‘‘ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এক মাসের মধ্যে মিল কর্তৃপক্ষ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশেষ যন্ত্র (ব্যাক ফিল্টার) বসাবে। তারপরে গ্রামবাসীরা আর আমাদের কিছু জানাননি।’’ ধ্যানেশবাবু আরও জানান, শনিবার রাতে গ্রামের লোক মিলে তালা দিয়ে আসেন। পুলিশ গিয়ে সেই তালা খোলে। তারপরে এই ভাঙচুরের ঘটনা।

সোমবার সন্ধ্যায় থানায় সব পক্ষকে নিয়ে ফের বৈঠক হয়েছে। থানা সূত্রের খবর, মে মাসের মধ্যে যন্ত্র বসিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করবেন মিল কর্তৃপক্ষ। তারপরেই চালু হবে মিল। একটি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে। যারা বিষয়টির উপরে নজর রাখবে। ভাঙচুরের জন্য গ্রামের মানুষজন মিল কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

পরিবেশবিদেরা বলছেন, চালকলে ধান সেদ্ধ করতে কয়লার বয়লার ব্যবহার করা হয়। ফলে সেই কার্বন কণা মিশ্রিত ধোঁয়া থেকে এলাকায় প্রচুর বায়ুদূষণ ছড়ায়।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, ইদানীং বেশ কিছু চালকলে তুষের গুঁড়ো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তার ফলে বড় বড় আকারের কার্বন কণা চিমনি দিয়ে বেরিয়ে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তা যেমন বায়ু দূষণ ঘটায়, তেমনই আশপাশের জমিতে পড়েও পরিবেশ দূষিত করে।

বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘ধান সেদ্ধ করার পর যে বর্জ্য জল থাকে, তা আগে চালকলগুলির ভিতরেই পুকুরে জমা করা হতো। এখন অনেক ক্ষেত্রেই তা বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। তা থেকেও দূষণ ছড়াতে পারে।’’

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, ২০০৬-০৭ সালে চালকলগুলিকে পরিবেশ বিধির আওতায় আনার প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছিল। পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকলে স্থানীয় পঞ্চায়েতগুলিকে চালকল বন্ধ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই নিয়ম কতটা মানা হয়েছে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে পরিবেশকর্মী ও পর্ষদের একাংশের। তবে পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্যে অন্যান্য কলকারখানার মতো চালকলের বিরুদ্ধেও দূষণের অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হয়। প্রয়োজনে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pollution rice mill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE