Advertisement
১১ মে ২০২৪

বেনাপোলে পুলিশের গুলি, আতঙ্কে বন্ধ সীমান্ত-বাণিজ্য

বেলা তখন সওয়া ২টো। আর পাঁচটা দিনের মতোই রবিবার স্বাভাবিক কাজকর্ম হচ্ছিল পেট্রাপোল স্থলবন্দরে। সার দিয়ে একের পর এক পণ্যবাহী ট্রাক ঢুকছিল বাংলাদেশের বেনাপোলে। ও দিক থেকেও পণ্যবাহী ট্রাক আসছিল এ দিকে। পাসপোর্ট নিয়ে যাত্রীরাও যাতায়াত করছিলেন। হঠাৎ ছন্দপতন। ফটফট করে একের পর গুলির শব্দ। আতঙ্কে পেট্রাপোল বন্দরে থাকা বেনাপোলগামী পণ্যবাহী ট্রাকের চালকেরা গাড়ি থেকে নেমে ছুট লাগান নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।

সীমান্তে মোতায়েন বাংলাদেশ পুলিশ। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

সীমান্তে মোতায়েন বাংলাদেশ পুলিশ। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পেট্রাপোল শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০১:০৬
Share: Save:

বেলা তখন সওয়া ২টো। আর পাঁচটা দিনের মতোই রবিবার স্বাভাবিক কাজকর্ম হচ্ছিল পেট্রাপোল স্থলবন্দরে। সার দিয়ে একের পর এক পণ্যবাহী ট্রাক ঢুকছিল বাংলাদেশের বেনাপোলে। ও দিক থেকেও পণ্যবাহী ট্রাক আসছিল এ দিকে। পাসপোর্ট নিয়ে যাত্রীরাও যাতায়াত করছিলেন।

হঠাৎ ছন্দপতন। ফটফট করে একের পর গুলির শব্দ। আতঙ্কে পেট্রাপোল বন্দরে থাকা বেনাপোলগামী পণ্যবাহী ট্রাকের চালকেরা গাড়ি থেকে নেমে ছুট লাগান নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। যাত্রীরাও আতঙ্কে উদ্ভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি শুরু করেন। নিমেষে নো ম্যানস ল্যান্ড সুনসান। এ পারে দাঁড়িয়ে অনেকের দূর থেকে দেখেন, বেশ কিছু নীল উর্দিধারী বাংলাদেশি পুলিশ শূন্যে গুলি চালাচ্ছেন মারমুখী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে।

মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয় সীমান্তের লোহার গেট। সারি সারি ট্রাক দাঁড়িয়ে পড়ে। সীমান্তের মূল গেট থেকে অনেকটা দূরে চলে আসেন পেট্রাপোলে থাকা মানুষজন। পরে জানা যায়, পড়শি দেশের শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতার সঙ্গে পুলিশের বাদানুবাদের জেরে গোলমাল ছড়ায়। মারমুখী শ্রমিকদের প্রতিহত করতে গুলি চালায় পুলিশ। দু’পক্ষের কয়েক জন জখম হয়েছেন।

বেলা ৩টে নাগাদ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে থাকে। ও পার থেকে আর খুব বেশি মানুষ আসেননি। দেশে ফেরার জন্য যে সব বাংলাদেশি পেট্রাপোলে আটকে পড়েছিলেন, তাঁরা উৎকন্ঠা নিয়ে দেশে ফিরতে থাকেন। আতঙ্কিত বাংলাদেশিরা গেটে পাসপোর্ট পরীক্ষার সময় কর্তব্যরত সরকারি আধিকারিকদের কাছে বার বার সে দেশের পরিস্থিতির কথা জানতে চাইছিলেন।

রকিবুল ইসলাম নামে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের এক বাসিন্দা বেলা ৩টে নাগাদ বেনাপোল থেকে পেট্রাপোলে এসে পৌঁছন। যাবেন কলকাতায়। তিনি বললেন, ‘‘বেনাপোলে দীর্ঘ ক্ষণ আটকে পড়েছিলাম। দেখি বহু মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে বেনাপোল শুল্ক ও অভিবাসন দফতরে হামলা করল। সেখানে ভাঙচুর চালানো হয়। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পুলিশ শূন্যে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়।’’ ও পার থেকে কিছু যাত্রী জানালেন, বেনাপোলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। দোকানপাট সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যানবাহনও প্রায় বন্ধ। পরের দিকে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে।

পণ্য-ভর্তি ট্রাক নিয়ে পেট্রাপোল থেকে বেনাপোলে গিয়েছিলেন এ দেশের ট্রাক চালক আলাউদ্দিন মণ্ডল। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই তিনি বেনাপোলে ট্রাক রেখে এ দিকে চলে এসেছেন। আলাউদ্দিন বললেন, ‘‘বেনাপোলে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে পুলিশ নির্দেশ দিয়েছে, আমরা ট্রাক চালকেরা যেন ট্রাক থেকে না বের হই। ট্রাকের দরজাও খুলতে দিচ্ছে না। ভয়ে চলে এসেছি।’’

বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ বেনাপোল শুল্ক দফতরের আধিকারিক কামরুজ্জামান পেট্রাপোলে এসে এ দেশের শুল্ক আধিকারিকদের বলে যান, বেনাপোলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের তাঁরা বাণিজ্যের কাজ শুরু করবেন। আপাতত পণ্যবাহী ট্রাক তাঁরা নিতে পারছেন না। পণ্য রফতানির কাজ শুরু করা যায় কিনা তা জানতে বেনাপোল শুল্ক দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন শুল্ক দফতরের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন। কারণ, এখানে বহু ট্রাকে পান-সহ নানা পচনশীল পণ্য রয়েছে।’’

দুপুর সাড়ে ৩টের পরে বেনাপোলে রাস্তায় দাঁড়ানো খালি ভারতীয় ট্রাকগুলি ও দেশের পুলিশ এ পারে পাঠিয়ে দিয়েছে নিরাপত্তার কথা ভেবে। বেনাপোলে সড়কে থাকা ভারতীয় পণ্য-বোঝাই ট্রাকগুলি বেনাপোল পোর্টের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবারও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কিনা তার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE