নতুন ইলিশ
অক্ষয়নগরের ফকির মাঝির মন এ বার একেবারে ভাল নেই। তিন দিনের খাটুনি সেরে সবে নামখানায় ফিরেছেন তিনি। প্রায় জলেই গিয়েছে পরিশ্রম। মরশুমের প্রথম শিকারে গিয়ে সামান্য ইলিশ নিয়েই ফিরতে হয়েছে তাঁকে।
শনিবারই মরসুমের প্রথম ইলিশ নিয়ে ডায়মন্ড হারবার, রায়দিঘি, কুলপি, কুলতলি, নামখানায় ট্রলার ভেড়ালেন মৎস্যজীবীরা। কিন্তু হতাশ তাঁদের অনেকেই। কারও ষাট কেজি, কারও মেরে কেটে এক কুইন্ট্যাল। তিন দিনের শিকারে তার বেশি ইলিশ কারওই জোটেনি। তবে এখনই নিরাশ হচ্ছে না মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি। তাঁদের আশা, একটু বৃষ্টি পড়লে হয়তো বদলাতে পারে চিত্রটা।
গত বছর প্রথমেই এক একটি ট্রলারে পর্যাপ্ত ইলিশের দেখা মিলেছিল। এ বার ছবিটা পুরোপুরি উল্টো। কাকদ্বীপের এফবি গুরুদেব অশোক ট্রলারের ফকির মাঝি। তিনি বলেন, ‘‘মরসুমের শুরুটাই খারাপ ভাবে হল। গত বছর প্রথমেই অনেক মাছ পেয়েছিলাম। কিন্তু এ বার তা হল না।’’ প্রায় এক কুইন্ট্যাল মাছ ধরেছেন ওই ট্রলারের মাঝিরা। মাছের সাইজ সর্বোচ্চ ৫৫০ গ্রাম।
আরও পড়ুন: পার্থেনিয়াম সাফ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে
গত বছর প্রথম শিকারেই এক একটি বড় ট্রলারে মাছ প্রায় ৫-৭ কুইন্ট্যাল করে ইলিশ হয়েছিল। মোহনার অনেক কাছে চলে এসেছিল ইলিশ। এ বার সেই পরিস্থিতি নেই বলে জানাচ্ছে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলিও। ইউনাইটেড ফিসারমেন অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বিজন মাইতি, সতীনাথ পাত্ররা বলেন, ‘‘বর্ষা ঢুকেছে, কিন্তু বৃষ্টিটা সেরকম হচ্ছে না। তা ছাড়াও গত কয়েকদিন থেকে পুবের হাওয়ার বদলে পশ্চিমার দাপট বেশি।’’ এই কারণেই এখনও পরিস্থিতি ইলিশের জন্য মৎস্যজীবীদের কাছে অনুকূল হয়নি বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা।
নামখানার এফবি সোনামুখী ট্রলারের শ্রমিক অসিত দাসেরও একই অভিজ্ঞতা। তাঁদের ইলিশ জুটেছে ষাট কেজির মতো। তাঁর কথায়, ‘‘খাটুনি পোষায়নি। সেরকম ইলিশ না মেলায় কিছু অন্য মাছ ধরে নিয়ে আসতে হয়েছে।’’ ১৪ জুন গভীর রাতে মাছ ধরতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন প্রচুর ট্রলার। এ দিন বিকেলে নামখানায় ফিরে আসে প্রায় ৪০টি ট্রলার। সব মিলিয়ে দু’ থেকে আড়াই মেট্রিকটনের কাছাকাছি ইলিশ উঠেছে বলে জানাচ্ছে, মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি। গতবার ১২-১৫ মেট্রিকটনের কাছাকাছি ছিল।
তবে নামখানা মহকুমা থেকে প্রায় এখনও বেশিরভাগ ট্রলারই রয়েছে গভীর সমুদ্রে। তাঁদের ফিরতে আরও তিন চারদিন লাগবে। চিত্রটা তখন আরও পরিষ্কার হবে বলে জানাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। মৎস্য দফতরের কর্তারাও পরিস্থিতির উপর নজর রেখে চলেছেন। ডায়মন্ড হারবার সামুদ্রিক মৎস্য দফতরের এক অফিসার বলেন, ‘‘বর্ষার শুরুতে উত্তরবঙ্গে প্রচুর বৃষ্টি হলেও ইলিশের জন্য পরিস্থিতি খানিকটা অনুকূল থাকে। এ বার সেটা প্রায় নেই। ছিঁটেফোটা বৃষ্টি হচ্ছে গভীরসমুদ্রেও। ঘোর বর্ষা শুরু হলে পরিস্থিতি বদলাতেও পারে।’’
সহ প্রতিবেদন: দিলীপ নস্কর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy