মাস চারেক আগে ছিল ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ। তার পরে অ্যাসিড হানা। এ বার ছোরার আঘাত।
প্রথমে কাকদ্বীপ। তার পরে জয়নগর। এবং ফের জয়নগর। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রকাশ্য রাস্তায় ফের দুষ্কৃতী-হামলার মুখে পড়লেন যুবতী। দুষ্কৃতীদের ছোরার আঘাতে গলায় গভীর ক্ষত নিয়ে এ বার হাসপাতালে ভর্তি হলেন জয়নগরের বামনদেব ভট্টাচার্য পাড়ার অনিন্দিতা হালদার (নাম পরিবর্তিত)। দুষ্কৃতীরা তাঁর শ্লীলতাহানি করে খুনের চেষ্টাও করে বলে অভিযোগ। সোমবার সকালে ওই ঘটনার পরে রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আটক করা হয়েছে দু’জনকে। ফলে, বিধানসভা নির্বাচনের মুখে নারী নির্যাতনের ঘটনায় ফের পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। ঘটনার প্রতিবাদে দুপুরে ঘণ্টাখানেক পথ অবরোধও করে এসইউসি।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তবে, তদন্তকারীদের কেউ কেউ মনে করছেন, যুবতীর মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যই ওই হামলা হয়। সে কথা অবশ্য মানেননি অনিন্দিতা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে অনিন্দিতা পাশের চাঁপাতলা গ্রামে ছাত্র পড়াতে যাচ্ছিলেন। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে যাওয়ার পর একটি নির্জন এলাকায় দুই দুষ্কৃতী তাঁর পথ আটকায়। যুবতীকে তারা টেনে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। বাধা দেওয়ায় অনিন্দিতার সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। সেই সময়েই এক দুষ্কৃতী অনিন্দিতার গলায় ছোরা চালিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। দুষ্কৃতীদের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে যুবতীকে পাশের ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়। অনিন্দিতার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে আসেন। তার আগেই দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। অনিন্দিতা মোবাইলে ঘটনার কথা বাড়িতে জানান।
এ দিন গুরুতর জখম অবস্থায় অনিন্দিতাকে প্রথমে স্থানীয় নিমপীঠ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতার এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তাঁর গলায় পাঁচটি সেলাই করা হয়। তবে, অনিন্দিতার বাবা বলেন, ‘‘যে এলাকায় মেয়ের উপরে হামলা হয়, তার পাশেই শ্মশান রয়েছে। ওখানে সমাজবিরোধীদের আড্ডা রয়েছে। মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য নয়, মেয়ের সর্বনাশ করার জন্যই রাস্তার পাশের ঝোপে টেনে নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করেছিল দুষ্কৃতীরা।’’
গত নভেম্বরে টিউশন নিয়ে ফেরার পথে কাকদ্বীপের হরিপুরের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। মাঝরাতে তাঁর দেহ মেলে রাস্তায়। তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়। তার পরে ওই মাসেই আবার জয়নগরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে এক মহিলার উপরে অ্যাসিড হামলার অভিযোগ ওঠে তাঁর প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে। সেই অভিযুক্তকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। এ বার জেলায় নারী নিগ্রহের সেই তালিকায় যুক্ত হল এ দিনের ঘটনাও।
যথারীতি এ ক্ষেত্রেও পুলিশের ভূমিকা এবং শাসকদলের যোগ নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। এলাকার এসইউসি বিধায়ক তরুণ নস্করের অভিযোগ, ‘‘রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই জয়নগরে শাসকদলের মদতে দুষ্কৃতীরা জড়ো হচ্ছে। মহিলাদের উপর আক্রমণ শুরু করেছে। শাসকদলের চাপে পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে।’’ অনেকটা একই সুরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী দুষ্কৃতীদের নেতৃত্বে রয়েছেন। পাশে রয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার বা আইনি পদক্ষেপ কী করে হবে? এই পরিস্থিতেতে দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব করবে, তা তো স্বাভাবিক।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি অর্ণব রায় একই ভাবে সমালোচনা করেন।
তৃণমূল বিরোধীদের অভিযোগ মানেনি। জেলা তৃণমূলের ভাইস-চেয়ারম্যান শক্তি মণ্ডল বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা থাকলে পুলিশ তদন্ত করবে। নির্বাচনের আগে বিরোধীরা নানা ঘোট পাকানোর চেষ্টা করছে। আইন আইনের পথেই চলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy