Advertisement
E-Paper

পথ্যে পুষ্টি ষাট টাকায়!

সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাচ্ছেন রোগীরা। ভর্তি থাকাকালীন কেমন খাবার খাচ্ছেন তাঁরা? রান্নাঘরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রান্না হয় তো? মেডিক্যাল, সুপার স্পেশ্যালিটি থেকে গ্রামীণ হাসপাতাল— রান্নাঘরে উঁকি দিল আনন্দবাজার। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাচ্ছেন রোগীরা। ভর্তি থাকাকালীন কেমন খাবার খাচ্ছেন তাঁরা? রান্নাঘরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রান্না হয় তো? মেডিক্যাল, সুপার স্পেশ্যালিটি থেকে গ্রামীণ হাসপাতাল— রান্নাঘরে উঁকি দিল আনন্দবাজার।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৫১
রোগীর খাবার। ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতালে। ছবি:কৌশিক সাঁতরা

রোগীর খাবার। ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতালে। ছবি:কৌশিক সাঁতরা

পাতে ডাল দিলে সাঁতার কাটে ভাত। এক হাতা তরকারি তখন যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের একাংশের অভিযোগ, প্রতিদিন দুপুর-রাতে মেলে এমনই খাবার।

সকালে পাউরুটি, দুধ, কলা। দুপুরে ভাত, তরকারি, মাছ অথবা ডিম। রাতে ফের দুপুরের মেনু। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের দেওয়া হয় এই খাবার। এরজন্য প্রতিদিন রোগী পিছু বরাদ্দ ৬০ টাকা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষগুলির প্রশ্ন, এই অল্প টাকায় পুষ্টিগুণ মেনে খাবার দেওয়া সম্ভব! খাবার নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই রোগীদের। তবু এ ভাবেই চলছে হাসপাতালের আহার। দিনের পর দিন। বছরের পর বছর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার অবশ্য দাবি, “হাসপাতালগুলিতে খাবার নিয়ে কোনও অনিয়ম নেই। সরকারি ডায়েট চার্ট মানা হয়। কড়া নজর রয়েছে।”

হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের মূলত গরুর দুধ দেওয়ার কথা। বাজার থেকে টাটকা রুই-কাতলা কিনে তা রান্না করতে হবে— এমনই নির্দেশ স্বাস্থ্য ভবনের। শুধু তাই নয়। সমস্ত রান্না করার কথা নামী কোম্পানির মশলা দিয়ে। শিশু , প্রসূতি, সুগার, কিডনি ও লিভার জনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি থাকা রোগীদের জন্যও রান্না করতে হবে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে। নিয়ম হল, আলাদা ভাবে রান্না করার আগে ভালভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে ক়়ড়াই।

খাতায় কলমে সরকারি নির্দেশ আছে। কিন্তু হাসপাতালগুলির হেঁশেল বলছে অন্য কথা। তা সে ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হোক কিংবা জেলার গ্রামীণ হাসপাতাল। ঘাটাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, শিশু, প্রসূতি থেকে শুধু করে সব রোগীদের জন্য একই কড়াইয়ে রান্না হচ্ছে। একই ছবি অন্যত্রও। খাবারের মান নিয়ে তেমন কোনও অভিযোগ নেই ঘাটাল হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের। তবে গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে গেলে কানে আসবে ভুরি ভুরি অভিযোগ। বিশেষ করে যে হাসপাতালগুলিতে অল্প সংখ্যক রোগী ভর্তি থাকেন সেখানে অভিযোগের বহর বেশি। গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালের এক রোগী বলছিলেন, “সকালে রান্না হয়। দুপুরে খাই। মাছ-ডিমের স্বাদ নেই।” ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতাল ভর্তি এক রোগীর পরিজনের কটাক্ষ, “দুধ না জল বোঝা দায়। রংটা শুধু সাদা।” অভিযোগ, গরুর দুধের পরিবর্তে মেলে পাউচের দুধ।

ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের রান্নার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক ঠিকা কর্মী বললেন, “সস্তার মাছই কেনা হয়। কখনও-সখনও মাছ অথবা তরকারি ফ্রিজেও রাখা হয়। তেল ও মশলা সবই স্থানীয় কোম্পানির।” চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে রান্নার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বনির্ভর দলের এক সদস্য বললেন, “সরকার যা টাকা দেয়, নিয়ম মানতে গেলে পকেট থেকে টাকা খসবে। তা হলে আমরা খাটছি কেন? টাকা না বাড়ালে এত নিয়ম মানা সম্ভব নয়।” জেলার এক বিএমওএইচ-ও বললেন, “ষাট-একষট্টি টাকায় ভাল মানের খাবার দেওয়া কোথা থেকে সম্ভব!”

রোগীর পরিজনদের একাংশের বক্তব্য, ভাল মানের খাবার! ডালের জলে সাঁতার কাটা ভাত খেয়ে ঘরের লোক সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরলেই হল। নার্সিংহোমে ভর্তি করানোর সাধ্য তো নেই।

Food Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy