Advertisement
E-Paper

অস্বাস্থ্যকর শৌচালয়, স্ত্রীরোগে আক্রান্ত প্রধান শিক্ষিকা নিজেই

শৌচালয়ের অভাবে রোজ স্কুলে এসে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে বলে জানালেন অনেক শিক্ষিকাই।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯ ০২:০৪
দরজা-বন্ধ: সুস্বাস্থ্যের জন্য শৌচালয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সরকারি বিজ্ঞাপন

দরজা-বন্ধ: সুস্বাস্থ্যের জন্য শৌচালয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সরকারি বিজ্ঞাপন

স্কুলের পঁয়ষট্টি জন শিক্ষিকার শৌচালয় একটিই!

শিক্ষিকারা ছাড়াও ওই শৌচালয় ব্যবহার করেন পুরুষ অশিক্ষক কর্মচারীরা। এমনই পরিস্থিতি বনগাঁ কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের। স্কুলটি বনগাঁ শহরের অন্যতম নামী স্কুল হিসেবেই পরিচিত।

শৌচালয়ের অভাবে রোজ স্কুলে এসে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে বলে জানালেন অনেক শিক্ষিকাই। শৌচালয়ের পরিবেশেও অস্বাস্থ্যকর। অনেক শিক্ষিকাই স্কুলের শৌচালয় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। সারা দিন জল কম খাওয়াই এক অস্ত্র। কয়েক জন তো জানালেন, তাঁরা বাড়ি থেকে বেরোনোর পরে না ফেরা পর্যন্ত জলস্পর্শই করেন না!

প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী উকিল স্কুলে এসে জল পান করতেন না। দীর্ঘ দিন ধরে জল না খাওয়া এবং প্রস্রাব চেপে রাখার ফলে সম্প্রতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশনে বা মূত্রনালীর সংক্রমণে (ইউটিআই) ভুগছেন। বর্তমানে নার্সিংহোমে ভর্তি। বললেন, ‘‘স্কুলে একটিমাত্র শৌচালয় থাকায় খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় শিক্ষিকাদের। স্কুলে গিয়ে জল খেতাম না। এর ফলেই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আরও দু’টি শৌচালয় থাকলে সমস্যার সমাধান করা যেত।’’

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, শৌচালয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। শৌচালয় পরিষ্কার করা হয়, তবে তা সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত থাকে না। স্কুলের শিক্ষিকা পদ্মাবতী মণ্ডলের কথায়, ‘‘বনগাঁ শহরেই আমার বাড়ি। ফলে স্কুলে আসার আগে বাড়ি থেকে বাথরুম করে আসি। স্কুলে জল খাই না। স্কুলের টয়লেট ব্যবহার না করলেও অসুবিধা হয় না। তবে যাঁরা বনগাঁর বাইরে থেকে আসেন, তাঁরা খুবই সমস্যায় পড়েন। বাধ্য হয়ে তাঁরা ওই শৌচালয়ই ব্যবহার করেন।’’ তিনি জানালেন, এ সবের জন্য অন্তত তিন জন শিক্ষিকা ইতিমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

বৃহস্পতিবার নজরুল মঞ্চে তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষা সমিতির এক অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলির প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, শিক্ষিকারা এত বেশি স্ত্রীরোগে ভুগছেন, যে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। শিক্ষামন্ত্রীর ওই মন্তব্যের সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। স্কুলগুলির শৌচালয়ের হাল খারারপ থাকায় অনেকে রোগে ভুগছেন বলে মনে করেন বহু শিক্ষিকাই।

নরহরিপুর সারদাচরণ বিদ্যাপীঠ স্কুলে ন’জন শিক্ষিকা। এখানেও শৌচালয় একটি। প্রধান শিক্ষিকা সুপর্ণা ঘোষ রায় বলেন, ‘‘টয়লেটের সংখ্যা ঠিকই আছে। তবে স্কুলে কোনও সাফাই কর্মী না থাকায় টয়লেট উপযুক্ত ভাবে নিয়মিত পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না।’’ চাঁদপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ২৯ জন। শৌচালয় এখানে ৪টি। প্রধান শিক্ষিকা ঝুমা চক্রবর্তী জানালেন, স্কুলে শিক্ষিকাদের বসার জন্য স্টাফ রুম নেই। কিন্তু টয়লেট নিয়মিত সাফ করার জন্য তাঁরা নিজস্ব ভাবে সাফাই কর্মী রেখেছেন। কারণ, এটা খুবই জরুরি বলে জানেন সকলে। নহাটা সারদাসুন্দরী বালিকা বিদ্যামন্দির স্কুলে ৩১ জন শিক্ষিকার জন্য রয়েছে তিনটি টয়লেট। নিয়মিত সাফ করা হয়। প্রধান শিক্ষিকা শম্পা পাল বলেন, ‘‘আমাদের শিক্ষিকাদের কোনও স্ত্রীরোগ হয়নি।’’ ঠাকুর হরিদাস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও সাফাই কর্মী রেখে নিয়মিত শৌচালয় পরিষ্কার করান। সরকারি ভাবে সাফাই কর্মী অবশ্য নেই। প্রধান শিক্ষিকা অনিমা চৌধুরী সাউ জানিয়েছেন, তাঁর স্কুলের শিক্ষিকাদের মধ্যেও কেউ স্ত্রীরোগে আক্রান্ত নন।

বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্রাব চেপে রাখলে, জল না খেলে বা অস্বাস্থ্যকর শৌচালয় ব্যবহার করলে মহিলাদের ইউটিআই দেখা যায়। ওই অসুখে কেউ ভুগলে কিডনির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।’’ প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মহিতোষ মণ্ডলও মনে করেন, মূত্রনালীর সংক্রমণ, সাদা স্রাবের সমস্যা নিয়ে স্কুলের শিক্ষিকারা কয়েক বছর আগের তুলনায় এখন বেশি করে চিকিৎসা করাতে আসছেন। জল না খাওয়া, ইউরিন চেপে রাখা, অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহারের ফলেই বহু শিক্ষিকা স্ত্রীরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে মত ডাক্তারবাবুর।

সমস্যা অনেক। সমাধানের পথ, শৌচালয়ের হাল বদলানো। কিন্তু তা কতটা হবে, সন্দেহ নানা মহলে।

Partha Chatterjee School Teachers TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy