Advertisement
E-Paper

ভোটের মুখে চর্চায় ফের আর্সেনিক

আর্সেনিক দূষণের জেরে অসুস্থ মানুষদের চিকিৎসা ও তাঁদের সচেতন করতে পদক্ষেপ করল স্বাস্থ্য দফতর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯ ০৫:৩৯
চিকিৎসা-শিবির: গাইঘাটায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

চিকিৎসা-শিবির: গাইঘাটায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

আর্সেনিক দূষণের জেরে অসুস্থ মানুষদের চিকিৎসা ও তাঁদের সচেতন করতে পদক্ষেপ করল স্বাস্থ্য দফতর।

মঙ্গলবার সকালে গাইঘাটা ব্লকের আর্সেনিক আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য বিষ্ণুপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা শিবিরের আয়োজন করা হয়। গাইঘাটা ব্লক স্বাস্থ্য দফতর ওই শিবিরের আয়োজন করে। সেখানে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, ও আর্সেনিক বিশেষজ্ঞেরা উপস্থিত ছিলেন। রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করা হয়। দেওয়া হয় ওষুধপত্রও। ওই শিবির থেকেই জলে আর্সেনিক বিষ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয়।

গাইঘাটার বিএমওএইচ ভিক্টর সাহা বলেন, ‘‘এ দিন শিবিরে ৭১ জন রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই গাইঘাটার ব্লকের যে সব এলাকায় রোগীরা রয়েছেন, সে সব এলাকায় শিবির করে রোগীদের চিকিৎসা করা হবে।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন শিবিরে আসা ৭১ জন রোগীর মধ্যে ৩২ জনকে শনাক্তকরণ কার্ড দেওয়া হয়েছে। ভিক্টর জানান, কয়েকজন রোগীর ইতিমধ্যেই ক্যানসার ধরা পড়েছে।

আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটির সম্পাদক অশোক দাস বলেন, ‘‘মানুষের চুল, নখ ও মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে আর্সেনিক-আক্রান্তদের চিহ্নিতকরণ করতে হবে। রোগীদের পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। খাবারের বিষয়টি প্রশাসন দেখছে।

ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের হিসেবে বিষ্ণুপুর এলাকায় আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ মানুষের সংখ্যা ৭৫ জন। আক্রান্তেরা কত দিন ধরে ভুগছেন, খাবার বা ওষুধ কী খাচ্ছেন, তা নিয়েও খোঁজ-খবর করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত চিকিৎসার অভাবে ও প্রোটিন নির্ভর খাবারের অভাবে আরও বেশি করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। মৃত্যুও ঘটছে।

কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পঁচিশ বছরে ব্লকে আর্সেনিক দূষণের জেরে মারা গিয়েছেন ৩৪ জন। এখনও ব্লকে অসুস্থ রয়েছেন এক হাজার মানুষ। বছর পঁচিশ আগে একটি সমীক্ষায় প্রথম জানা যায়, এখানকার মানুষের শরীরে আর্সেনিক বিষ প্রবেশ করেছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘মূলত ওই এলাকায় মানুষ যে পানীয় জল খেতেন বা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করতেন, তাতে উচ্চ মাত্রায় আর্সেনিক ছিল। সে কারণেই আর্সেনিকের বিষ মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে। নতুন করে অবশ্য কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন না।’’

যে কোনও ভোটের আগেই আর্সেনিক দূষণের প্রসঙ্গটি মানুষজনের আলোচনায় এসে পড়ে গাইঘাটায়। প্রচারেও এ নিয়ে প্রতিশ্রুতি শোনা যায় রাজনৈতিক দলগুলির মুখে। কিন্তু বছর ঘুরে গেলেও পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন চোখে পড়ে না। দিন কয়েক আগে বিষ্ণুপুর এলাকায় আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত এক দম্পতি-সহ তিনজনের মৃত্যু হওয়ায় নতুন করে বিতর্ক সামনে এসেছে।

গাইঘাটার বাসিন্দা তথা সিপিআইয়ের রাজ্য কমিটির সদস্য রণজিৎ কর্মকার বলেন, ‘‘গাইঘাটার আর্সেনিক সমস্যার সমাধানে সাংসদের কোনও ভূমিকা আমরা দেখিনি। এ বারও ভোটের প্রচারে আমরা আর্সেনিক সমস্যার কথা তুলে ধরব।’’ বিজেপি নেতা চন্দ্রকান্ত দাস বলেন, ‘‘গাইঘাটা ব্লকটি আর্সেনিকপ্রবণ। কিন্তু সাংসদ সমস্যা মেটাতে কিছুই করেননি। ভোটে এটা আমরা তুলে ধরব।’’ বনগাঁর বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ মমতা ঠাকুর এ বারও টিকিট পেয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘গাইঘাটা ব্লকে পানীয় জলে আর্সেনিক সমস্যা মেটাতে নৈহাটি থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে এখানে গঙ্গা থেকে জল আনার কাজ চলছে। ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে।’’ বহু রোগীকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি তাঁর।

Arsenic Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy