আমডাঙা মন্দিরের কালীমূর্তি। —নিজস্ব চিত্র
কালী মানেই উগ্রচণ্ডা। ব্যতিক্রম উত্তর ২৪ পরগনার অন্যতম প্রাচীন আমডাঙা কালী মন্দির। এখানকার কালী মূর্তি শান্ত। ইতিহাসের আকর সমৃদ্ধ সাড়ে চারশো বছরেরও বেশি প্রাচীন এই কালী মন্দিরে আজও মনস্কামনা নিয়ে পুজো দেন দূর-দূরান্তের মানুষ। কালীপুজোয় সময় ভক্তের সংখ্যা আরও বাড়ে কয়েক গুণ। তবে করোনার জন্য এ বছর বন্ধ রাখা হচ্ছে অন্নকূট উৎসব।
আমডাঙা কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন মান সিংহ। মুঘল সম্রাট আকবরের সৈনদল দু’বার রাজা প্রতাপাদিত্যের কাছে পরাজিত হন। মুঘল সম্রাটের বিশ্বাস ছিল, যশোরের যশোরেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়ে তার পর যুদ্ধ শুরু করতেন বলেই জয়লাভ করতেন প্রতাপাদিত্য। প্রতাপাদিত্যের এই রণকৌশল ভবিষ্যতে যাতে আর না হয়, সেই পরিকল্পনা করতে মান সিংহকে নিয়োগ করেন সম্রাট আকবর। মান সিংহ শুরুতেই যশোরেশ্বরী মন্দির থেকে বিগ্রহ সরিয়ে দেন। প্রতাপাদিত্য সে কথা জানতে পারার পরেই মন্দিরের পূজারী রামানন্দ গিরি গোস্বামীকে নির্বাসিত করে দণ্ড দেন। এর পর যুদ্ধে জয় লাভ করে রাজস্থানের অম্বরে সেই যশোরেশ্বরী মূর্তি স্থাপিন করেন মান সিংহ।
অন্যদিকে নির্বাসিত হয়ে রামানন্দ এই আমডাঙ্গায় শুখাবতী (সুটি) নদীর ধারে জঙ্গলে এসে উপস্থিত হন। অন্য দিকে মান সিংহ স্বপ্নাদেশ পান, মায়ের শিষ্য রামানন্দ উন্মাদ অবস্থায় সুটি নদীর তীরে রয়েছেন। রামানন্দকে উন্মাদ অবস্থা থেকে শান্ত সাধক মার্গে ফিরিয়ে আনার জন্য কষ্টিপাথর দিয়ে কালীর শান্ত মূর্তি নির্মাণ করেন মান সিংহ। ১৫৬১ খ্রিস্টাব্দে বিগ্রহ তৈরি হওয়ার পর সূচনা হয় আমডাঙা কালী মন্দিরের।
আরও পড়ুন: পর পর ‘ইঙ্গিতবহ’ টুইট, এ বার কি শেষ পর্যন্ত সোমেন-পুত্রও মমতার তৃণমূলের পথে
প্রতিষ্ঠার পরেও বহু ইতিহাসের সাক্ষী আমডাঙা কালী মন্দির। ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলার কলকাতা অভিযানের সময় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এখানকার এই কালীমূর্তি দেখতে পান এবং প্রার্থনা করেন। মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ার পর তিনি এই মন্দিরে প্রায় ৩৬৫ বিঘা জমি দান করেন।
আমডাঙা মন্দিরে পূজিত হয় কালীর শান্ত মূর্তি। মূর্তি রয়েছে মন্দিরের দোতলার ঘরে। মন্দির ঘিরে পঞ্চদশ বা ১৫টি শিব মন্দির রয়েছে। মন্দিরের মহন্তরা মারা যাওয়ার পর তাঁদের সমাধিস্থল এর উপরে এই শিব মন্দিরগুলি গড়ে উঠেছে বলে জানান মন্দিরের এক কর্মী প্রসেনজিৎ রায়।
আরও পড়ুন: রাজ্য জুড়ে সক্রিয়তা বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরে, উৎসব শেষের আগেই শুরু ২০২১ সালের ‘নীলবাড়ির লড়াই’
আমডাঙ্গা মঠ ও ম্যানেজিং কমিটির সম্পাদক অদ্বৈত বিশ্বাস বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে এই মন্দিরের অন্যতম অন্নকূট উৎসব এ বার বন্ধ রাখা হয়েছে। স্থানীয় ভক্তদের বাড়ি বাড়ি প্রসাদ বিতরণ করা হবে। মন্দিরের চার পাশে করানোর সাবধানবানী দিয়ে বসানো হয়েছে বোর্ড। সতর্ক করা হয়েছে মন্দিরের আশপাশে পূজোর সামগ্রী বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের মধ্যেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy