Advertisement
E-Paper

নিকাশির হাল শুধরাবে কবে, প্রশ্ন অশোকনগর-কল্যাণগড়ের বধূদের

আরও একটা পুরভোট দোরগোড়ায়। পরিষেবার কাজ গত পাঁচ বছরে কতটা এগিয়েছে, তা নিয়ে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার পাড়ায় মোড়ে, বাড়ির রকে, চায়ের দোকানে আলোচনা চলছে বিস্তর। বিভিন্ন এলাকায় হেঁশেলে ঢুকে মালুম হল, পাওয়া-না পাওয়ার হিসেবনিকেশ চলছে সেখানেও। ভোটের আঁচে যথেষ্ট তেতে উঠেছেন বধূরাও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২৬

আরও একটা পুরভোট দোরগোড়ায়। পরিষেবার কাজ গত পাঁচ বছরে কতটা এগিয়েছে, তা নিয়ে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার পাড়ায় মোড়ে, বাড়ির রকে, চায়ের দোকানে আলোচনা চলছে বিস্তর। বিভিন্ন এলাকায় হেঁশেলে ঢুকে মালুম হল, পাওয়া-না পাওয়ার হিসেবনিকেশ চলছে সেখানেও। ভোটের আঁচে যথেষ্ট তেতে উঠেছেন বধূরাও।

ঘরণীদের অনেকে বলছেন, রাস্তাঘাট ভাল হয়েছে, কিন্তু পর্যাপ্ত আলোর বন্দোবস্ত হয়নি এখনও। কেউ চাইছেন, এলাকায় গড়ে উঠুক ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। অনেকেই হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ। কেউ যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশায় তিতিবিরক্ত। কেউ আবার শঙ্কিত মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে। দুর্বৃত্তদের বাড়াবাড়ি কবে শেষ হবে, সে দিকে চেয়ে রয়েছেন তাঁরা।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিরও দাবি জানিয়েছেন বধূরা। তাঁদের বক্তব্য, অশোকনগর থেকে সরাসরি বারাসত বা কলকাতার বাস চলে না। ভ্যান বা অন্য গাড়িতে যশোর রোডে এসে বাস-ট্রেন ধরতে হয়। সময়, অর্থ দুই-ই অপচয় হয়। মহিলারা চান, এখান থেকে কলকাতা যাওয়ার সরাসরি বাস এবং শিয়ালদহ থেকে অশোকনগর পর্যন্ত লোকাল ট্রেন চালু হোক। শহরে মিলেনিয়াম পার্ক ও সংহতি পার্কে বছরভর বহু মানুষ আসেন। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ার তাঁরা সমস্যা পড়েন। নতুন প্রজন্মের মায়েদের দাবি, পুরসভা উদ্যোগী হয়ে শহরে ইংরেজি মাধ্যম কিছু স্কুল তৈরি করুক।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের শরৎ কলোনির বাসিন্দা উমা দর্জি। ওই বধূ জানালেন, এলাকায় রাস্তা বেহাল। পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থাও তথৈবচ। বর্ষার সময় জলে জমে যায়। ঘরে জল ঢুকে যায়। তা সরতে বেশ কয়েক দিন সময় লাগে। রাস্তার আলো দুষ্কৃতীরা ভেঙে দিয়ে যায়। মেয়েরা রাতে পথে বের হতে ভয় পান। প্রকৃতই গরিব, এমন অনেকেরই এখনও বিপিএল তালিকায় নাম নেই। শহর জুড়ে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য লেগে থাকে। উমাদেবী বলেন, ‘‘মাস দুয়েক আগে পুরসভার থেকে মাইকে ঘোষণা করা হয়েছিল, রাস্তা মেরামত করা হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি।’’ ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বর্ণালী মুখোপাধ্যায় মনে করেন, ‘‘মহিলাদের নিরাপত্তার দিকে নজর দেওয়া উচিত। চুরি-ছিনতাই রুখতে প্রশাসনের বেশি করে নজর দেওয়া উচিত। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না।’’ তবে বর্ণালীদেবীর বক্তব্য, ‘‘পানীয় জল এবং রাস্তার আলো ঠিকই আছে। কিন্তু গোলবাজারের নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল। বৃষ্টি হলে জল জমে যায়। যাতায়াত সমস্যা তৈরি হয়। বড় বাজারগুলির নিকাশি ব্যবস্থার দিকেও নজর দেওয়া উচিত।’’ ওই ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষিকা অর্চনা দে’র কথায়, ‘‘এলাকার রাস্তাঘাট ভাল হয়েছে। রাস্তায় প্রচুর আলোর ব্যবস্থা হয়েছে। জল সরবরাহ যথেষ্ট। অটো এবং টোটো গাড়ির নতুন নতুন রুট হওয়ায় যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে। হয়েছে সুমিং পুল। তবে চিকিৎসা ব্যবস্থা খারাপ। চিকিৎসা পরিকাঠামো উন্নত হওয়া প্রয়োজন।’’

২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সঙ্গীত শিল্পী শুভ্রাতা দাসও হাসপাতালের বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ গোপন করেননি। তাঁর কথায়, ‘‘সকলের পক্ষে তো নার্সিংহোমে যাওয়া সম্ভব নয়!’’ তিনি বলেন, ‘‘এলাকায় নিকাশি নালা তৈরি হয়নি। বাইপাস থেকে কল্যাণগড় বাজারে যাওয়ার রাস্তায় আলো নেই। তবে পুরসভার পক্ষ থেকে নিয়মিত বাড়ি থেকে নোংরা নিয়ে যাওয়া হয়।’’ পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর দাবি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা হোক। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাগরিকা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার জানালেন, ওই এলাকায় গত দশ বছরে নতুন রাস্তা তৈরি হয়নি। নিকাশি ব্যবস্থার হাল খারাপ। বৃ্ষ্টি হলে জল জমে যায়। এলাকায় একটি মাত্র টাইম কল। প্রধান রাস্তাগুলোয় পর্যাপ্ত আলো থাকলেও গলিগুলোতে আলোর অভাব রয়েছে বলেও তিনি জানান। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মিতা দেবনাথ পেশায় সেলাই কর্মী। ওই গৃহবধূর পর্যবেক্ষণ, ‘‘আলো, পানীয় জল, রাস্তাঘাট সবই ঠিকই আছে কিন্তু নিকাশির অবস্থা ভয়াবহ। অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। তবে, আবর্জনা নিয়মিত পরিস্কার হয়। বাড়ি থেকেও নোংরা নিয়ে যাওয়া হয়।’’

এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য নিয়ে আতঙ্কিত গৃহবধূরা। তাঁদের অনেকেই মনে করেন, রাজনৈতিক মদতে দীর্ঘদিন ধরেই এখানে দুষ্কৃতীদের রাজত্ব চলছে। বহিরাগত দুষ্কৃতীরা এসে নিরাপদে আশ্রয় নেয় এখানে। নানা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটিয়ে ফিরে যায় তারা। চোলাই ও বাংলা মদের কারবার রমরমিয়ে চলে। ফোন করে দিলেই চোলাই নিয়ে হাজির হয়ে যায় কারবারিরা। আরও একটি জলন্ত সমস্যা তোলাবাজি। জমি-বাড়ি কেনাবেচা করলে দুষ্কতীদের তোলা দেওয়াটা কার্যত নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রায়ই কানে আসে বোমাগুলির শব্দ। খুনের ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য কিছুটা কমেছে বলে অনেকের অভিমত। মহিলারা চান, পুর-প্রশাসন পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিক। সংস্কৃতি চর্চার ঐতিহ্য রয়েছে এখানে। তবে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র শহিদ সদনের অবস্থা খারাপ। সেটির আধুনিকীকরণের দাবি জানান বধূরা। শহরে ত্রিফলা বা হাইমাক্স আলো বসেছে হয়েছে। অটোমেটিক সিগন্যাল ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু গাড়িচালক ও পথচারীরা তা মেনে চলেন না বলে অভিযোগ। অশোকনগর থেকে হাবরা পর্যন্ত বাইপাস রাস্তা তৈরি হলেও ওই পথে যান চালকেরা গাড়ি চালাতে চান না।

ashoknagar kalyangarh municipality election 2015 ashoknagar sewerage system ashoknagar road simanta maitra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy