অবাধে: মুড়িগঙ্গার গর্ভ থেকে লট নং ৮ এর এলসিটি ঘাটের কাছে এ ভাবেই তোলা হয় বালি-মাটি। —নিজস্ব চিত্র
তখনও দিনের আলো ফোটেনি। মুড়িগঙ্গায় ভাটা চলছে। জল নামতেই বেরিয়ে পড়েছে বালি মাটি। কাকদ্বীপ মৎস্য বন্দরের দিক থেকে লট ৮ ঘাটে হাজির হল অসংখ্য ছোট ছোট ডিঙি নৌকো। ঝুড়ি কোদাল হাতে শ্রমিকেরা মাটি তুলতে লাগলেন।
এলসিটি জেটি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে এই দৃশ্য প্রতিদিনই চোখে পড়ে। বেআইনি মাটি, বালি কাটার কাজ চলে ভোর থেকে। লক্ষাধিক টাকার সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে মুড়িগঙ্গার চর থেকে মাটি তোলার বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসন কেউই পদক্ষেপ করছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
কিন্তু এতে নদীর গতিপথ এবং জীব বৈচিত্র্যে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা পরিবেশবিদরা। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরাও।
বিজ্ঞানসম্মত ভাবে মাটি না তোলা হলে নদীর গতিপথে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সুভাষ দত্তের মতো পরিবেশবিদেরা। সুভাষবাবুর বলেন, ‘‘পরিবেশ আদালত বলার পরে রাজ্য সরকার নির্দেশ জারি করেছে বটে। কিন্তু কাকদ্বীপ, ক্যানিং বিভিন্ন জায়গায় এ ভাবে মাটি তোলা হচ্ছে।’’ নদী থেকে ইচ্ছে মতো বালি বা মাটি তোলা যায় না। নাব্যতা মেপে, ইঞ্জিনিয়ারদের নজরদারিতে বালি তোলার কাজ হয়। ও ভাবে বালিমাটি তুললে নদীর গতি এবং জীববৈচিত্র্যে প্রভাব পড়তেই পারে বলে তিনি জানান।
পরিবেশ আদালত থেকে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হাওড়া-হুগলিতে নদীর চর থেকে বালি, মাটি তোলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০১৫ সালে একটি জনস্বার্থ মামলার পরে রাজ্য সরকার সে ব্যাপারে সম্প্রতি নির্দেশও জারি করে তা বন্ধ করার কথা বলেছে। কিন্তু কাকদ্বীপের পরিস্থিতি বদলায়নি।
মুড়িগঙ্গার ধার থেকে ভাটার সময়ে অসংখ্য ডিঙি নৌকোর খোল ভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বালিমাটি। সেই চোরাই মাটি কাকদ্বীপ এবং নামখানা থেকে বিক্রিও হচ্ছে। ঘরবাড়ি তৈরিতে না লাগলেও পুকুর, ডোবা ভরাট করার ক্ষেত্রে দেদার ব্যবহার হয় কম দামের এই মাটি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) নিখিলেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘জেলার সব জায়গাতেই বালি, মাটি তোলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোথাও তেমনটা হলে পুলিশ-প্রশাসনকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’’ মুড়িগঙ্গার মধ্যে হলেও যে কোনও নদী থেকে বালিমাটি তোলার অনুমোদন-সংক্রান্ত বিষয়টি গত বছর থেকে এসেছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের হাতে।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতর এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি বলেই অভিযোগ। এলসিটি ঘাটের ওই জায়গায় বেশি পলি জমা হয়। তা জমতে জমতে নাব্যতা কমে গিয়েছে। মাটি তুললে নাব্যতা ঠিক থাকতে পারে ভেবে আপত্তি করা হয়নি বলে প্রশাসনের এক কর্তা জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু প্রান্তিক মৎস্যজীবী নৌকো নিয়ে ভাটার সময়ে এসে মাটি তুলে সেগুলি বিক্রি করে সংসার চালান। নৌকোর মাঝি ওসমান ঘরামি বলেন, ‘‘গরিব মানুষ আমরা। নৌকোয় বালি নিয়ে বিক্রি করে দু’পয়সা আয় করি। দীর্ঘদিন থেকেই করছি। নিয়ম নেই, তা তো জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy