Advertisement
E-Paper

দিনভর বোমাবাজি, ত্রস্ত ভাটপাড়া

বিজেপি এবং তৃণমূল— দু’পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে নাজেহাল হতে হল পুলিশকে।

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০০:৩০
ধরপাকড়: পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ধরপাকড়: পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

সব সকাল সারা দিনের পূর্বাভাস দেয় না। যেমন দিল না রবিবারের ভাটপাড়া।

বিধানসভা উপ-নির্বাচনের দুপুর ফুরোতে না ফুরোতে উধাও সকালের শান্তি। দিনের শেষ বলছে, বোমা-গুলি-লাঠিচার্জ-অগ্নিসংযোগ কিছুই বাদ গেল না ভোটের বিকেলে।

বিজেপি এবং তৃণমূল— দু’পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে নাজেহাল হতে হল পুলিশকে। গোলমাল অবশ্য রাত পর্যন্ত থামেনি। তৃণমূল-বিজেপি ছাপিয়ে ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচন হয়ে রইল অর্জুন সিংহ বনাম মদন মিত্রের লড়াই। সন্ধ্যায় অর্জুনের আস্তানা মজদুর ভবনের সামনে বোমাবাজি হয় বলে অভিযোগ। অর্জুনের এক দেহরক্ষী জখম হন। তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।

সকাল থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত খুচরো কিছু গোলমাল ছাড়া আর কোনও অশান্তির খবর ছিল না এ দিন। ভাটপাড়া অবশ্য এমন ভোট দেখতেই অভ্যস্ত। কখনও মদন অভিযোগ করলেন, তাঁদের ভোটারকে বুথে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। কখনও একই অভিযোগ করলেন অর্জুনও। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে অর্জুন বললেনও, ‘‘হয় আপনারা সামলে নিন, তা না হলে আমাকে সামলাতে হবে।’’

অর্জুনের অভিযোগ ছিল ১২টি বুথে বিজেপির ভোটারদের বসতে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল। আর মদন অভিযোগ করলেন, তাঁর এজেন্টদের তাড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। দু’-এক বার মেজাজ হারালেও মোটের উপর ফুরফুরে মুডে ছিলেন দু’জনেই। যদিও বহিরাগতদের এনে ভোট করানোর অভিযোগ করেছেন দুই নেতাই। দুপুর দু’টো পর্যন্ত সবকিছু মোটামুটি ঠিকঠাকই ছিল। গোল পাকল কাঁকিনাড়ার কাঁটাপুকুরে বোমাবাজির খবর আসার পরে। মুহূর্তে বদলে গেল অর্জুনের মুখের ভুগোল। একের পর এক ফোনে নির্দেশ দিতে শুরু করলেন— ‘‘ঘর ঘর সে লোগ নিকালো। হামলোগ চুপ নেহি বৈঠেঙ্গে। সির্ফ ধুঁয়া করনেকে লিয়ে নেহি, ঠিক সে মারো।’’ কী মারতে বললেন তিনি, তখন সেখানে উপস্থিত কারও আর তা বুঝতে বাকি রইল না।

তখন কাঁটাপুকুর হয়ে উঠেছে রণক্ষেত্র। মদন মিত্র এলাকা থেকে বেরোতেই শুরু হয় বোমাবাজি। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে মুড়ি-মুড়কির মত বোমা পড়তে শুরু করে। বড় রাস্তার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সব গলি রাস্তাই বোমার ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। তখন এলাকায় না ছিল পুলিশ, না কেন্দ্রীয় বাহিনী। বোমাবাজির মধ্যে পড়ে যান সংবাদমাধ্যমের কয়েকজন কর্মী। একটি মসজিদে আশ্রয় নেন তাঁরা। বোমাবাজি কিছুটা থামতে তাঁরা সেখান থেকে বেরিয়ে জগদ্দল থানায় আশ্রয় নেন। সাধারণ ভোটারেরা প্রাণ ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। তখন রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এক দল দুষ্কৃতী।

সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ নদিয়া চটকলের সামনে, যেখানে অর্জুন ছিলেন, সেখানে হাজির হয় পুলিশের একটি দল। পুলিশ আধিকারিকেরা তাঁকে বলেন, ‘‘আপনি যেখানে আছেন, সেখানেই ঠিক আছেন। অযথা বাইরে ঘোরাঘুরির চেষ্টা করবেন না।’’ অর্জুনও পাল্টা পুলিশকে শুনিয়ে দেন, ‘‘আমি মোট একশোবার অভিযোগ করব, তাতে কাজ না হলে আমি একশো এক বার বেরবো।’’

বোমাবাজির খবর শুনে অর্জুন কাঁকিনাড়ায় যখন পৌঁছলেন, তখন এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত। রাস্তার উপরে দু’টো পুলিশের গাড়ি উল্টে পড়ে। তার কোনও কাচই আর আস্ত নেই। রাস্তায় পড়ে অজস্র ইট আর পাথরের টুকরো। গাড়ি থেকে নামা মাত্রই বিক্ষোভের মুখে পড়েন অর্জুন। জনতার একটাই প্রশ্ন, ‘‘কেন এত অশান্তি, বোমাবাজি? জবাব চাই।’’ কোনওমতে তাঁদের শান্ত করে পাশের খোলা মাঠে গিয়ে দাঁড়ান অর্জুন। তাঁকে ঘিরে দাঁড়ান কেন্দ্রীয় বাহিনীর আট জওয়ান।

পর মুহূর্তেই শুরু হয়ে যায় বোমাবাজি। একের পর এক বোমা পড়তে শুরু করে কিছুটা দূরে। তার একটি পড়ল তৃণমূলের ক্যাম্প অফিসে। সেটি পুড়ে যায়। আগুন লাগে তার পাশের একটি ঘরে। এক দল উত্তেজিত বাসিন্দা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান শুরু করেন। এরই মধ্যে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীলকুমার চৌধুরীর নেতৃত্বে এক বিশাল পুলিশ বাহিনী সেখানে পৌঁছয়।

পুলিশ নির্বিচারে লাঠি চালাতে শুরু করে। অর্জুন পুলিশকে লক্ষ্য করে চিৎকার করেন, ‘‘যারা হামলার শিকার হল, তাঁদের কেন লাঠি মারছেন?’’ এর পরেই অর্জুনের দিকে তেড়ে আসে কয়েকজন পুলিশ কর্মী। তাঁকে বলেন, ‘‘আপনি এখানে কী করছেন। অ্যাই তোল এটাকে। নিয়ে চল এখান থেকে।’’

এর পরেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। পুলিশ অর্জুনকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কোনওক্রমে তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যান অর্জুনের নিরাপত্তারক্ষীরা। তখন অর্জুনের চেহারা আতঙ্কিত-সন্ত্রস্ত। পুলিশ এর পরে এলাকায় ঘুরে ঘুরে একের পর এক গ্রেফতার করতে শুরু করে। এরই মধ্যে অন্য রাস্তা দিয়ে পাঁয়ে হেঁটে ঘুরপথে গাড়িতে উঠে বাড়িতে ফেরেন অর্জুন।

তবে, এ সবের মধ্যে দিনভর সবথেকে ভোগান্তি পোহাতে হল ভাটপাড়ার ভোটারদের। যারা ভোট দিতে বেরিয়েছিলেন, তাঁরা ফিরলেন একরাশ আতঙ্ক নিয়ে। আর এক দল আতঙ্কে পড়ে ভোটই দিতে পারলেন না। দিনের শেষে ভোট পড়ল ৬৮ শতাংশ।

সকাল কিন্তু আভাস দিয়েছিল ভোট পড়বে ভালই।

Assembly By Polls Bhatpara TMC BJP Central Force Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy