Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জীর্ণ বাড়ি ধরে রেখেছে গাঁয়ের জামাইয়ের স্মৃতি

বসিরহাট: মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। বেড়ার ও পারে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা। এ পারে বসিরহাটের পানিতর গ্রাম। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতী নদী।

অনাদর: পানিতরে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্বশুরবাড়ি। নিজস্ব চিত্র

অনাদর: পানিতরে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্বশুরবাড়ি। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৪৬
Share: Save:

বসিরহাট: মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। বেড়ার ও পারে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা। এ পারে বসিরহাটের পানিতর গ্রাম। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতী নদী। সুন্দর গ্রামটি অবশ্য আর পাঁচটা সীমান্ত গ্রামের মতো নয়। বসিরহাটের এই গ্রামেই ছিল প্রকৃতিপ্রেমিক লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্বশুরবাড়ি। সেই সুবাদে বেশ কয়েক বার পানিতর গ্রামে এসেছিলেন বিভূতিবাবু। এই গ্রামের মেয়ে গৌরীদেবীকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, ওই গ্রামেই ছিল বিভূতিভূষণের পূর্বপুরুষদের বাস। গ্রামের জামাইকে নিয়ে নানা মধুর স্মৃতি ছড়িয়ে রয়েছে পানিতরের এখানে-ওখানে। কিন্তু বহু স্মৃতি বিজরিত সেই বাড়ি এখন ভগ্নপ্রায়। অবস্থা এমনই যে সংস্কার না হলে যে কোনও দিন সেটি ভেঙে পড়তে পারে।

গ্রামের প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৯১৭ সালে পানিতর গ্রামে কালীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের মেজ মেয়ে গৌরীদেবীকে বিয়ে করেছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সেই বিয়ে বেশি দিন টেঁকেনি। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই গৌরীদেবীর মৃত্যু হয়। তবে কিন্তু পানিতরের স্মৃতি কোনও দিন পিছু ছাড়েনি বিভূতিবাবুর৷ তাঁর বিভিন্ন লেখায় উঠে এসেছে এই গ্রামের ছবি। কিন্তু বিভূতিবাবুর সেই শ্বশুরবাড়ি এখন যেন পোড়ো বাড়ি। কারও পা পড়ে না। দরজা-জানলা উধাও।

গ্রামবাসীরা জানালেন, শুধু শ্বশুরবাড়ি নয়, ওই এলাকায় বিভূতিবাবুর স্মৃতি বিজরিত অন্য জায়গাতেও অবহেলা স্পষ্ট। বসিরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে তৈরি হওয়া বিভূতি সংস্কৃতি চর্চা এখন দুষ্কৃতীদের আড্ডার জায়গা। বিভূতিভূষণের জন্মশতবর্ষে স্থাপিত তাঁর আবক্ষ মূর্তির মাথার ছাউনি এবং রেলিং উধাও হয়ে গিয়েছে।

তবে এলাকার কয়েকজন আজও বিভূতি চর্চাকে টিঁকিয়ে রেখেছেন। তাঁদের অন্যতম আনন্দ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দূর থেকে অনেকেই ওই বাড়ি দেখতে আসেন। কিন্তু পোড়ো বাড়ি দেখে হতাশ হন।’’ বসিরহাটের বাসিন্দা বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়ের আত্মীয় হতেন বিভূতিবাবু। সেই বঙ্কিমবাবু বলেন, ‘‘পিসেমশায়ের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আমরা চাই রাজ্য সরকার বাড়িটি হেরিটেজ ভবনের মর্যাদা দিক।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই বাড়িটি সংস্কার করে সেখানে সংগ্রহশালা এবং সাহিত্যচর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে আর্জি জানানো হয়েছে।

বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘‘পানিতর গ্রাম নিয়ে আমাদের বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। ওই গ্রামে লেখকের মূর্তি সংস্কার এবং বাড়ি সংস্কারের জন্য তাঁর পরিবারের বর্তমান সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bibhutibhushan Bandopadhyay Heritage building
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE