Advertisement
E-Paper

waste: প্লাস্টিক বর্জ্য জমা দিয়ে মিলছে পাঠশালার পাঠ

গ্রামের দরিদ্র পরিবারের বাচ্চাদের পড়াশোনা করানোর পাশাপাশি প্লাস্টিক মুক্ত গ্রাম গড়তে চান পাঠশালার প্রধান উদ্যোক্তা নীলোৎপল বর্মণ ওরফে বাচ্চাদের প্ৰিয় নীল কাকু।

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২১ ০৮:২৩
সচেতন: পাঠশালার বাইরে প্লাস্টিক জমা করছে এক পড়ুয়া।

সচেতন: পাঠশালার বাইরে প্লাস্টিক জমা করছে এক পড়ুয়া। নিজস্ব চিত্র।

অস্থায়ী ছাউনি দেওয়া ছোট্ট পাঠশালা ‘আনন্দ নিকেতন’। পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৫০। প্রাক প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা চলে এখানে। সঙ্গে মেলে টিফিন। রয়েছে নাচ আর গান শেখারও ব্যবস্থাও। তবে এর বিনিময়ে টাকাপয়সা নয়, জমা দিতে হয় প্লাস্টিক। সন্দেশখালি থানার শীতলিয়া গ্রামের বর্মণপাড়ার এই পাঠশালার এমনই নিয়ম। গ্রামের দরিদ্র পরিবারের বাচ্চাদের পড়াশোনা করানোর পাশাপাশি প্লাস্টিক মুক্ত গ্রাম গড়তে চান পাঠশালার প্রধান উদ্যোক্তা নীলোৎপল বর্মণ ওরফে বাচ্চাদের প্ৰিয় নীল কাকু।

শীতলিয়া গ্রামের বাসিন্দা নীলোৎপল। বছর ২৫ এর নীলোৎপল এমএ এবং বিএড সম্পূর্ণ করে এখন সোশ্যাল ওয়ার্ক নিয়ে পড়াশোনা করছেন। সেই সঙ্গে বোন মীরা ও স্থানীয় কয়েকজন বন্ধু মিলে সুন্দরবন এলাকায় বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করছেন। নীলোৎপল জানান, করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় পড়ুয়ারা পড়াশোনা প্রায় ভুলতে বসেছে। নামটুকুও লিখতে ভুলে গিয়েছে প্রাথমিক স্কুলের অনেক পড়ুয়া। তাই আমপানের পর শীতলিয়া গ্রামের বর্মণপাড়ায় একটি অস্থায়ী ছাউনি দিয়ে আনন্দ নিকেতন নাম দিয়ে পাঠশালা চালু করেন তিনি। প্রত্যেকদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চলে পাঠশালা। শিক্ষক রয়েছেন ৫ জন। সেই সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে দু’দিন নাচের শিক্ষিকা আসেন। মাসে দু’দিন আসেন একজন গানের শিক্ষক। প্রত্যেকদিন সকালে মাথা পিছু ১২ টাকার টিফিন দেওয়া হয় বাচ্চাদের। শুধু পড়াশোনা নয়, ছোটদের সামাজিক দায়িত্ব পালনেও উৎসাহিত করা হয়। পাঠশালাতে ‘ভালবাসার দয়া’ নামে একটি ভান্ডার রাখা আছে। সেখানে বাচ্চারা তাদের সুযোগ ও সাধ্যমতো দু’এক টাকা ফেলে। দুঃস্থ, অসহায় মানুষদের বিভিন্ন প্রয়োজনে সেই টাকা তুল দেওয়া হয়। পাশাপাশি, বাচ্চাদের এবং তাঁদের পরিবারকে বলা হয়েছে, তারা যেন প্রত্যেক মাসে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে পাঠশালায় জমা দেয়। ইতিমধ্যে এই পাঠশালায় প্রায় ৮০ হাজার প্লাস্টিকের বোতল জমা হয়েছে। নীলোৎপল বলেন, ‘‘বর্তমানে শীতলিয়া গ্রামে যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য মেলে না বললেই চলে। এটা খুবই ইতিবাচক দিক।’’ তিনি জানান, ইটের পরিবর্তে জমা হওয়া প্লাস্টিক ব্যবহার করে একটি গ্রন্থাগার ও একটি ঘর করার পরিকল্পনা রয়েছে।

নীলোৎপল আরও জানান, সামাজিক মাধ্যমে তাঁর এই উদ্যোগ দেখে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক মানুষ পাঠশালার বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন ভাবে সাহায্যে করছেন। কলকাতা থেকেও অনেকে এই পাঠশালার বাচ্চাদের সঙ্গে তাঁদের জন্মদিন বা বিশেষ দিন পালন করতে আসছেন। নীলোৎপল চান, এলাকার পড়ুয়াদের কম্পিউটার শিক্ষা ও ইংরেজিতে কথা বলা শেখানোর ব্যবস্থা করতে। পাশাপাশি তিনি চেষ্টা করছেন, এই পাঠশালা যাতে সরকারি অনুমোদন পায়।

এই পাঠশালায় পড়ুয়া প্রিয়া কয়ালের মা মিতা কয়াল বলেন, ‘‘ দিনমজুরের কাজ করে সংসার চলে আমাদের। তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ের জন্য গৃহশিক্ষক রাখা সম্ভব নয়। স্কুলও বন্ধ। এই পাঠশালায় মেয়েকে পাঠাচ্ছি। এতে মেয়ে পড়াশোনা মধ্যে থাকছে, নাচ, গান শিখতে পারছে। সব মিলিয়ে খুব উপকার হচ্ছে।’’

Plastic pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy