Advertisement
E-Paper

কেউ নিথর, কেউ জখম, ফিরলেন পুণ্যার্থীরা

ছুটির দিনে প্রতিবেশীরা দল বেঁধে গিয়েছিলেন দক্ষিণেশ্বর-বেলুড় মঠ দর্শনে। সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসারও কথা ছিল দলবদ্ধ ভাবেই। কিন্তু তা আর হল না। তার বদলে সোমবার সকালে হাসপাতাল থেকে কেউ ফিরলেন অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে। কেউ বা এখনও হাসপাতালে ভর্তি। আবার সন্ধ্যায় শববাহী গাড়িতে দত্তপুকুরের নিবাদুইয়ের কায়পুত্র পাড়ায় ফিরে এলেন তিন জন। তাঁরা হলেন সীমা কায়পুত্র (২৫), বিকাশ কায়পুত্র (৩৫) আর পাঁচু কায়পুত্র (৪৫)।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৬

ছুটির দিনে প্রতিবেশীরা দল বেঁধে গিয়েছিলেন দক্ষিণেশ্বর-বেলুড় মঠ দর্শনে। সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসারও কথা ছিল দলবদ্ধ ভাবেই। কিন্তু তা আর হল না। তার বদলে সোমবার সকালে হাসপাতাল থেকে কেউ ফিরলেন অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে। কেউ বা এখনও হাসপাতালে ভর্তি। আবার সন্ধ্যায় শববাহী গাড়িতে দত্তপুকুরের নিবাদুইয়ের কায়পুত্র পাড়ায় ফিরে এলেন তিন জন। তাঁরা হলেন সীমা কায়পুত্র (২৫), বিকাশ কায়পুত্র (৩৫) আর পাঁচু কায়পুত্র (৪৫)।

রবিবার বেলুড় থেকে দক্ষিণেশ্বর যাওয়ার পথে একটি নৌকায় বাজ পড়ে। তাতেই ছিলেন ওই পুণ্যার্থীরা। তাঁদের তিন জন মারা যান। আহত হন ১৩ জন। পুলিশি সূত্রের খবর, সোমবার বিকেলে পুলিশি পাহারায় হাওড়া মর্গ থেকে শববাহী গাড়িতে তিন জনের দেহ পাঠানো হয় দত্তপুকুরে। কায়পুত্র পাড়ার মাঠেই জড়ো হয়েছিলেন শোকসন্তপ্ত স্বজন ও পড়শিরা। শববাহী গাড়ি পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। সকালে বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরার সময়েও বিকাশের স্ত্রী মিঠু কায়পুত্র জানতেন না যে, তাঁর স্বামী আর নেই। এ দিন সন্ধ্যায় স্বামীর মৃতদেহের সামনে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘সকালে সকলকে জিজ্ঞাসা করলাম। সকলেই বলল ভাল আছে।’’ বজ্রাঘাতে মিঠুদেবীরও পেট-পিঠ পুড়ে গিয়েছে। পা পুড়েছে তাঁর ছেলে রাজের।

মারা গিয়েছেন বিকাশের পড়শি পাঁচু কায়পুত্রও। তিনি দত্তপুকুরে ভ্যানরিকশা চালাতেন। তাঁর সঙ্গেই ভ্যানরিকশা চালাতেন রণদেব কায়পুত্র। রণদেবের স্ত্রী সীমা ছিলেন পুণ্যার্থীর দলে। প্রাণ হারিয়েছেন তিনিও। এ দিন বিকেলে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে তাঁর শাশুড়ি বিশাখাদেবী বলেন, ‘‘বাজ পড়ার পরে অন্যদের মতো সীমাও অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ও যে আর বেঁচে নেই, ভাবতেই পারিনি।’’ পাঁচুবাবুর বৌমা বিপাশা এবং তাঁর ছ’বছরের মেয়ে মেঘাকে রাতেই শ্রমজীবী হাসপাতাল থেকে আর জি করে পাঠানো হয়। তাঁদের পরিবার জানায়, মেঘা একটি চোখ খুলতেই পারছে না। চিকিৎসকদের বক্তব্য, বজ্রপাতের অভিঘাতে অনেক ক্ষেত্রেই স্নায়ু বিপর্যস্ত হয়ে যায়। চিকিৎসাবিদ্যার পরিভাষায় এটাকে বলে ‘সেরিব্রাল ইডিমা’। তাতে সমস্যা হতে পারে চোখেরও। মেঘার ক্ষেত্রে তেমনটাই ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ঘটনার পরেই মিঠু ও লক্ষ্মী তরফদার নামে দু’জনকে শ্রমজীবী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। পাঁচ জনকে রাখা হয় পর্যবেক্ষণে। সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় রাতেই হাসপাতালে যান আহতদের দেখতে। সোমবার ওই হাসপাতাল থেকে সকলকেই দত্তপুকুরে ফেরত পাঠানো হয়। বাড়ি ফেরার জন্য বালি পুরসভা ও শ্রমজীবী হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হাসপাতালের তরফে ফণিগোপাল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার খরচ দিতে চেয়েছিল। আমরা কারও কাছ থেকে খরচ নিইনি। কারণ, এটা আমাদের কর্তব্য।’’

এ দিন সকাল থেকেই হাওড়া মর্গের সামনে ভিড় করেন মৃতদের আত্মীয়-পড়শিরা। ছিলেন আমডাঙার বিধায়ক রফিকুল রহমানও। রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা এ দিনও মর্গে গিয়ে তত্ত্বাবধান করেন। রাজীববাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সব কিছুর দায়িত্ব নিয়েছেন। চিকিৎসা থেকে ওঁদের বাড়ি ফেরা— কোনও কিছুতেই যাতে অসুবিধা না-হয়, সে-দিকে নজর রাখা হয়েছে।’’

এ দিন বেলুড় ও দক্ষিণেশ্বরের মধ্যে নৌকা চলাচল বন্ধ ছিল। যে-নৌকায় বাজ পড়েছিল, তার আহত খালাসি জয়ন্ত নস্করকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তিনি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বলে ওই হাসপাতাল সূত্রের খবর।

injured devotees duttapukur 3 dead bodies thunderstorm dakshineswar accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy