Advertisement
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আগের রাতেই স্মরণ ভাষাশহিদদের

শ’য়ে শ’য়ে মোমবাতি হাতে মানুষ হেঁটে চলেছেন সড়ক ধরে। উদাত্ত কন্ঠে তাঁরা গাইছেন, ‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’’ তাঁদের হাতে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের শহিদ রফিক সালাম, বরকত শফিউর জব্বারদের ছবি। 

স্মরণে: বনগাঁয়। নিজস্ব চিত্র

স্মরণে: বনগাঁয়। নিজস্ব চিত্র

সীমান্ত মৈত্র
শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১৭
Share: Save:

শ’য়ে শ’য়ে মোমবাতি হাতে মানুষ হেঁটে চলেছেন সড়ক ধরে। উদাত্ত কন্ঠে তাঁরা গাইছেন, ‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’’ তাঁদের হাতে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের শহিদ রফিক সালাম, বরকত শফিউর জব্বারদের ছবি।

একুশের আগের সন্ধ্যায় ভাষা শহিদদের স্মরণে এ ভাবেই পথে নেমেছিল বনগাঁ শহরের সাহিত্যিক নাট্যকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষক অধ্যাপক, স্কুল পড়ুয়া, খেলোয়াড়, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা, সঙ্গে অসংখ্য পথচলতি মানুষ। পদযাত্রায় হাঁটতে হাঁটতে কবি শ্যাম রায়, স্বপন চক্রবর্তী, সাহিত্যিক ভবানী ঘটক বলেন, ‘‘বছরের একটি দিন ভাষা শহিদদের স্মরণ করতে, শ্রদ্ধা জানতে হাঁটতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। ওঁরা আমাদের বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। আর আমরা ওঁদের স্মরণে একটু হাঁটছি।’’

এ দিন সন্ধ্যায় স্থানীয় নীলদর্পণ অডিটোরিয়ামের সামনে থেকে ভাষা শহিদদের স্মরণে পদযাত্রা বের হয়। শহর পরিক্রমা করে মিছিল শেষ হয়, স্থানীয় বিএসএফ ক্যাম্প মোড়ে। সেখানে রয়েছে ভাষা শহিদদের স্মরণে স্থায়ী বেদি। মানুষ রাত জেগে সেখানে ফুল দিয়েছেন। মোমবাতিও জ্বালিয়েছেন। ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান-কবিতা আলোচনায় ভাষা শহিদদের স্মরণ করা হয়।

রাত ১২টার সময় শহিদ বেদিতে মালা দেন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য। তিনি বলেন, ‘‘ঢাকার আদলে আমরাও কয়েক বছর ধরে একুশের আগের রাত থেকে ভাষা শহিদদের স্মরণে অনুষ্ঠান করছি।’’ একুশের আগের সন্ধ্যা থেকেই বনগাঁ শহরে ভাষা শহিদ স্মরণে আরও কয়েকটি অনুষ্ঠান হয়েছে। এপিডিআর বনগাঁ শাখার তরফে স্থানীয় উজ্জ্বল সঙ্ঘে গান আলোচনা কবিতায় সালাম বরকতদের শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। শহরের প্রবীণ মানুষদের সংগঠন সম্মিলনীর পক্ষ থেকে ভাষা আন্দোলনের উপর একটি পত্রিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রবীণরা তাতে স্মৃতিচারণ করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তে দু’দেশের মানুষ একত্রে স্মরণ করবেন আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস। দু’দেশের মানুষ আবেগ ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। দু’দেশের মানুষ একত্রে রক্তদান শিবিরেও আয়োজন করেছেন।

উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এ দেশের মানুষের রক্ত দেওয়া হবে বাংলাদেশের ব্লাডব্যাঙ্কে। ওদের রক্ত নেবে এ দেশের ব্লাডব্যাঙ্ক। সঙ্গীত পরিবেশন করতে আসার দুই বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী মইনুর হাসান নোবেল। নো ম্যানস ল্যান্ডে করা হয়েছে যৌথ মঞ্চ। সেখানে দু’দেশের শিল্পীরা অনুষ্ঠান করবেন।

হাবড়াতেও এ দিন সন্ধ্যায় পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। স্টেশন চত্বরে ভাষা শহিদদের স্মরণে অস্থায়ী বেদি তৈরি করা হয়েছিল। অনেক রাত পর্যন্ত সাধারণ মানুষ সেখানে ফুল দিয়ে তাঁদের শ্রদ্ধা জানান।

প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস জানান, হাবড়াতে বহু উদ্বাস্তু মানুষের বসবাস। অধুনা বাংলাদেশ থেকে তাঁরা সর্বস্ব হারিয়ে এ দিন এখানে ছুটে এসেছিলেন। ওই মানুষের আবেগের সঙ্গে মিশে আছে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। সেই মানুষকে পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে দিতে ও বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় যাঁরা আত্মবলিদান দিলেন তাদের স্মরণ করতেই এই আয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

Language Mother Language ভাষা দিবস
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy