Advertisement
০৩ মে ২০২৪
joynagar

‘আগুনে বই পুড়েছে, তবু টেস্ট পরীক্ষায় বসবই’! ছন্নছাড়া দলুয়াখাকি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে আলিমার মতোই

বাড়িতে কোনও পুরুষ না থাকায় এখনও মাথার উপর ছাদ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। কেউ আছেন ত্রিপল খাটিয়ে। কেউ কেউ প্রতিবেশীর বাড়িতেই খাওয়াদাওয়া সেরে রাত কাটাচ্ছেন সেখানেই। ছন্দে ফিরতে মরিয়া সবাই।

Joynagar girl whose house was set on fire preparing for Madhyamik Test Examination

দলুয়াখাকির মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আলিমার প্রয়োজনীয় বইয়ের তালিকা করছেন পুলিশ আধিকারিক। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
জয়নগর শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ১২:১৯
Share: Save:

ছ’দিন কেটে গিয়েছে। এখনও পুরুষশূন্য জয়নগরের দলুয়াখাকি গ্রাম। তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করের খুন এবং তার পর একের পর এক বাড়িতে আগুন জ্বালানোর ঘটনায় ঘরছাড়া ওই গ্রামের অনেকেই। প্রশাসনের সহযোগিতায় মহিলা, বৃদ্ধ এবং শিশুরা ঘরে ফিরছে। চলছে ছন্দে ফেরার মরিয়া চেষ্টা। ঠিক যেমন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বছর ষোলোর আলিমা। সোমবারের তাণ্ডবে বাড়ির সঙ্গে সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আলিমার বইপত্র পুড়ে খাক হয়েছে। তার কাছে শুধু রয়েছে অ্যাডমিট কার্ড। কিন্তু ছাত্রী ঠিক করেছে, টেস্ট পরীক্ষা সে দেবেই। একটা বছর সে কিছুতেই নষ্ট হতে দেবে না। পুলিশ আলিমাদের খোঁজ নিতে বাড়ি যেতেই মেয়েটি তার বইয়ের বন্দোবস্ত করে দিতে বলেছে। পুলিশও তাকে আশ্বস্ত করেছে, বইপত্র তাড়াতাড়ি জোগাড় হবে।

দলুয়াখাকির সব বাসিন্দাই আলিমার মতো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। বাড়িতে কোনও পুরুষ না থাকায় এখনও মাথার উপর ছাদ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। কেউ কেউ আছেন ত্রিপল খাটিয়ে। কেউ কেউ প্রতিবেশীর বাড়িতেই খাওয়াদাওয়া সেরে রাত কাটাচ্ছেন সেখানেই। শুক্রবার সরকারের দেওয়া ত্রাণ পৌঁছলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট কম বলে জানাচ্ছেন গৃহহীন বাসিন্দারা। বাড়িতে চাল নেই, ডাল নেই। খাবার বলতে আসলে কিছুই নেই। রান্না করার সরঞ্জামেরও অভাব। মাথার উপর ভাঙা-পোড়া ছাদটুকু ঠিক করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পায়ে পায়ে ছাদে উঠছেন বৃদ্ধ রবিউল লস্কর। বয়স্ক রহিম, আনিশ চাচারা মাথার ছাদ তৈরি করতে উঠে পড়ে লেগেছেন।

তার মধ্যে খোঁজ নিতে শুক্রবার গ্রামে এসেছিল পুলিশ। সবাই যখন অভিযোগ এবং অসুবিধার কথা শোনাচ্ছেন, তখন এক পাশে দাঁড়িয়েছিল আলিমা। তাঁকে দেখে এক আত্মীয় পুলিশকে জানালেন, মেয়েটি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। আগুনে ওর বইখাতা পুড়ে গিয়েছে। কিন্তু মেয়েটি পরীক্ষা দিতে চায়। এক পুলিশ আধিকারিক আলিমাকে বলেন, ‘‘কী কী বই পুড়েছে, নামগুলো বলো।’’ আলিমা চুপ। মাথা হেঁট করে দাঁড়িয়ে থাকে। ওই পুলিশ আধিকারিক জিজ্ঞেস করেন, ‘‘একটি বইও নেই?’’ এ বার মাথা নাড়ে আলিমা। সে জানায় তার টেস্ট পেপারটাও পুড়ে গিয়েছে। তবে চালতাবেড়িয়া হাই স্কুলের ছাত্রীটি পরীক্ষায় বসার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। পুলিশও জানায়, তার পাশে থাকছে সবাই। বই জোগাড় করা হচ্ছে।

আলিমার ভাবি (বৌদি) রোজিনা নস্কর বলেন, ‘‘বাড়িতে আগুন লাগার পর সব বই পুড়ে গিয়েছে। কাল থেকে ওর টেস্ট পরীক্ষা। ও ওই অবস্থাতেই মাধ্যমিক দেবে বলছে। দেখা যাক, কী হয়।’’ তবে আলিমা পরীক্ষা দেবেই। আলিমার বক্তব্য, ‘‘পরীক্ষা তো দেবই। তবে বইগুলো থাকলে ভাল হত।’’

দলুয়াখাকির বেশির ভাগ মানুষই দর্জির পেশায় যুক্ত। মহিলারাও সেলাই-ফোঁড়াই এবং মাদুর বোনার কাজ করেন। সোমবারের আগুনে সে সবই পুড়ে খাক হয়েছে। নতুন করে যে কাজ শুরু করবেন, সেই উপায়ও নেই মহিলাদের। কারণ, মজুত থাকা কাঁচামালও পুড়ে গিয়েছে। পুড়ে গিয়েছে সেলাই মেশিনও। বাড়ির ছেলেরা না ফিরলে আবার সব কিছু নতুন করে শুরু করা তাঁদের কাছে চাপের। ছন্নছাড়া দলুয়াখাকি এ ভাবেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই চালাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE