Advertisement
০২ মে ২০২৪

টালি ছাউনি রাতারাতি বদলে প্রাসাদ

বসিরহাটের কাঁটারআটির বিশাল বাড়িতে বসে কওসারের মা শহরবানু বিবি বলেন, ‘‘দশ বছর আগেও ছেলের এত প্রতিপত্তি ছিল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৮ ০১:৩৮
Share: Save:

কয়েক বছর আগের কথা। ছোট্ট একচিলতে একখানা বাড়ি। ছোটখাট মুরগির পোলট্রি— এই ছিল কওসার ঢালির জীবন।

সেখান থেকে গত কয়েক বছরে বিশাল অট্টালিকা উঠেছে গ্রামে। সামনে উঁচু পাঁচিল। পেল্লায় গেট। পোলট্রি ব্যবসায়ীর এই উত্থান সকলেরই নজর টেনেছে এলাকায়। কওসারের সাফল্যের রহস্যটা কী, স্পষ্ট হচ্ছে ধীরে ধীরে। জানা যাচ্ছে, ভাগাড়-কাণ্ডে তার যোগসূত্রের কথা। গত কয়েক দিন ধরে পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে তাকে।

বসিরহাটের কাঁটারআটির বিশাল বাড়িতে বসে কওসারের মা শহরবানু বিবি বলেন, ‘‘দশ বছর আগেও ছেলের এত প্রতিপত্তি ছিল না। ছোট একটা বাড়িতে থাকতাম। একটা পোলট্রি ছিল। সেখান থেকে মাংস বেচে যা আয়। হঠাৎ সব ছেড়েছুড়ে কলকাতায় চলে গেল ছেলে। কীসের ব্যবসা করত, সে ভাবে কখনও কিছু বলেনি। তবে দেখলাম, হাতে টাকা আসতে শুরু করেছে।’’ ছেলের উত্থানের কাহিনি বলে চলেন মা। জানান, কয়েক বছরের মধ্যে চার চাকা গাড়ি আসে বাড়িতে। তত দিনে ছোট বাড়ি ভেঙে বাগানবাড়ি তৈরি হয়েছে। তবে ছেলে-বৌমা এবং তাদের একমাত্র সন্তান গ্রামের বাড়িতে থাকে না বলেই জানালেন শহরবানু।

এলাকার লোকজনও জানালেন, সচরাচর বড় একটা এলাকায় পা রাখত না কাওসার। তবে যখন আসত, পাড়া-পড়শির সঙ্গে মিষ্টি ব্যবহার ছিল। কিসের ব্যবসা তার, এ নিয়ে কখনও স্পষ্ট উত্তর দিত না। বলত, ‘‘ওই শহরে গিয়ে নানা কিছু করি। কোনও রকমে চলছে আর কী।’’

সেই ‘কোনও রকমে চলা’র নমুনা দেখে অবশ্য হাঁ হয়ে যেতেন পাড়ার লোকজন। এখন তাঁদের অনেককে বলতে শোনা গেল, ‘‘সোজা পথে রাতারাতি এত টাকা হয় না, সেটা বোঝাই যেত। কিন্তু ওর ব্যবহার এত ভাল ছিল, কেউ এ সব নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাত না।’’

কিছু দিন আগে বাদুড়িয়ায় ফর্মালিনে চোবানো মরা মুরগি নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে, তখনও কাওসারের নাম সামনে আসেনি। তবে পুলিশের এক আধিকারিক এখন বলছেন, ‘‘ভাগাড়ে মরা পশুর মাং‌স নিয়ে তদন্তে নেমে কাওসারের নাম সামনে আসছে। রোগে ভোগা মরা মুরগির মাংস বিক্রি চক্রেও তারলোকের হাত থাকতে পারে। সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

স্থানীয় মানুষজন এখন বলছেন, ‘‘মুরগি কান্ডের সময়ে যদি পুলিশ-প্রশাসন আরও কড়া পদক্ষেপ করত, তা হলে হয় তো কাওসারের নাম আগেই সামনে আসত। কিন্তু মরা মুরগির দেহে ফর্মালিন আছে কিনা, তা নিয়ে বিস্তর টালবাহানা চলেছে। যে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা হয়েছে, তা-ই ঠিক ছিল না। যে কারণে, শেষমেশ মরা মুরগির শরীরে ফর্মালিন মেলেওনি।’’

এ কথা অবশ্য মানছে না পুলিশ কর্তারা। তাঁদের দাবি, সে সময়ে যে তদন্ত হয়েছিল, তা ঠিক পথেই এগিয়েছিল। ভাগাড়-কাণ্ডের পরে অন্য নানা রকম তথ্য সামনে আসছে বলেই এত দিনে কাওসারের নাম প্রকাশ্যে এল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kaosar Ali Dhali's Meat business
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE