Advertisement
E-Paper

তথ্যে ‘সমৃদ্ধ’ চোরের দাপটে নাজেহাল বাসিন্দা ও পুলিশ

বাড়ির খুঁটিনাটি তথ্যে ‘সমৃদ্ধ’ চোরের দাপটে নাজেহাল এই সব থানা এলাকার বাসিন্দারা।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৩৩
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

বাড়ির শৌচালয়ের পিছনের দরজাটা নড়বড়ে হয়েছিল। ঠিক করার আগে সেই দরজা দিয়েই ঢুকে সব হাতিয়ে নিয়ে গেল চোর। এক রাত্রের জন্য তারাপীঠ গিয়েছিল গোটা পরিবার। ফিরে দেখে, বাড়ি এবং মন্দিরের তালা ভেঙে সব উধাও। কেবলমাত্র যে গয়নাগুলি নকল, সেগুলিই সাজিয়ে রেখে গিয়েছে চোরের দল। এয়ারপোর্ট, বারাসত, দেগঙ্গা।

বাড়ির খুঁটিনাটি তথ্যে ‘সমৃদ্ধ’ চোরের দাপটে নাজেহাল এই সব থানা এলাকার বাসিন্দারা।

বাড়ি ছেড়ে কোথাও বার হলে কিংবা রাতবিরেতে ফাঁকফোকর গলে চুরির ঘটনায় ঘুম উড়েছে ওই সব থানার পুলিশকর্মীদেরও। বেশ কয়েক জন চোরকে ধরেছেও ওই তিন থানার পুলিশ। তাদের জেরা করে মিলেছে বিভিন্ন তথ্য। সম্প্রতি এয়ারপোর্ট, দুর্গানগর এলাকা থেকে চার যুবককে চুরির অভিযোগে ধরেছে বারাসত থানার পুলিশ। ওই যুবকদের চেহারা এবং পোশাক দেখে অবশ্য চোর বলে বোঝার উপায় নেই। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা স্বীকার করেছে যে তারা বিভিন্ন এলাকার ২৫টি বাড়িতে চুরি করেছে। বাড়ির পরিচারিকা সেজে বা জিনিসপত্র বিক্রি করার নামে বাড়ির ভিতরে ঢুকে তথ্য হাতিয়ে নিত তারা।

বারাসতের পুলিশ আধিকারিক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য সম্প্রতি বলেন, ‘‘এদের কাছ থেকে চোরাই মাল উদ্ধার করাও হয়েছে। এদের জেরা করে আর কারা কারা এ সব কাজে জড়িত রয়েছে তার খোঁজ চলছে।’’ কখনও বাড়ির পরিচারিকা, কখনও পুরনো খবরের কাগজের ক্রেতা, কখনও আবার সেলসম্যান সেজে ঘরে ঢুকে তথ্য যোগাড় করছে তারা। তার পরে সুযোগ মতো ঢুকে পড়ে সব হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিচ্ছে। পুলিশ জানাচ্ছে, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে ক্লোরোফর্ম ছড়িয়ে ঘুম পাড়িয়েও কাজ করে যাচ্ছে চোরের দল।

শুধু এক মাসের মধ্যেই ওই এলাকাগুলিতে পাঁচটি ক্ষেত্রে ক্লোরোফর্ম ছিটিয়ে সংজ্ঞাহীন করে সব হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ হয়েছে। ৩ নভেম্বর বিরাটির শরৎ কলোনির বাসিন্দা আদিত্য বিক্রম ভৌমিকের বাড়ি থেকে নগদ টাকা ছাড়াও দু’টি মোবাইল, অন্য জিনিসপত্র চুরি যায়। আদিত্যের কথায়, ‘‘বাড়ির উপরে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে নজরদারি চালানোর পরেই চুরি হয়। কারণ, বাড়ির শৌচালয়ের দরজা যে খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে, তা সহজে কারও জানার কথা নয়।’’ ওই চোরকে অবশ্য ধরে ফেলেছে এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ।

এর পরেই পুরনো কাগজের ক্রেতা কিংবা সেলসম্যানের ছদ্মবেশে নজরদারি কথা জানতে পারে পুলিশ। ৩১ অক্টোবর দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুরের ব্যবসায়ী শিবাজী বসুর বাড়ি এবং মন্দির থেকে সাড়ে তিন ভরি সোনার অলঙ্কার, দেড়শো গ্রাম রূপোর অলঙ্কার-সহ প্রচুর জিনিস চুরি গিয়েছিল। শিবাজী বলেন, ‘‘এক রাতের জন্য তারাপীঠে গিয়েছিলাম। কী করে সে খবর বাইরের কেউ জানতে পারল, বুঝতে পারছি না। সব নিয়ে গেলেও বেচে বেচে নকল গয়নাগুলিই চোরেরা ফেলে গিয়েছে!’’

২০ নভেম্বর বেড়াচাঁপার মনোজিৎ মণ্ডল এবং অম্বিকানগরের আসগর আলি মণ্ডলের বাড়িতে পরপর চুরি হয়। দু’জনেই জানাচ্ছেন, সম্ভবত ক্লোরোফর্ম ছড়ানো হয়েছিল। তাই বেলা হয়ে গেলেও তাদের কারও ঘুম ভাঙছিল না। আসগর বলেন, ‘‘পাড়ার লোক প্রায় ঠেলে ঘুম থেকে তোলেন আমাদের। তাঁদের কাছেই জানতে পারি, সর্বস্ব চুরি হয়ে গিয়েছে।’ দুর্গাপুজোর পরপরই এক আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিলেন বারাসতের নোয়াপাড়ার মানস দাস। ফিরে এসে দেখেন, পুরো বাড়ির জিনিসই প্রায় তুলে নিয়ে গিয়েছে চোরের দল। পুলিশকে মানস জানান, তারা যে বাড়িতে থাকছেন না সে খবরটা কারও কাছেই থাকার কথা নয়। কোনও ভাবে সেই তথ্য হাতিয়েই লোপাট হয়ে গিয়েছে সব কিছু।

Barasat Deganga Theft
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy