Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Child Marriage

নাবালিকার বিয়ে রুখল পাড়ার ক্লাব 

সালেপুরের জোড়াপুকুর এলাকার বছর পনেরোর ওই কিশোরীর বিয়ে ঠিক হয় ক্যানিংয়ের ঝড়খালির এক যুবকের সঙ্গে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সমীরণ দাস
শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২০ ০৩:০১
Share: Save:

বছর পনেরোর মেয়ের বিয়ের আয়োজন করেছিল পরিবার। প্রশাসনের চোখ এড়িয়েই তোড়জোড় সব সারা হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের দিন এসে গিয়েছিলেন পাত্রও। তবে নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হচ্ছে খবর পেয়ে স্থানীয় ক্লাবের ছেলেরা আটকে দিলেন সেই বিয়ে। গত বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে বারুইপুরের সালেপুর এলাকায়।

পুলিশ সূত্রের খবর, সালেপুরের জোড়াপুকুর এলাকার বছর পনেরোর ওই কিশোরীর বিয়ে ঠিক হয় ক্যানিংয়ের ঝড়খালির এক যুবকের সঙ্গে। স্থানীয় সূত্রের খবর, দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দুই পরিবারেরর সম্মতিতেই বিয়ের আয়োজন হয়। গত বৃহস্পতিবার গোধূলি লগ্নে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। করোনা পরিস্থিতির জেরে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকায় জানানো হয়নি লোকজনকে। বিয়ের খবর পায় স্থানীয় ক্লাব। বছর পনেরোর মেয়ের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে শুনে ক্লাবের সদস্যরা ওই বাড়িতে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করতে বলেন। ক্লাব সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে আপত্তি করে মেয়েটির পরিবার। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁরা বিয়ে বন্ধ করে দেন। নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হলে কী কী সমস্যা হতে পারে, তা মেয়েটির বাবা-সহ পরিবারের অন্যদের ক্লাবে এনে বোঝান সদস্যরা। তত ক্ষণে চলে এসেছিলেন পাত্রও। পরে পাত্র এবং ওই কিশোরীকেও ক্লাবে এনে আলাদা করে বোঝানো হয়। ক্লাব সদস্যদের দাবি, তার পরে এখনই মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেন তার বাবা। কিশোরী সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন বলে জানান পাত্রও। ক্লাবের তরফে বিষয়টি বারুইপুর মহিলা থানায় জানানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আকছার হচ্ছে। ইদানীং প্রশাসনের তৎপরতায় অবশ্য বেশির ভাগ বিয়েই রুখে দেওয়া যাচ্ছে। তবে শহরতলিতে বছর পনেরোর মেয়ের বিয়ের ঘটনা বিরল বলেই জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। পাশাপাশি, ক্লাবের ছেলেদের এগিয়ে গিয়ে বিয়ে রুখে দেওয়ার ঘটনারও প্রশংসা করছেন তাঁরা। ওই ক্লাবের সদস্য কমলেশ মণ্ডল বলেন, “চারদিকে এত প্রচার চলছে, তা-ও কিছু মানুষের হুঁশ ফিরছে না। ঘটনাটা শুনেই আমরা ঠিক করি যে বিয়ে বন্ধ করতে হবে। মেয়ের বাবাকে বোঝাই, মেয়েটির শারীরিক-মানসিক পরিস্থিতির কথা ভেবে এখন বিয়ে দেওয়া উচিত হবে না। তা ছাড়া, আইনের দিক তো আছেই। পাত্রকেও সে কথা বোঝাই। সব শুনে ওঁরা আপাতত বিয়ে বন্ধ রাখতে রাজি হয়েছেন। সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিযে দেওয়া হবে না বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।” বারুইপুর মহিলা থানার ওসি কাকলি ঘোষ কুণ্ডু বলেন, “এই ধরনের ঘটনায় প্রশাসনকে জানালে সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ক্লাবের ছেলেরা বিয়ে আটকে ঠিকই করেছেন। মেয়েটির আবার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর রাখছি। তেমন হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলাস্তরে নাবালিকা বিয়ে, নারী ও শিশু পাচারের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু হচ্ছে বলে জানান তিনি। ১৫ অগস্ট একটি ট্যাবলো রাস্তায় নামবে। এই প্রচার চলবে টানা একমাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Marriage Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE