E-Paper

মাধ্যমিকের সময় এগিয়েছে, চিন্তায় সুন্দরবনের পরীক্ষার্থী

এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা সকাল ৯টা ৪৫ থেকে শুরু হচ্ছে। তাই সুন্দরবনের যে সব পরীক্ষার্থীর পরীক্ষাকেন্দ্র দূরে পড়েছে, তাদের ও অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২২
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

পরীক্ষার সময় এগিয়ে গিয়েছে দু’ঘণ্টা। তার জেরেই বিপাকে সুন্দরবনের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ। কারণ, অনেককেই নদী-নালা পেরিয়ে দূরের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যেতে হবে। কুয়াশার সমস্যায় নদী পেরিয়ে সময়ে কেন্দ্রে পৌঁছতে পারবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় অনেকেই। রয়েছে অন্য পরিবহণের চিন্তাও। কেন্দ্র থেকে দূরে যাদের বাড়ি, তারা অনেকে বেশি ভাড়া দিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছে বাড়ি নিতেও বাধ্য হয়েছে। প্রশাসন আশ্বাস দিলেও চিন্তা যাচ্ছে না অভিভাবকদের।

এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা সকাল ৯টা ৪৫ থেকে শুরু হচ্ছে। তাই সুন্দরবনের যে সব পরীক্ষার্থীর পরীক্ষাকেন্দ্র দূরে পড়েছে, তাদের ও অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। সন্দেশখালি ২ ব্লকের সুখদুয়ানি রিফিউজি হাই স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরের ঢেকনামারি দামোদর আদিবাসী বিদ্যালয়ে যেতে হবে। দুর্গামণ্ডপ গ্রাম পঞ্চায়েতের সুখদুয়ানি এলাকার যে সব পড়ুয়ার বাড়ি, তাদের বাড়ি থেকে সুখদুয়ানি জেলিয়াখালি সেতু পর্যন্ত আসতে সময় লাগবে ৫ মিনিট। সেতু পার হয়ে জেলিয়াখালি ভ্যান স্ট্যান্ডে আসতে লাগবে আরও ৫ মিনিট। সেখান থেকে ইঞ্জিন ভ্যানে করে প্রায় ৩০ মিনিটের পথ পেরিয়ে যেতে হবে আজিজের খেয়াঘাট। এরপর নদী পেরোতে ১০ মিনিট। ধামাখালি নদীর পাড় থেকে ধামাখালি বাস স্ট্যান্ডে আসতে হবে। সেখান থেকে বাসে করে আরও কয়েক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বয়ারমারি বাজারে পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে আবার ইঞ্জিন ভ্যান বা অটো করে পরীক্ষাকেন্দ্রে। অর্থাৎ, পরীক্ষার্থীরা ভোরবেলায় বাড়ি থেকে বেরিয়েও পরীক্ষাকেন্দ্রে ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান অভিভাবকেরা।

এক ছাত্রীর বাবা রাখাল আগুয়ানের কথায়, ‘‘প্রথম দিন পরীক্ষাকেন্দ্রে সাড়ে ৮টার দিকে পৌঁছতে হবে। বাড়ি থেকে ভোর ৪টেয় বেরোতে হবে। কিন্তু এত ভোরে ভ্যান বা নৌকা পারাপার করবে কি না, সন্দেহ আছে। অন্ধকারে নৌকা চলাচলও ঝুঁকির। কাছাকাছি
জায়গায় ঘরভাড়া চেয়েছে ৩ হাজার টাকা। যা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কী হবে জানি না।’’

এক ছাত্রের বাবা প্রদীপ দাস জানালেন, বাড়ি থেকে এ ভাবে যাতায়াত করা অসম্ভব বলে পরীক্ষার কয়েক দিনের জন্য তিনি বাধ্য হয়ে
চার হাজার টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া
করতে বাধ্য হয়েছেন। সুখদুয়ানি রিফিউজি হাই স্কুলের ৮৬ জন পরীক্ষার্থীরই এই সমস্যা হবে বলে মনে করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অভিষেক দাস।

শুধু পরীক্ষার্থীদের সমস্যা নয়। প্রশ্ন উঠেছে সুখদুয়ানি রিফিউজি হাই স্কুলে হওয়া পরীক্ষাকেন্দ্রের পরিকাঠামো নিয়েও। ওই স্কুলে এ বার ৪৬৪ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে আসবে। এ দিকে স্কুলের ভাঙাচোরা অবস্থার জন্য স্কুল ভবনের একটা অংশ ব্যবহার করা হয় না। ভবনের অন্য অংশে মোট ৬টি ঘর আছে। নিয়ম মেনে এক বেঞ্চে দু’জন করে বসালে তাতে ৪৬৪ জন পরীক্ষার্থীকে বসানো সম্ভব হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। বেঞ্চও পর্যাপ্ত নেই স্কুলে। আশপাশের স্কুল থেকে বেশ কিছু বেঞ্চ নিয়ে আসতে হবে মাধ্যমিকের পরীক্ষার জন্য।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক-সহ মোট মাত্র তিন জন স্থায়ী শিক্ষক আছেন। আর কোনও স্থায়ী শিক্ষক না থাকায় মাধ্যমিকের পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার হলে বিভিন্ন দায়িত্ব সামলানোর জন্য আশপাশের একাধিক স্কুল থেকে শিক্ষক নিয়ে আসার পরিকল্পনা করতে হয়েছে।

সন্দেশখালি ২ ব্লকের স্কুল পরিদর্শক নবকুমার রায় বলেন, ‘‘এই স্কুলের পরিকাঠামো নড়বড়ে এবং পরীক্ষার্থীদের বহু দূরে পরীক্ষা
দিতে যেতে হবে। দু’টি সমস্যার বিষয়েই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’

প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছে, পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে। সন্দেশখালি ২ ব্লকে ২৬১৪ জন পরীক্ষার্থী এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। সন্দেশখালি ১ ব্লকে ২৫০৭ জন। এই দুই ব্লকে একাধিক দ্বীপ এলাকা আছে। বিভিন্ন দ্বীপ এলাকা থেকে পরীক্ষার্থীদের নদী পেরিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হবে। ব্লক প্রশাসনের আশ্বাস, বিভিন্ন খেয়াঘাটে সিভিল ডিফেন্স থেকে শুরু করে পুলিশকর্মীরা থাকবেন। বাড়তি নৌকোর ব্যবস্থাও থাকবে পরীক্ষার্থীদের নদী পারাপারের সুবিধের জন্য।

সন্দেশখালি ২ বিডিও অরুণকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘বিভিন্ন খেয়াঘাটে ও ভ্যান স্ট্যান্ডে বিশেষ নজরদারি থাকবে। পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতে যাতে কোনও সমস্যা যাতে না হয় সে জন্য সব ব্যবস্থা থাকবে।’’ সন্দেশখালি ১ বিডিও সায়ন্তন সেন বলেন, ‘‘বৈঠকে স্থির হয়েছে, ভোর সাড়ে ৫টা থেকে খেয়াঘাটগুলিতে নৌকা চলবে। কুয়াশা থাকলেও যাতে নদী পারাপার করানো যায়, তা দেখা হচ্ছে। অটো-টোটো-ভ্যানের চালকদের বলে দেওয়া হয়েছে, পরীক্ষার্থী এলেই গাড়ি ছাড়তে হবে। যাত্রী ভর্তি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা যাবে না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sundarbans sandeshkhali

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy