Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Amphan

জলমগ্ন ঘরে ঘুরছে সাপ, রাস্তাতেই গ্রামের মানুষ

আমপানের তাণ্ডবে গোবদিয়া-শিবুয়া নদী ঘেরা এই দ্বীপ এলাকায় প্রায় আড়াই কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে যায়।

গোয়ালেই ঠাঁই। টুকরো গোপালনগর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

গোয়ালেই ঠাঁই। টুকরো গোপালনগর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২০ ০২:৫০
Share: Save:

বহু বাড়ি এখনও জলের তলায়। রাস্তায়, নদীবাঁধের উপর কোনওরকমে দিন কাটছে গ্রামবাসীদের। এক ছাউনির নীচে গরু-ছাগলের সঙ্গে বাস করছেন অনেকে। আমপানের প্রায় তিন সপ্তাহ পরেও এরকমই অবস্থা দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোপালনগর পঞ্চায়েতের টুকরো গোপালনগর, দুর্গাচটি পঞ্চায়েতের কামদেনগর-সহ আশেপাশের কয়েকটি এলাকার মানুষের। অনেককে একটা করে ত্রিপল দিয়েই কাজ সেরেছে প্রশাসন। খাবারের জন্য কার্যত হাহাকার করছেন সব হারানো মানুষগুলো। বাড়ি ফেরেননি কেন? প্রশ্ন শুনে বাঁধের উপরের জটলা থেকেই একজন বললেন, “ঘরে ঢুকবো কী! সব তো জলের তলায়। তার উপর আমাদের ঘর-চৌকি এখন সাপ-খোপের আস্তানা হয়েছে। জল না নামলে, আলো না এলে কিছুই করা যাবে না। রাস্তাতেই তাই কোনওরকমে দিন কাটছে।”

আমপানের তাণ্ডবে গোবদিয়া-শিবুয়া নদী ঘেরা এই দ্বীপ এলাকায় প্রায় আড়াই কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে যায়। কয়েকশো বিঘা কৃষিজমি এখনও জলের তলায়। স্থানীয়রা জানান, ঝড়ের পর নিজেরাই কোনওরকমে হাতে হাত লাগিয়ে ভাঙা বাঁধ মেরামত করেছেন। রাতের পর রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিয়েছেন। প্রশাসন ফিরেও তাকায়নি। দুদিন আগে পূর্ণিমার কোটালেও গ্রামে জল ঢোকে। তারপর টনক নড়েছে প্রশাসনের। রবিবার থেকে বাঁধ মেরামত শুরু করেছে সেচ দফতর। স্থানীয়রা সূত্রের খবর, ২০০৯ সালে আয়লার পর থেকে এই নিয়ে চারবার বাঁধ ভেঙে ভাসল এই গ্রাম। টুকরো গোপালনগরের বাসিন্দা ভানুমতী গায়েন, রামপদ হালদাররা বলেন, “আর কতবার নদীবাঁধ ভেঙে আমাদের সর্বস্ব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে বলতে পারেন! ধানজমি, আনাজ খেত, সব শেষ। পাঁচ বছর আর চাষবাস হবে না। যা পরিস্থিতি তাতে ছেলেপুলেরা বাইরে কাজ করে দুটো পয়সা আয় করবে, সেই উপায়ও নেই। সরকার যদি একটা পাকা নদীবাঁধ করে দিত, তাহলে বারবার এই দিন দেখতে হত না।”

দু’মুঠো খাবারের জন্য কার্যত হাহাকার করছেন ঘরবাড়ি, চাষের জমি হারানো মানুষগুলো। তাঁরাই জানালেন, গ্রামে খাবার বলতে কিছু নেই। দু-একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এসে মাঝে মধ্যে কিছু চাল-ডাল বিলি করছে। কিন্তু সরকারি তরফে কোনও ত্রাণ মেলেনি। এমনকী ঝড়ে ঘর ভাঙলে সরকারি তরফে যে কুড়ি হাজার টাকা পাওয়ার কথা, তা-ও পাননি কেউ। এক গ্রামবাসীর কথায়, “পঞ্চায়েতে খোঁজ করতে গেলে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর পেলে, বা ওই প্রকল্পের জন্য আবেদন করা থাকলে আর এই কুড়ি হাজার টাকা পাওয়া যাবে না।”

এই পরিস্থিতিতে কোথায় যাবেন, কী করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না গ্রামবাসীরা। স্থানীয় বাসিন্দা শম্ভুনাথ হালদারের কথায়, “আমার মা বাবা দুজনেই অসুস্থ। গ্রামের রাস্তা ঘাটের যা অবস্থা, তাতে স্বাভাবিক সময় দোলায় করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হয়। অন্য উপায় নেই। এখন এই পরিস্থিতিতে বাবা-মার চিকিৎসা কীভাবে হবে জানিনা। গোটা গ্রামটাই যেন ছারখার হয়ে গিয়েছে।”

গোপালনগর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দেবরঞ্জন গিরি বলেন, “বাঁধে জল ঠেকানো গিয়েছে। ত্রিপল, চাল-ডাল দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীরা মিথ্যা অভিযোগ করছেন। কোনও স্বজনপোষণ করা হয়নি।’’ সেচ দফতরের কাকদ্বীপ সাব ডিবিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কল্যাণ দে বলেন, “বাঁধ সংস্কারের কাজ হয়েছে। তারপরেও কিছু জায়গা দিয়ে জল ঢুকেছে। কোটাল কেটে গেলে পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের কাজ হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Dam Patharpratima
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE