Advertisement
১৮ মে ২০২৪

হুঁশ ফেরেনি, বহু চালকের, কানে ফোন

সোজাসাপ্টা বলা হয়, ‘‘না পোষালে নেমে যান।’’ অনেক ক্ষেত্রে সহযাত্রীদেরও সমর্থন মেলে না বলে জানালেন ওই তরুণী।

বেপরোয়া: কানে মোবাইল, চলছে গাড়ি। ফাইল চিত্র

বেপরোয়া: কানে মোবাইল, চলছে গাড়ি। ফাইল চিত্র

সীমান্ত মৈত্র
হাবরা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৮
Share: Save:

বাসে করে কলেজ যাচ্ছিলেন বাগদার তিথি মল্লিক। হঠাৎ এক ঝটকায় সিট থেকে ছিটকে পড়লেন। চোট লাগে কোমরে। জানা গেল, কানে মোবাইল ছিল চালকের। সামনে একটি সাইকেল এসে পড়ায় হঠাৎ ব্রেক কষেন।

তিথির এটা নতুন অভিজ্ঞতা নয়। জানালেন, বহু চালকই এ ভাবে গাড়ি চালান। রাস্তায় অনেক বাঁক আছে। সেখানেও কান থেকে ফোন নামান না চালকেরা। বারণ করলে উল্টে কটূ কথা শুনতে হয়। সোজাসাপ্টা বলা হয়, ‘‘না পোষালে নেমে যান।’’ অনেক ক্ষেত্রে সহযাত্রীদেরও সমর্থন মেলে না বলে জানালেন ওই তরুণী।

যশোর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কে নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন গাইঘাটার প্রৌঢ় অনুপ মণ্ডলের। বাস চালক মোবাইলে কথা বলতে বলতে বেপরোয়া গতিতে বাস চালাচ্ছেন, এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁরও। পুলিশ মাঝে মধ্যে ধরপাকড় করে না তা নয়। কিন্তু পুলিশ কর্তাদেরও বক্তব্য, মানুষ নিজে সচেতন না হলে সবটা আইন করে করা সম্ভব নয়। মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদের ঘটনার পরেও পরিস্থিতি বদলের লক্ষণ নেই। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা জেলার প্রতিটি থানা এলাকায় মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছি। ধরপাকড় আরও বাড়ানো হচ্ছে।’’

যশোর রোড, বনগাঁ-বাগদা, টাকি রোড, হাবরা-নৈহাটি সড়ক, হাবরা-বসিরহাট সড়ক, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক, বনগাঁ-চাকদহ রাজ্য সড়ক-সহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে যাঁরা নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন, সকলেরই অভিজ্ঞতা মোটের উপরে একই। বহু চালক হয় মোবাইলে খোস গল্পে মেতে থাকেন, না হলে বি়ড়ি-সিগারেট ফোঁকেন, তা হলে স্টিয়ারিং ছেড়ে দু’হাতে খৈনি ডলেন। আর এই অন্যমনস্কতার জেরে হঠাৎ হঠাৎ ব্রেক কষলে যাত্রীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। এমনিতেই যশোর রোড জায়গায় জায়গায় বেশ অপরিসর। দু’টি বড় ট্রাক, বাস পাশাপাশি যেতে পারে না। তারমধ্যে বাস চালকদের মধ্যে রেষারেষি লেগেই থাকে। কিছু দিন আগেই অশোকনগর এলাকায় যশোর রোডে বাসের ধাক্কায় এক যুবকের মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি ছিল, চালক ফোনে কথা বলছিলেন।সে জন্যই নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি।

ওভারটেক বা রেষারেষি চলে, তার কারণ, নির্দিষ্ট সময়ে স্ট্যান্ডে পৌঁছতে না পারলে নাকি জরিমানা দিতে হয়। ফলে যাত্রা শুরুর প্রথম দিকে ঢিমেতালে যাত্রী তুলতে তুলতে চললেও শেষের পথটুকু হু হু করে গাড়ি চালান চালকেরা। আর ওই অবস্থায় কানে মোবাইল দেখলে যাত্রীদের আত্মারাম খাঁচা ছাডা হওয়ার জোগাড় হয়। কিন্তু চালক-খালাসি কেউ পাত্তা দেবে না এই ভয়ে অনেকেই মুখ চুপ করে থাকেন।

বুধবার বনগাঁ এবং সংলগ্ন বহু এলাকায় দেখা গেল, বাস চালকদের কেউ কেউ মোবাইলে কথা বলছেন। সিগারেট হাতে নিয়েও বাস চালাচ্ছেন। ট্রাক বা ছোট গাড়ির চালকদেরও ক্ষেত্রেও দেখা গেল মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাচ্ছেন অনেকে।

উত্তর ২৪ পরগনা বাস ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে প্রায় ১৩০০ বাস রয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক রবীন ঘোষ বলেন, ‘‘বাস চালকদের আগেও বলা হয়েছে, তাঁরা যেন বাস চালানোর সময়ে মোবাইলে কথা না বলেন। ফের তাঁদের স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।’’ সম্প্রতি জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বাস সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, কুয়াশার মধ্যে প্রয়োজনে বাস চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানো যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Phone Mobile
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE