Advertisement
E-Paper

‘প্রতিবাদী’ গণেশ ধরা পড়ায় বিস্মিত নন দলের বহু নেতা

বেআইনি কারবার দেখলেই প্রতিবাদের সামনের সারিতেও দেখা যেত  তাঁকে। কিন্তু সব আন্দোলনই নাকি মিইয়ে যেত মাঝপথে। যে কারবারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সেই কারবারও বন্ধ হত না। মাঝখান থেকে ‘প্রতিবাদী’ তকমা পেয়ে যেতেন নৈহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ গণেশ দাস। 

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১০
গণেশ দাস

গণেশ দাস

পুরসভার শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান পারিষদ তিনি। নিজের শিক্ষার দৌড় অবশ্য মাধ্যমিক।

বেআইনি কারবার দেখলেই প্রতিবাদের সামনের সারিতেও দেখা যেত তাঁকে। কিন্তু সব আন্দোলনই নাকি মিইয়ে যেত মাঝপথে। যে কারবারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সেই কারবারও বন্ধ হত না। মাঝখান থেকে ‘প্রতিবাদী’ তকমা পেয়ে যেতেন নৈহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ গণেশ দাস।

এ হেন গণেশ তোলাবাজির মামলায় জড়িয়ে পড়ায় তাঁর দল তৃণমূলের একাংশ অবশ্য মোটেই অবাক নন। বরং গণেশ গ্রেফতার হওয়ার পরে অনেকেই এখন জানাচ্ছেন, ভুরি ভুরি অভিযোগ আছে গণেশের নামে। এত দিন মুখ খোলেনি কেউ। এখন জানাচ্ছেন, যে সব প্রতিবাদ আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠতেন গণেশ, আখেরে সেখান থেকেই টাকা নিয়ে চেপে যাওয়া ছিল তাঁর স্বভাব। নামে-বেনামে পুরসভার প্রতিটি প্রকল্প নিয়ে তথ্যের অধিকার আইনে চিঠি পাঠিয়ে গণেশ নাজেহাল করে তুলেছিলেন পুর-আধিকারিকদের।

তৃণমূল নেতাদের একাংশ জানিয়েছেন, ২০১০ সালে পুরভোটে এলাকার সক্রিয় কর্মী হিসেবে টিকিট পান গণেশ। ভোটে জিতে চেয়ারম্যান পারিষদ হন। ২০১৫ সালের পুরভোটেও টিকিট পেতে অসুবিধা হয়নি। জিতে ফের চেয়ারম্যান পারিষদের পদ পান। দলীয় সূত্রের খবর, শিল্পাঞ্চলের এক বাহুবলী নেতার ‘আশীর্বাদ’ই ছিল গণেশের পুঁজি। নৈহাটির পুরপ্রধান অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কখনও কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি ওঁর নামে। তবে এখন যা ঘটল, তার পরে বিষয়টি দলে উপর তলার নেতাদের গোচরে আনা হয়েছে।’’

তৃণমূল নেতাদের একাংশ জানাচ্ছেন, কোথাও কোনও বেআইনি কাজ চলছে কিনা, তার খবর রাখে গণেশের দলবল। অভিযোগ, সেখানে নিজেদের লোক দিয়ে আন্দোলন শুরু করাতেন গণেশ। এরপরেই কারবারিকে সরাসরি হুমকি দিয়ে তোলা চাইতেন বলে অভিযোগ। রাজি না হলে ফের হুমকি। পুলিশ-প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানোর ভয়ও দেখানো হত। পুলিশি ধরপাকড়ের জেরে মাস ছ’য়েক ধরে গঙ্গাপাড়ের বালির কারবার বন্ধ। তার আগে কারবারিদের হুমকি দিয়ে গণেশ মাসে ৭৫ হাজার টাকা করে নিতেন বলেও জানাচ্ছেন তৃণমূলেরই কিছু নেতা-কর্মী।

তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলের যূবনেতা মনোজ দাসও গণেশকে দু’বার ৭৫ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। সম্প্রতি সেই টাকা বাড়িয়ে প্রতি মাসে দু’লক্ষ টাকা করার জন্য হুমকি দিচ্ছিলেন গণেশ। রাজি হননি মনোজ। সেই থেকেই গোলমালের সূত্রপাত। মনোজ যদিও টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, ‘‘ও টাকা চাইছিল। বেআইনি কারবার করি না বলে আমি তোলা দিতে রাজি হইনি।’’ সোমবার রাতে দলের যুব নেতা মনোজ দাসের উপরে হামলার ঘটনাতেই ধরা পড়েন গণেশ-সহ বাকিরা। গণেশের সঙ্গেই ধরা পড়েছেন মহম্মদ সরফরাজ নামে এক যুবক। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি গণেশের ‘ডান হাত।’ মাস চারেক আগে কিডনি পাচার চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ধরাও পড়েন। মাস তিনেক জেল খেটে সম্প্রতি জামিন পেয়েছিলেন। সরফরাজ নৈহাটি পুরসভার কর্মী। ধরা পড়ার পরে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

কিডনি পাচারের তদন্তে নেমে পুলিশ সরফরাজ-সহ ৮ জন গ্রেফতার করেছিল। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, কিডনি বিক্রেতাদের একটি ভাড়া-ঘরে রাখা হত। তাদের দেখাশোনা, নজরদারি চালানো, বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানোর মতো নানা ‘গুরু দায়িত্ব’ ছিল সরফরাজের উপরে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি‌ (জোন ১) কে কান্নন বলেন, ‘‘তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হবে।’’ কিডনি পাচারের ঘটনায় গণেশ কোনও ভাবে জড়িত কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন কান্নন।

Crime Arrest Extortion TMC Leader
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy