দেশের নানা প্রান্তে যখন ভাষাভিত্তিক বিভাজনের আবহে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার ছবি সামনে আসছে, তখন এর উল্টো চিত্র ফুটে উঠেছে বানতলায়। চর্মনগরীতে ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকেরা কেবল নিরাপদে নয়, সম্মানের সঙ্গে কাজ করছেন। তাঁদের সঙ্গে কাজ করছেন বাঙালি শ্রমিকেরাও।
সায়েন্স সিটি থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে, বাসন্তী হাইওয়ের ধার ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এশিয়ার বৃহত্তম এই চর্মনগরী। প্রায় ১১০০ একর জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা চর্মনগরীতে ছোট-বড় মিলিয়ে রয়েছে সাতশোরও বেশি ট্যানারি। প্রতিটি ট্যানারিতে রয়েছেন ৫০ থেকে ৮০ জন শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশেরই আদি বাড়ি বিহার, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ে।
চর্মনগরীতে কাজ করার পাশাপাশি ওই শ্রমিকদের অনেকেই আশপাশের ভোজেরহাট, কাঁটাতলা, উসপাড়া, কেলেরাইট গ্রামে ঘর ভাড়া নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন। অনেকে আবার নিজস্ব স্থায়ী বাসস্থানও তৈরি করেছেন। ঝাড়খণ্ডের সোনু সিংহ বলেন, “এখানকার মানুষ আমাদের আপন করে নিয়েছেন। এত দিন থাকার পরে আমরা এখন এই রাজ্যেরই মানুষ।” বিহারের বাসিন্দা উমেশ রাম দশ বছর ধরে বানতলার একটি ট্যানারিতে সুপারভাইজ়ার হিসেবে আছেন। তিনি বলেন, “এত দিনে কখনওথাকা-খাওয়ার কষ্ট হয়নি। জাতপাত বা ভাষা নিয়ে কেউ কোনও অপমানও করেননি কখনও।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের সুরক্ষার অভাবের অভিযোগ চর্মনগরীতে শোনা যায়নি। সকলের শ্রমেই চর্মনগরীর কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। শ্রমিকদের থাকা-খাওয়া, চিকিৎসার ব্যবস্থার পাশাপাশি কেউ অসুস্থ হলে প্রয়োজনে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন স্থানীয়েরা মিলে।
চর্মনগরীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ভিন্ রাজ্যের হওয়ার কারণে শ্রমিক নির্যাতন বা বাঙালি-অবাঙালি বিষয়ে বানতলায় কোনও দিন অশান্তি হয়নি। এ নিয়ে কোনও অভিযোগও মেলেনি এখনও পর্যন্ত।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)