Advertisement
E-Paper

প্ল্যাটফর্ম ঢেকেছে হকারে, প্রাণ হাতে ট্রেনে ওঠানামা

বারাসত স্টেশনে এই ছবি নিত্যদিনের। ছবি: সুদীপ ঘোষ

বারাসত স্টেশনে এই ছবি নিত্যদিনের। ছবি: সুদীপ ঘোষ

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০৩:১৮
Share
Save

বারাসত স্টেশনের ৪-৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম। প্ল্যাটফর্মের মাঝ বরাবর দুই রেললাইনের দিকে মুখ করে সার দিয়ে দোকান। গ্যাস সিলিন্ডার জ্বালিয়ে বিশাল উনুনে ভাজা হচ্ছে পরোটা, চাউমিন। দোকান আর এক চিলতে প্ল্যাটফর্মের মধ্যেই অপেক্ষা করছেন কয়েকশো যাত্রী। হঠাৎ করেই ঢুকে পড়ল ট্রেন। ওঠানামার হুড়োহুড়ি, ঠেলাঠেলিতে ধাক্কা খেয়ে কেউ পড়লেন পরোটার দোকানের দিকে। কেউ বা ট্রেনের কামরার ফাঁকে। কপালজোরে বেঁচে গেলেন তাঁরা।

শিয়ালদহ থেকে বনগাঁ এবং বসিরহাট শাখায় এই ছবিটা নিত্যদিনের। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ দমদম জংশন স্টেশন নিয়ে। ওই স্টেশন থেকে বিভিন্ন দিকে যাওয়া ছাড়াও মেট্রো রেল থাকার কারণে প্রচুর যাত্রী ওঠানামা করেন। কিন্তু হকারদের দৌরাত্ম্যে প্ল্যাটফর্মেই দাঁড়ানো দায়। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ১ থেকে ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের।

অথচ, গত পাঁচ বছরে এ রাজ্য থেকেই চার-চার জন রেলমন্ত্রী হয়ে এই শাখাগুলির প্রায় প্রতিটি স্টেশনকেই ‘মডেল স্টেশন’ হিসেবে কাগজে-কলমে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ওই শাখার যাত্রীদের অভিযোগ, মডেল স্টেশন হলে যে সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, সে সব মিলছে না। উপরন্তু প্ল্যাটফর্ম যে আসলে ট্রেনে ওঠা-নামার জন্য, সেটাই ভুলতে বসেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

ওই শাখার স্টেশনগুলিতে গেলেই চোখে পড়বে, দিনে দিনে জবরদখল এতই বেড়েছে যে ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হতে থাকা প্ল্যটফর্মে ওঠা-নামা করাই বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। ১২ কামরার ট্রেন চালু হয়নি পুরোপুরি। অথচ সম্প্রসারিত নতুন প্ল্যাটফর্মগুলিও চলে গিয়েছে হকারদের দখলে। নিত্যযাত্রীরা জানান, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিধাননগর, দমদম, বিরাটি, মধ্যমগ্রাম, বারাসত, দত্তপুকুর, অশোকনগর, হাবরা, মছলন্দপুর ও বনগাঁ এবং বসিরহাট শাখার কদম্বগাছি, হাড়োয়া ও ভ্যাবলা স্টেশনের।

যাত্রীদের অভিযোগ, হকার বসানো নিয়ে মদত রয়েছে রাজনৈতিক দল ও রেল পুলিশের। কিন্তু কোনও হেলদোল নেই রেল কর্তৃপক্ষের। হকার তোলার দায় রেলের ঘাড়েই চাপিয়ে দিয়েছে রেল পুলিশ। হকারদের জন্য যাত্রীদের অসুবিধার কথা স্বীকার করে শিয়ালদহের এসআরপি দেবাশিস বেজ বলেন, “প্ল্যাটফর্মের হকার তোলার ব্যাপারে এখনও রেলের তরফে কোনও নির্দেশ আসেনি।” হকারদের জন্য যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের যে সমস্যা হচ্ছে, তা মেনে নিয়েছে রেলও। এ ব্যাপারে তারা অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলির সদিচ্ছার অভাবকেই দায়ী করেছে।

যাত্রীদের আরও অভিযোগ, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারাই হকারদের নিয়ন্ত্রণ করে। এখন প্রায় সব ক’টি স্টেশনেই হকারেরা রয়েছেন তৃণমূল সমর্থিত আইএনটিটিইউসি-র সংগঠন শিয়ালদহ ডিভিশন হকার্স ইউনিয়নের ছাতার তলায়। ওই সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি তাপস দাশগুপ্ত বলেন, “আমরা রেল কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম হকারদের পরিচয়পত্র দেওয়া হোক। তাতে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। কিন্তু আজও তা করা হয়নি। এ ব্যাপারে আমরা ফের তদ্বির করব।”

তবে একটু উদ্যোগ নিলে স্টেশনের সৌন্দর্য যে ফেরানো যায়, হাওড়া বা শিয়ালদহ স্টেশনই তার প্রমাণ। এক সময়ে হকার ভর্তি শিয়ালদহকে হকারমুক্ত করে এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। তবে বিধাননগর রোড স্টেশন থেকেই চোখে পড়বে একেবারে উল্টো ছবি। দমদম স্টেশনের সাবওয়েতে ভবঘুরেদের জন্য হাঁটাচলা করাই দায়। যাত্রীদের অভিযোগ, ধাক্কাধাক্কি না করে দমদম স্টেশনে ঢোকা এবং প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনে ওঠা কার্যত অসম্ভব।

প্ল্যাটফর্মের একপাশে দোকানের সারি। তার মাঝখান দিয়েই বসে গিয়েছে হকারেরা। যাত্রীরা জানান, এমন কোনও জিনিসের দোকান নেই যা প্ল্যাটফর্মে নেই। বেশিরভাগ দোকানই চলছে ভাড়ায়। রাজনৈতিক দলের খাতায় রয়েছে এক জনের নাম, তিনি আবার দোকান ভাড়া দিয়েছেন অন্য জনকে। এমনও রয়েছে, যাঁর নামে দোকান, তিনি মারা গিয়েছেন। বছরের পর বছর এ ভাবেই চলছে জবরদখল হয়ে যাওয়া প্ল্যাটফর্মের দোকান। কমার লক্ষণ তো নেই-ই, উল্টে দোকানের সংখ্যা বেড়ে চলেছে দিনের পর দিন।

প্ল্যাটফর্মে ক্রমবর্ধমান হকারের জন্য যাত্রীদের সমস্যার কথা স্বীকার করে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “খুব শীঘ্রই আমরা রাজ্য সরকার এবং ওই শাখার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে হকার তোলার কাজ শুরু করব।’’

Barasat station Barasat hawkers occupied

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।