‘দোষ’ করেছিলেন বলেই সে খুন করেছে বাবা-মাকে। পুলিশের দাবি, জেরায় তাদের কাছে এমনই দাবি করেছে হুমায়ুন কবীর। তবে কী দোষ তাঁরা করেছিলেন, ভাঙেনি। বাবা-মাকে খুন করার পরে প্রায় ২০ কিলোমিটার হেঁটে, পরে, পণ্যবাহী ট্রাক ও বাসে চড়ে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থেকে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় পৌঁছেছিল সে। সেখানে কয়েক জনের কাছে জানতে চায়, বাংলাদেশ সীমান্ত যাওয়া যাবে কোন পথে। বুধবার বনগাঁর এক মাদ্রাসায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে জনা চারেককে জখম করার পরে, হুমায়ুনের গতিবিধি সম্পর্কে এমনটাই দাবি পুলিশের।
বুধবার ভোরে মেমারিতে বাড়ির সামনের রাস্তায় রক্তাক্ত দেহ মেলে হুমায়ুনের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান (৬৬) ও মা মমতাজ পারভিনের (৫৬)। পুলিশ সূত্রের দাবি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে হুমায়ুনকে ভোর ৩টে ৫ মিনিট নাগাদ বাড়ির ভিতরে বালতি হাতে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। সওয়া ৩টে নাগাদ মেমারি-সাতগেছিয়া রোডে দেখা যায় তাকে। মেমারি-পাহাড়হাটি রাস্তা, বর্ধমান-কালনা রোডেও একটি থলি হাতে ছুটতে দেখা গিয়েছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, “দিল্লিতে থাকার সময়ে হুমায়ুন হেঁটে হিমাচলে গিয়েছিল। আমাদের ধারণা, মেমারি থেকে বনগাঁ যেতে অনেকটা রাস্তা সে হেঁটেছে, বাকিটা পণ্যবাহী গাড়ি বা বাসে গিয়েছে।”
বনগাঁ আদালত বৃহস্পতিবার হুমায়ুনকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠায়। ওই আদালতের আইনজীবী অসীম দে বলেন, “ধৃতের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা হয়েছে।” হুমায়ুনের ধরা পড়ার খবর পেয়ে বর্ধমান থেকে পুলিশের একাধিক দল বনগাঁয় গিয়েছে। পূর্ব বর্ধমান পুলিশের দাবি, বনগাঁর ঘটনায় পুলিশি হেফাজত শেষে, মেমারিতে বাবা-মাকে খুনের মামলায় হুমায়ুনকে গ্রেফতার দেখানোর জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হবে। পুলিশ সুপার (পূর্ব বর্ধমান) সায়ক দাস বলেন, “ধৃতকে জেলায় আনার পরে, ঘটনা স্পষ্ট হবে।”
পূর্ব বর্ধমানের এক পুলিশকর্তার দাবি, “তদন্তে জানা গিয়েছে, কিছু দিন ধরে অর্থনৈতিক সাম্যের কথা বলছিল হুমায়ুন। গরিবের উপরে অত্যাচার হচ্ছে বলে মনে করছিল। বাড়িতে পরিচারিকাকে দিয়ে কাজ করানো নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে অশান্তি হয়েছিল বলেও জানা গিয়েছে।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পরে, একাধিক সংস্থায় কাজ করেছে হুমায়ুন। বছরখানেক আগে চাকরি ছাড়ে। গত মাস তিনেক মেমারিতেই থাকছিল। এক আত্মীয়ের দাবি, “মেধাবী ছাত্র। বেতনের অধিকাংশ দান করত। বিবাহবিচ্ছেদের পরে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।”
তদন্তকারীরা জানান, বাংলাদেশ সীমান্তে যাওয়ার রাস্তার খোঁজ করলেও, সে দিকে না গিয়ে হুমায়ুন হঠাৎ মাদ্রাসায় অশান্তি পাকাল কেন, স্পষ্ট নয় তা-ও। মাদ্রাসা সূত্রের খবর, হুমায়ুনের কাছে ধর্মগ্রন্থ ছিল। তা রাখার জন্য ব্যাগ ও কাপড় চেয়েছিল সে। শিক্ষকেরা পরিচয় জানতে চাওয়ায়, ছুরি নিয়ে হামলা করে বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, ছুরিটি অনলাইনে কেনা। তা দিয়েই সে বাবা-মাকে খুন করেছে কি না, সে জবাব এখনও মেলেনি।
হুমায়ুনের হামলার পরে, বনগাঁর ওই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আপাতত ছুটি ঘোষণা করেছেন। বুধবারের হামলায় জখম হওয়া মাদ্রাসার দুই শিক্ষক হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছেন। তবে গফুর মণ্ডল এবং মনিরুদ্দিন নামে দুই আহত এখনও চিকিৎসাধীন। হামলার পরে হুমায়ুনকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে কিছু লোক বনগাঁ থানায় হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ওই মামলায় ধৃত দশ জনকে বিচারক পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)