Advertisement
E-Paper

নার্সিংহোম থেকে ভেসে আসত চটুল গানের কলি

সন্ধের পর অনেক সময়ে গান-বাজনার জগঝম্প ভেসে আসত নার্সিংহোমের জানলা-দরজা আঁটা ঘরের ভিতর থেকে। হচ্ছেটা কী? উঁকিঝুঁকি মেরে দেখার ইচ্ছে হতো এলাকার লোকজনের।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২৩
ধৃত বাকবুল বৈদ্য।

ধৃত বাকবুল বৈদ্য।

সন্ধের পর অনেক সময়ে গান-বাজনার জগঝম্প ভেসে আসত নার্সিংহোমের জানলা-দরজা আঁটা ঘরের ভিতর থেকে। হচ্ছেটা কী? উঁকিঝুঁকি মেরে দেখার ইচ্ছে হতো এলাকার লোকজনের। সেই সুযোগ মেলেনি কারও। তবে আড়ালে আবডালে খবর ছিল, মদ-জুয়া, দেহব্যবসার আসর বসত উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার বাগজোলার সোহান নার্সিংহোমে। যেখান থেকে শিশু চুরি এবং পাচারের অভিযোগে সোমবার রাতে ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। নার্সিংহোমে দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগও এখন খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

২০১৩ সালে চালু হয়েছিল নার্সিংহোমটি। বাদুড়িয়ার বাগজোলায় বড় রাস্তার ধারে তিনতলা বাড়ির দু’টি তলা নিয়ে নার্সিংহোমটি খুলেছিল আসাদুর জামান। যার দেখভাল করতে দেখা যেত নাজমা বিবি, তার স্বামী বাকবুল বৈদ্যদের। সকলেই শিশু পাচার চক্রের মূল হোতা বলে জানতে পেরেছেন সিআইডি গোয়েন্দারা। গ্রেফতারও করা হয়েছে তাদের।

আসাদুরের বাড়ি হাবরার দক্ষিণ সরাই গ্রামে। ছেলে শিশু পাচারের মতো কাজে জড়িয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ আসাদুরের বাবা মাজেদ। স্ত্রী রোশেনারা, কলেজ পড়ুয়া ছেলে ফারহানরা লজ্জিত। সকলেরই বক্তব্য, ‘‘ওর উচিত শিক্ষা পাওয়া উচিত।’’

পঞ্চায়েত থেকে পাওয়া ট্রেড লাইসেন্স থাকলেও নার্সিংহোমটির প্রয়োজনীয় অন্য নথিপত্র ছিল না বলেই প্রাথমিক ভাবে অনুমান করছেন পুলিশ ও গোয়েন্দারা। সে কথা মানছেন উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্যও।

নার্সিংহোমকে শিখণ্ডী খাড়া করে তার আড়ালে দেশ-বিদেশে শিশু পাচারের ব্যবসা ফেঁদে বসেছিল নাজমা-বাকবুল-আসাদুররা।

তদন্তকারীদের হাতে একে একে আসছে নানা নথি। জানা যাচ্ছে, দেগঙ্গার কলসুরের বালিহাটি গ্রামের বাসিন্দা নাজমার পড়াশোনা বেশিদূর এগোয়নি। কিন্তু অষ্টম শ্রেণি ফেল উচ্চাকাঙ্খী মেয়েটির দৌড় তাতে দমিয়ে রাখা যায়নি। বাদুড়িয়ার বাগজোলা বাজারে এক চিকিৎসকের সহযোগী হিসাবে কাজের সুবাদে ক্রমে ক্রমে নানা ব্যাপারে হাত পাকিয়েছিল সে। দেগঙ্গার এক চিকিৎসকের কাছেও কিছু দিন কাজ করে। সেই সূত্রে যোগাযোগ তৈরি হয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, নার্সিংহোমের সঙ্গেও।

ওই চিকিৎসকের মৃত্যুর পরে নিজের নামে বাগজোলার বাঁশতলায় ‘নাজমা ক্লিনিক’ খুলে বেআইনি কাজকর্মে হাতেখড়ি শুরু করে দেয় নাজমা। এক সময়ে নিজেই হাতুড়ে ডাক্তার হয়ে বসে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ‘দাইমা’র ভূমিকাতেও দেখা যেত তাকে। তা ছাড়া, ক্লিনিকের আড়ালে গর্ভপাতের ব্যবসা তো ছিলই।

বছর কয়েক আগে তার সঙ্গে যোগাযোগ হয় বাদুড়িয়ার শ্রীরামপুরের মুহুরিপাড়ার বাসিন্দা বাকবুলের। বিয়েও হয়। ২০০৮ সালে বাকবুল কংগ্রেসের টিকিটে যদুরআটি পঞ্চায়েতের সদস্য হয়। এলাকায় প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়ে।

তবে বাকবুলের দিন দিন ফুলেফেঁপে ওঠাটা কারও নজর এড়ায়নি। বছর কয়েক আগে যেখানে বাড়ি করে গ্রামের ভিটে ছেড়ে এসেছে বাকবুল, সেই জমির দাম বর্তমানে ৪০-৪৫ লক্ষ টাকা তো হবেই! এলাকার লোকজনের দাবি, বেআইনি গর্ভপাত এবং শিশু পাচারের টাকাতেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল বাকবুল-নাজমাদের। বাড়ির নীচে ‘বৈদ্য ক্লিনিক’ এবং কাপড়ের দোকানও করেছিল স্বামী-স্ত্রী। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বৈদ্য ক্লিনিকের পিছন থেকে দুর্গন্ধ ছড়াত। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, মৃত শিশু, নাড়িভুড়ি ফেলা হতো সেখানেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এক আধিকারিক। বাকবুল-নাজমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Newborn trafficking Baduria
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy