E-Paper

‘বিজয় দিবসে’ সীমান্ত পেরিয়ে এসেও আনন্দ নেই

গত বছর পর্যন্ত ‘বিজয় দিবসে’র প্রভাব এসে পড়ত এ পারের পেট্রাপোল সীমান্তে। এই দিনে বাংলাদেশ থেকে যাঁরাই এ দেশে আসতেন, তাঁদের হাতে থাকত রজনীগন্ধা ফুলের স্টিক।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৪:৩৭
বিজয় দিবসে সীমা চেতনা মঞ্চের সদস্যদের পক্ষ থেকে পেট্রাপোল সীমান্তে বিএসএফ জওয়ানদের হাতে তুলে দেওয়া হল ফুল ও মিষ্টি।

বিজয় দিবসে সীমা চেতনা মঞ্চের সদস্যদের পক্ষ থেকে পেট্রাপোল সীমান্তে বিএসএফ জওয়ানদের হাতে তুলে দেওয়া হল ফুল ও মিষ্টি। নিজস্ব চিত্র।

ছবিটা এ বার মিলল না।

কোথায় সেই আবেগ, উচ্ছাস! গত কয়েক সপ্তাহের মতো সোমবার, ১৬ ডিসেম্বরও নিস্তরঙ্গ রইল পেট্রাপোল সীমান্ত। যে ক’জন বাংলাদেশি সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে পা রাখলেন, তাঁদের হাতে না ছিল রজনীগন্ধা, না ছিল মিষ্টির প্যাকেট। তাঁদের চোখ-মুখে উদ্বেগ, আতঙ্ক। দেখে কে বলবে, গত বছর পর্যন্ত এই দিনে তাঁরা আনন্দে মেতেছেন!

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ‘বিজয় দিবস’। ন’মমাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনেই পাকিস্তানি ফৌজ যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। পরে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম হয় বাংলাদেশের। তাই এই দিনটির তাৎপর্য বহু বাংলাদেশির কাছেই অন্য রকম।

গত বছর পর্যন্ত ‘বিজয় দিবসে’র প্রভাব এসে পড়ত এ পারের পেট্রাপোল সীমান্তে। এই দিনে বাংলাদেশ থেকে যাঁরাই এ দেশে আসতেন, তাঁদের হাতে থাকত রজনীগন্ধা ফুলের স্টিক। তাঁরা সেই ফুল এ দেশের মানুষের হাতে দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদানের জন্য। মিষ্টিমুখও করাতেন। এ দেশের পরিচিতদের তাঁদের বাড়িতে ঘুরতে যাওয়ার আমন্ত্রণ করে যেতেন। বিএসএফ জওয়ানদের সঙ্গে করমর্দন করে শুভেচ্ছাও জানাতেন তাঁরা। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) পক্ষ থেকেও বিএসএফের হাতে ফল-মিষ্টি তুলে দেওয়া হত।

এ বার সে সব হয়নি। পেট্রাপোল দিয়ে আসা একজন বাংলাদেশির হাতেও রজনীগন্ধা দেখা গেল না। সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রে কাজ করছেন বাপ্পা ঘোষ। এ দিনের পরিবেশেটা তাঁর কাছেও অচেনা। তাঁর কথায়, ‘‘এই দিনে আমরা বাংলাদেশের বিজয় দিবসের কথা ভুলে গেলেও ওঁদের হাতে রজনীগন্ধার স্টিক দেখে বুঝতে পারতাম। বেনাপোলে সারাদিন মাইকে দেশাত্মবোধক গান হত। কুচকাওয়াজ হত। ফুল-বেলুন দিয়ে সাজানো হত। এ বার কিছুই দেখলাম না।’’

যশোরের বৃদ্ধ হরিদাস পাল চোখ-মুখে উদ্বেগ নিয়ে পেট্রাপোল সীমান্তে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘আজ আমাদের আনন্দের দিন। কিন্তু দেশে কার্যত কোনও উৎসব হচ্ছে না। বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু কর্মসূচি হচ্ছে। এই দিনে আমরা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদদের স্মরণ করতাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আলোচনা করতাম। এ বার সবই বন্ধ। দেশে আতঙ্কে আছি। চাপা সন্ত্রাস চলছে।’’

বাংলাদেশ থেকে আসা এক প্রবীণের কথায়, ‘‘মুজিবুর রহমানকে নিয়ে প্রকাশ্যে শ্রদ্ধা জানানো, আলোচনা করাই হচ্ছে না। অনেকেরই ইচ্ছা থাকলেও ভয়ে উৎসব পালন করতে পারেননি। দেশের বর্তমান সরকার শেখ মুজিবুর এবং তাঁর কৃতিত্ব মুছে ফেলতে চাইছে।’’ ঢাকার ব্যবসায়ী মুজিবর রহমান অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘‘এই অচলাবস্থা বেশিদিন থাকবে না। স্থায়ী সরকার এলে ভারতের সঙ্গে সু-সম্পর্ক তৈরি হবে। তথন বিজয় দিবস মহাসমারোহে পালন করতে পারব।’’

এ দিন ‘সীমা চেতনা মঞ্চ’ নামে এ দেশের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে অবশ্য বিএসএফ জওয়ানদের হাতে ফুল-মিষ্টি তুলে দেওয়া হয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Petrapol

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy