Advertisement
২৬ জানুয়ারি ২০২৫
Anganwadi Center

শ্রেণিকক্ষের অভাবে মালপত্রের গুদামে চলছে ক্লাস

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মগরাহাট ২ ব্লকের নৈনান পঞ্চায়েতে ওই প্রাথমিক স্কুলটি ১৯৪২ সালে সরকারি অনুমোদন পায়। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১১৬ জন।

মিড-ডে মিলের গুদাম ঘরে চলছে পড়াশোনা।

মিড-ডে মিলের গুদাম ঘরে চলছে পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৩৩
Share: Save:

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির জনা পঞ্চাশ ছাত্রছাত্রী গাদাগাদি করে ক্লাসে বসে। পাশে একই আয়তনের আর একটি ঘরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রায় ৫০ জনকে নিয়ে ক্লাস করেন শিক্ষকেরা। অদূরে মিড ডে মিলের মালপত্র রাখার গুদামে হাত পনেরো লম্বা ঘরে ঠেসেঠুসে বসানো হয় পঞ্চম শ্রেণির ছেলেমেয়েদের। এ ভাবেই পঠনপাঠন চলছে মগরাহাটের ডোডালিয়া কৃষ্ণপুর জুনিয়ার বেসিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শ্রেণিকক্ষের অভাবে সঙ্কটে পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। একাধিক বার প্রশাসন থেকে শিক্ষা দফতরকে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ।

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মগরাহাট ২ ব্লকের নৈনান পঞ্চায়েতে ওই প্রাথমিক স্কুলটি ১৯৪২ সালে সরকারি অনুমোদন পায়। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১১৬ জন। স্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন ৩ জন, পার্শ্বশিক্ষিকা ১ জন। বহু বছর আগে স্কুলটি শুরুতে পাঁচ ইঞ্চির ইটের দেওয়াল টালি ও টিনের ছাউনির বড় হল ঘর ছিল। ২০১১ সালে সরকারি অনুমোদের টাকায় পুরনো স্কুলভবনের পাশে একতলা ছাদ দিয়ে ভবন তৈরি হয়। ওই পাকা ভবনে রয়েছে দু’টি ঘর। একটিতে অফিস ঘর ছিল, অন্য একটি ঘরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস চলত। পুরনো ভবনে বাকি ক্লাস নেওয়া হত।

বেশ কয়েক বছর আগে টিন ও টালি উড়ে গিয়ে দেওয়াল হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। ফলে পুরনো ভবনে পঠন-পাঠন বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে অফিস ঘরটিতে প্রাক-প্রাথমিক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এক সঙ্গে বসিয়ে পড়াতে হচ্ছে। আবার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের একটি ছোট গুদাম ঘরের মধ্যে পড়াতে হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণির পাশে টালির চালের মিড ডে মিলের রান্না ঘরটিও ভাঙাচোরা। বৃষ্টি হলে অঝোরে জল পড়ে ভিতরে। খাবার জলের একটি মাত্র নলকূপ মাঝে মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। ভাল খেলার মাঠ নেই। নতুন পাকা ভবনটির ছাদে চিড় ধরেছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে জল ঢোকে। জানলার পাল্লা নেই। ঝড়-বৃষ্টির সময়ে জল ভিতরে ঢোকে। সীমানা-প্রাচীর না থাকায় স্কুলের বারান্দায় গরু-ছাগল চরে বেড়ায়।

অভিভাবক সুজাতা মণ্ডল, পূরবী মণ্ডলেরা জানালেন, পুরনো ভবনটি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ায় ছেলেমেয়েদের বসার জায়গা নেই। এক ঘরে দু’টি ক্লাসের ছেমেয়েদের একই সঙ্গে বসানো হচ্ছে। কাছাকাছি কোনও স্কুল না থাকায় বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়েদের এই বেহাল পরিকাঠামোর স্কুলেই পাঠাতে হচ্ছে। স্কুল ভবন তৈরির জন্য যথেষ্ট জমি থাকলেও সরকারি ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে ভবন নির্মাণের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ব্লক প্রশাসন থেকে পরিদর্শন করে গিয়েছে। নির্মাণের জন্য জমির নথিও ব্লক প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরে কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তপনকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘শ্রেণিকক্ষের অভাবে পঠন-পাঠন চালাতে সমস্যা হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের গাদাগাদি করে বসিয়ে পড়াতে গিয়ে সকলেই অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। বসার জায়গা নেই বলে কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ মিড ডে মিলে চালের বস্তার উপরে বসে কোনও রকমে ক্লাস করে। আর পরিকাঠামোর জন্য দিন দিন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, পাশাপাশি অন্যান্য স্কুলগুলি সরকারি অর্থে বরাদ্দে ভবন নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু বার বার প্রশাসনের কাছে দরবার করেও এই স্কুলের বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা শিক্ষাসংসদের চেয়ারম্যান অজিতকুমার নায়েক বলেন, ‘‘ওই স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সর্বশিক্ষা মিশন থেকে ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা অনুমোদন হয়েছে। খুব শীঘ্রই নির্মাণ শুরু হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Magrahat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy