Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩
Physically Challenged

প্রতিবন্ধী মেয়েকে স্বনির্ভর করতে লড়াই চলছে শক্তিপদ-শ্যামলীর

তার দিদি, বছর কুড়ির চৈতালি স্বাভাবিক ছন্দে হাঁটতে পারেন না।

পড়াশোনায় ব্যস্ত চৈতালি। নিজস্ব চিত্র

পড়াশোনায় ব্যস্ত চৈতালি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২০ ০১:২২
Share: Save:

জন্ম থেকেই হাত-পায়ের সব ক’টি আঙুল জোড়া লাগানো। জন্মের তিন দিনের মধ্যে কলকাতার শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা অভিভাবকদের জানিয়ে দিয়েছিলেন, মেয়ের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাই কম।

Advertisement

সে কথা অমোঘ বলে মেনে নেননি বাবা-মা। শুরু হয় তাঁদের লড়াই। শক্তিপদ ও শ্যামলী মণ্ডলের সেই মেয়ে চৈতালিই এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে।

বনগাঁর গ্রামট্যাংরা এলাকার বাসিন্দা শক্তিপদর দুই মেয়ের মধ্যে বড় চৈতালি। ছোট বর্ণালী নবম শ্রেণিতে পড়ছে। তার দিদি, বছর কুড়ির চৈতালি স্বাভাবিক ছন্দে হাঁটতে পারেন না। দু’হাতে কলম ধরে লেখেন। শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে। মাসে হাজার দু’য়েক টাকার ওষুধপত্র খেতে হয়। দ্রুত লিখতে পড়তে সমস্যা তো আছেই।

তবু লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন চৈতালি আর তাঁর বাবা-মা। সামান্য এক ফালি চাষের জমি রয়েছে শক্তিপদর। অন্যের জমি ভাগে নিয়ে চাষবাস করেন। অভাবের সংসার। টিনের দেওয়াল, টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়ি চৈতালিদের। মেঝে এখনও কাঁচা। বৃষ্টি হলে ঘরে জল পড়ে।

Advertisement

চৈতালি ট্যাংরা কলোনি হাইস্কুলের ছাত্রী। শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাঁকে পড়াশোনায় সব সময় সাহায্য করে এসেছেন বলে জানালেন পরিবারের সকলেই। তবু দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন শক্তিপদ-শ্যামলীরা।

শক্তিপদ বলেন, ‘‘আমি তো চিরদিন থাকব না। আমার অবর্তমানে যাতে মেয়ের খাওয়া-পড়ার অভাব না হয়, সে জন্যই ওকে পড়াশোনা শেখাচ্ছি। জানি না ভবিষ্যতে কত দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’’ দুশ্চিন্তা ফুটে ওঠে বাবার গলায়।

ছোটবোন শ্যামলী সর্বক্ষণ দিদির সঙ্গে লেপ্টে থাকে। বহু কাজই দিদি নিজে হাতে করতে পারে না। বোনই ভরসা। কথাবার্তাও খুব স্বাভাবিক ভাবে বলতে পারেন না। দাঁত উঠেছে বারো বছর বয়সে। শ্যামলী বলেন, ‘‘চৈতালির বয়সটাই শুধু বেড়েছে। আচরণ এখনও শিশুর মতো।’’

শক্তিপদ বলেন, ‘‘ছোটবেলায় চিকিৎসক বলেছিলেন, ওর বয়স যখন দু’বছর হবে। তখন যেন টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাই। তা হলে আঙুল আলাদা করা সম্ভব হলেও হতে পারে। আমি সেই টাকা জোগাড় করতে পারিনি।’’ তবু হাল ছাড়েননি কেউ। চৈতালির কথায়, ‘‘পড়াশোনা করতে ভাল লাগে। ভবিষ্যতে কাজ করে বাবা-মাকে দেখব।’’

মেয়ের কথা শুনে চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে

শক্তিপদ-শ্যামলীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.