Advertisement
১৯ মে ২০২৪

নুরপুরের ঘাটে লঞ্চ ধরতে হামাগুড়িও দিতে হয় যাত্রীদের

প্রায় পঁচিশ বছর আগে চালু হয়েছে লঞ্চ পরিষেবা। কিন্তু পাকাপোক্ত ঘাট গড়ার প্রয়োজন মনে করেননি জেলা প্রশাসন। গাদিয়াড়া-নুরপুর নদী পারাপার মানেই তাই কাদায় পিছলে, হোঁচট খেয়ে কখনও বা হামাগুড়ি দিয়ে লঞ্চ ধরার অভিজ্ঞতা নিয়ে দিনযাপন স্থানীয় বাসিন্দাদের।

এই জেটিঘাট দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়েই বিপদ হচ্ছিল যাত্রীদের। ছবি: দিলীপ নস্কর।

এই জেটিঘাট দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়েই বিপদ হচ্ছিল যাত্রীদের। ছবি: দিলীপ নস্কর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামনগর শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০০:১৩
Share: Save:

প্রায় পঁচিশ বছর আগে চালু হয়েছে লঞ্চ পরিষেবা। কিন্তু পাকাপোক্ত ঘাট গড়ার প্রয়োজন মনে করেননি জেলা প্রশাসন।

গাদিয়াড়া-নুরপুর নদী পারাপার মানেই তাই কাদায় পিছলে, হোঁচট খেয়ে কখনও বা হামাগুড়ি দিয়ে লঞ্চ ধরার অভিজ্ঞতা নিয়ে দিনযাপন স্থানীয় বাসিন্দাদের।

তার জেরে আহতও হচ্ছেন অনেকে। দিন কয়েক আগেই যেমন, কাদায় পিছলে পড়ে আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচ যাত্রী। পাছে যাত্রী বিক্ষোভ শুরু হয় তাই এর পরেই আগেভাগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গাদিয়াড়া-নুরপুর-গেঁওখালি লঞ্চ পরিষেবা।

নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, ঘুর পথে যাতায়াত করতে গিয়ে সময় ও অর্থ দু’টোই বেশি লাগছে। হুগলি জলপথ পরিবহন সমিতির গাদিয়াড়া শাখার কর্তা উত্তম রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘ঘাট সংস্কারের জন্য জেলা পরিষদকে অনেক বার আর্জি জানিয়েও সাড়া মেলেনি।’’

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯০ সাল পর্যন্ত যন্ত্রচালিত নৌকা করে হুগলি নদী পারাপার করা হতো। তার পর চালু হয় লঞ্চ। কয়েক বছর আগে হাওড়ার দিকে গাদিয়াড়ার ঘাটটি নির্মাণ হয়। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনার নুরপুরের ঘাটটি এখনও হয়নি। ফলে নদীর বাঁধকেই ঘাট বলে চালিয়ে দৈনন্দিন পারাপার চলছে সেখানে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ভাটার সময় যাত্রীদের লঞ্চ থেকে নেমে বাঁধের ঢালে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে উপরে উঠতে হয়। বর্ষার সময়ে বাঁধের উপর ওঠার জন্য ইটের বোল্ডারে শ্যাওলা পড়ে থাকে ফলে সে পথে হাঁটাও দুষ্কর। সম্প্রতি নদীর জোয়ারে ঘাটের বোল্ডার সরে খাদ তৈরি হয়েছে। গাদিয়াড়াগামী লঞ্চে উঠতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়ে যান কয়েকজন যাত্রী। এরপরেই নুরপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা ওই ঘাটটি ব্যবহার করা বন্ধ করে দেন। বন্ধ হয়ে গিয়েছে লঞ্চ চলাচলও।

পরিষেবা থমকে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা। ঘুর পথে গাদিয়াড়া ও গেঁওখালি যাওয়ার ফেরি চলাচল করলেও সেখানে সময় ও অর্থ দুই-ই লাগছে বেশি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জেলা পরিষদের অধীনে এবং হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সংস্থায় পরিচালনায় লঞ্চ চলাচল করলেও নুরপুরে যাত্রী পরিষেবার লেশমাত্র নেই। পানীয় জল, যাত্রী প্রতীক্ষালয়, শৌচাগার তো দূর অস্ত, ন্যূনতম আলোর ব্যবস্থাটুকুও নেই। নেই নুরপুর ঘাটে টিকিট কাউন্টার নেই। বাঁধের পাশে একটি চায়ের দোকান থেকেই চলে টিকিট বিক্রি।

স্থানীয় বাসিন্দা তথা ডায়মন্ড হারবার-২ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য গোবাইয়া মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘বহু দিন ধরে ওই ঘাটটির বেহাল অবস্থা। যাত্রী ওঠানামা করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই ওই ঘাট ব্যবহার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি।’’ ঘাটের দশার কথা স্বীকার করে ডায়মন্ড হারবার-২ বিডিও তীর্থঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ‘‘তহবিলে টাকা নেই। তবুও সংস্কার করে দেওয়ার কোনও রকমে কাজ চালানোর মতো অবস্থা করে দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত সমিতিকে বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE