Advertisement
E-Paper

পনেরো বছর পরে ফের পাথর ছোড়া, চিন্তিত যাত্রীরা

গত রবিবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ আপ শিয়ালদহ লোকাল বামনগাছি এবং দত্তপুকুর স্টেশনের মধ্যে পৌঁছয়। অন্ধকার সেই জায়গা থেকেই ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে দুষ্কৃতীরা।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৩৩
অদ্রিজার রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা সহযাত্রীদের। ফাইল চিত্র

অদ্রিজার রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা সহযাত্রীদের। ফাইল চিত্র

যাত্রী বোঝাই ট্রেন। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বা বসে। হঠাৎ ট্রেনের জানলা, দরজা দিয়ে ছুটে আসতে থাকল ছোট-বড় পাথর। কারও মাথা ফাটল, কেউ বুকে হাত দিয়ে বসে পড়লেন। পাথর

ছোড়া থেকে রেহাই পাননি ট্রেন চালক, গার্ডরাও। এ ভাবেই বছর পনেরো আগে শিয়ালদহ-বনগাঁ এবং বসিরহাট শাখায় ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া নিয়ে একের পর এক ঘটনায় ঝক্কি পোহাতে হয়েছিল রেল ও পুলিশকে। সন্ধ্যা নামলেই ট্রেন লক্ষ্য করে লাইনের পাশ থেকে পাথর ছোড়ার প্রবণতা বাড়ত। এর জেরে জখমও হন অনেকে। সংবাদপত্রে তা নিয়ে বিস্তর লেখালেখির পরে প্রশাসনের টানা নজরদারিতে ধরা পড়ে কয়েক জন।

গত রবিবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ আপ শিয়ালদহ লোকাল বামনগাছি এবং দত্তপুকুর স্টেশনের মধ্যে পৌঁছয়। অন্ধকার সেই জায়গা থেকেই ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে দুষ্কৃতীরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা পাথর এসে লাগে সাত বছরের এক শিশুর মুখে। মেয়েটির মুখ ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার এক নাবালককে আটক করেছে রেল রক্ষী বাহিনী।

সম্প্রতি বামনগাছি ও দত্তপুকুর স্টেশনের মধ্যবর্তী ওই এলাকায় রেললাইন থেকে বোমাও উদ্ধার হয়। ওই শাখার এক ট্রেনচালক জানান, অন্ধকার হলেই ট্রেনের জানলা কিংবা দরজা খুলে যাতায়াত করতে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। আতঙ্কিত যাত্রীরাও। যখন তখন ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হচ্ছে। কয়েক দিন আগেই দুষ্কৃতীদের ছোড়া পাথরে আপ হাবরা লোকালের সামনের শক্ত কাচও ফেটে যায়। রবিবারের ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বছর আটেক আগে এলাকায় অসামাজিক কাজের প্রতিবাদ করায় কলেজ পড়ুয়া সৌরভ চৌধুরীকে খুন করা হয়েছিল। তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল দুই স্টেশনের মাঝের ওই এলাকা থেকেই। বাসিন্দাদের দাবি, সৌরভ হত্যাকাণ্ড নিয়ে হইচই হওয়ার পরে এলাকা শান্ত হয়েছিল। কিন্তু ফের অচেনা দুষ্কৃতীদের আনাগোনা, সন্ধ্যা হলেই রেললাইনের ধারে মদ্যপান, নেশার ঠেক বসছে। অভিযোগ, এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশকে জানিয়েও লাভ হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা রমেন দাস বলেন, ‘‘সন্ধ্যা নামলেই লাইনের ধারে গাঁজা, মদের ঠেক বসছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়েই খুন হয়েছিলেন সৌরভ। এর পরে বেশ কিছু বছর পরে আবার একই কাণ্ড শুরু হয়েছে। কেউ কিছু বললেই আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে।’’ ট্রেনের লাইন লাগোয়া এলাকাগুলি রেল পুলিশের এক্তিয়ারভুক্ত হলেও পাশ্ববর্তী এলাকা রাজ্য পুলিশ এবং স্থানীয় থানার দায়িত্বে থাকে। পুলিশ সূত্রের খবর, ফাঁকা, অন্ধকারে ডুবে থাকা দুই পুলিশের মধ্যবর্তী ওই সব জায়গায় ঠেক জমায় দুষ্কৃতীরা। রেল কলোনির কিশোরেরাও অনেক সময়ে ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে।

জড়িতদের ধরতে তল্লাশি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল এবং রাজ্য পুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘রেল লাইন সংলগ্ন ওই সব এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি, যারা এ সব অপরাধ করছে তাদের ধরা হবে।’’ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ট্রেনে পাথর ছোড়ার চেয়ে জঘন্য অপরাধ হতে পারে না। যে সব এলাকার এমন ঘটছে সেখানে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

Crime Stone Pelting Local Train RPF
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy