Advertisement
২৬ মার্চ ২০২৩
Aadhaar Cards

সারা রাত ঠান্ডায় লাইনে দাঁড়িয়ে ছোট্ট নাসরিনও

আধার কার্ড সংশোধনের জন্য রাত জেগে লাইন দিচ্ছেন মানুষ।

কাতর: ঠান্ডার মধ্যেই আধার কার্ড তৈরির অপেক্ষায়। ছবি: সুমন সাহা

কাতর: ঠান্ডার মধ্যেই আধার কার্ড তৈরির অপেক্ষায়। ছবি: সুমন সাহা

সমীরণ দাস
জয়নগর শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:২৬
Share: Save:

বছর পাঁচেকের নাসরিন রবিবার বিকেল থেকে মায়ের হাত ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঠান্ডার মধ্যে সে সারারাত মায়ের সঙ্গে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে ছিল। সোমবার তার নাম ডাকবেনই ডাকঘরের কাকুরা। আধার কার্ডের জন্য শিশু-বয়স্ক— সকলেই লাইনে দাঁড়িয়ে।

Advertisement

আধার কার্ড সংশোধনের জন্য রাত জেগে লাইন দিচ্ছেন মানুষ। বেশ কয়েক দিন ধরেই জয়নগর-মজিলপুর ডাকঘরে আধার কার্ড সংশোধন ও নতুন কার্ড তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু দিনে দশ জনের বেশি কার্ড সংশোধনের সুযোগ মিলছে না। তাই ঠান্ডা উপেক্ষা করেই রাতভর লাইন দিচ্ছেন মানুষ।

রবিবার রাত ১০টা নাগাদ ডাকঘর চত্বরের উল্টো দিকে একটি বন্ধ দোকানের ছাউনির নীচে অপেক্ষা করছিলেন জনা পনেরো লোক। শীতের রাতে একটি মাদুর পেতে গায়ে চাদর জড়িয়ে ঠায় বসে সকলে। জানালেন, সকালে ডাকঘর থেকে কুপন দেওয়া হয়। কাজ শুরু হয় দুপুরের পরে। ততক্ষণ পর্যন্ত এ ভাবেই অপেক্ষা করতে হবে। লাইনে যাঁরা একটু পিছনের দিকে রয়েছেন, তাঁরা ধরেই নিয়েছেন সোমবার তাঁদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে না। ওই অবস্থাতেই মঙ্গলবার পর্যন্ত অপেক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।

জয়নগরের কাকা পাড়ার বাসিন্দা হাসিনা শেখ বলেন, ‘‘আগে একাধিকবার সকালে এসে ফিরে গিয়েছি। কার্ড করাতে পারিনি। এ দিন তাই রাতেই এসে লাইন দিয়েছি। কিন্তু আমার আগে প্রায় ১১-১২ জন রয়েছেন। মনে হয় কাল হবে না। তবে লাইন ছাড়ব না। মঙ্গলবার পর্যন্ত অপেক্ষা করে কার্ড করিয়ে ফিরব।’’

Advertisement

ওই লাইনেই ছিল নাসরিন। ছোট্ট মেয়েটির কথায়, ‘‘বিকেল থেকে এসে লাইন দিয়েছি। লাইনে আমরাই প্রথম। কাল ডাকঘর খুললে আগে আমাদের কার্ড হবে।’’

নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সম্প্রতি ঝড় বইছে দেশ জুড়ে। পরিচয়পত্র ঠিকঠাক না থাকলে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে— এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে। তার জেরেই কার্ড সংশোধন কিংবা নতুন কার্ড তৈরির হিড়িক পড়েছে। বহড়ুর বাসিন্দা গৌর মাঝির কথায়, ‘‘নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে যা চলছে, তার জেরেই আধার সংশোধন করে রাখতে চাইছি। রাত জেগে লাইন দিয়েছি। সকালে কুপন নিয়ে বাড়ি যাব।’’

ডাকঘর থেকে দিনে মাত্র ১০টি করে কার্ডের কাজ করা হচ্ছে কেন, এই প্রশ্ন তুলছেন লাইনে দাঁড়ানো মানুষ। হাসিনার কথায়, ‘‘প্রতিদিন মাত্র দশটা করে কার্ডের কাজ হচ্ছে। আরও বেশি কাজ হলে অনেকের সুবিধা হত।’’

ডাকঘর সূত্রের খবর, এই কাজের জন্য তাঁদের বাড়তি কর্মী নেই। দিনের কাজ সেরে ডাকঘরের কর্মীরাই এই কাজ সারেন। এর ফলেই দশটার বেশি করা সম্ভব হয় না। পোস্ট মাস্টার বাবলু দাস বলেন, ‘‘ডাকঘরে সারা দিন নানা কাজ থাকে। সে সব সেরে ৩টে থেকে ৫টা পর্যন্ত আধার কার্ডের কাজ হয়।’’ বাবলু জানান, অন্য ডাকঘর ও ব্যাঙ্কেও এই পরিষেবা পাওয়ার কথা। তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, জয়নগর পোস্ট অফিস এবং স্থানীয় একটি ব্যাঙ্কের শাখা ছাড়া আর কোথাও এই কাজ হচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.