Advertisement
E-Paper

কর্মশালায় না এলে মিলবে না লাইসেন্স

গানের ক্লিপিং শেষ হতেই মাইক হাতে পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বললেন, ‘‘গান তো শুনলেন, কিন্তু দেখলেন কি, নায়ক-নায়িকা কারও মাথায় হেলমেট নেই।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪১

জায়েন্ট স্ক্রিনে ফুটে উঠল উত্তম-সুচিত্রার ছবি। সঙ্গে সেই ভুবন ভোলান গান। ‘এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হত তুমি বল তো...।’’

গানের ক্লিপিং শেষ হতেই মাইক হাতে পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বললেন, ‘‘গান তো শুনলেন, কিন্তু দেখলেন কি, নায়ক-নায়িকা কারও মাথায় হেলমেট নেই। এমনটা কিন্তু এ যুগে আর করা যাবে না।’’

ঝাঁ চকচকে মোটর বাইকে বসে হৃত্বিক রোশন। ব্যাকগ্রাউন্ডে ধুম-২ ছবির গান। ক্লিপিং দেখানো হলে ভেসে এল সাবধান বাণী, ‘‘হৃত্বিকে মজে যত ভাল বাইকই কিনুন না কেন, হেলমেট সঙ্গে নিতে ভুলবেন না।’’

পথ নিরাপত্তা নিয়ে বনগাঁয় শুক্রবার এক কর্মশালায় আলোচনা হল পথ নিরাপত্তা এমন নানা দিক নিয়ে। জানা গেল, এ ধরনের কর্মশালায় আসা এখন থেকে বাধ্যতামূলক করছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিবহণ দফতর।

নতুন গাড়ি কিনেছেন? ড্রাইভিং লাইসেন্স চান? অনেক দিন ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন, লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের সময় এসে গেল?

পরিবহণ দফতর আয়োজিত পথ নিরাপত্তা ও সচেতনতা নিয়ে কর্মশালায় হাজিরা না দিলে হাতে শুধু পেনসিলই পড়ে থাকবে। না তো পাবেন নতুন লাইসেন্স, না তা রিনিউ হবে।

সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিবহণ দফতরের তরফে পথ দূর্ঘটনা কমাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতা বাড়াতে কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বারাসত ও বসিরহাটে যা হয়েও গিয়েছে।

শুক্রবার কর্মশালা ছিল বনগাঁ শহরে। জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কর্মশালায় সব ধরনের যান চালক, গাড়ির মালিক এবং পরিবহণ শ্রমিককে আনা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকেও আসতে বলা হচ্ছে। সেখানে তাঁদের পথ নিরাপত্তা এবং গাড়ি চালানোর সময়ে কী ধরনের সচেতনতা জরুরি, তা নিয়ে তালিম দেওয়া হচ্ছে। প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন বড় দুর্ঘটনার ছবি কর্মশালায় দেখানো হচ্ছে। তার কারণ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে দেওয়া হচ্ছে শংসাপত্র। তাতে জেলাশাসকের স্বাক্ষর থাকছে।

জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের আধিকারিক সিদ্ধার্থ রায় বলেন, ‘‘কর্মশালা থেকে দেওয়া ওই প্রশিক্ষণ শংসাপত্র যাঁদের থাকবে না, তাঁদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে না। যাঁদের ইতিমধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে, তাঁদের লাইসেন্স নবীকরণ করা হবে না ভবিষ্যতে। সমস্ত জেলা জুড়ে ধারাবাহিক ভাবে এই কর্মশালা চলবে।’’

কী ভাবে সাধারণ যান চালক ও মালিকেরা কর্মশালার খবর পাবেন?

সিদ্ধার্থবাবু জানান, যে এলাকায় কর্মশালা হবে, সেখানকার গাড়ির ইউনিয়নগুলিকে আগেভাগে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ যান চালকদের জন্য প্রচার করা হচ্ছে এলাকায়।

কেন এমন পদক্ষেপ?

পরিবহণ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, যান চালকদের মধ্যে সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তাঁদের গাড়ি চালানোর দক্ষতা নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু সমস্যা দেখা গিয়েছে, গাড়ি চালানোর সময়ে অনেকে ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলেন না বলে। মোবাইলে কথা বলতে দেখা যায় অনেককে। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে।

বনগাঁর কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন প্রায় ১৬০০ গাড়ি চালক, মালিক-সহ সাধারণ মানুষ। উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। পরিবহণ দফতরের সরকারি সদস্য গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘এ দিন স্পষ্ট ভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, গাড়ি চালানোর সময়ে মোবাইলে কথা বলা যাবে না। ওভারলোডিং গাড়ির বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এ দিন কর্মশালা থেকে ১৬০০ জনকেই শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে।’

এআরটিও বিপ্লব প্রধান বলেন, ‘‘এ ধরনের কর্মশালার মাধ্যমে পথ দুর্ঘটনা কমবে বলে আমরা মনে করছি। কর্মশালা থেকে পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি পুস্তিকা পুলিশ-সহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’’

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, লাইসেন্স দেওয়ার সময়েই তো পথ নিরাপত্তা, আইন নিয়ে খুঁটিনাটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় চালকদের। তা হলে কী সেই ব্যবস্থায় কিছু ফাঁক থেকে যাচ্ছে বলেই এ ধরনের কর্মশালার আয়োজন জরুরি হয়ে পড়েছে?

পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক জানান, ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। যাঁরা নতুন লাইসেন্স পাচ্ছেন, তাঁরা রাস্তায় নেমে গাড়ি চালানোর আগে নতুন করে বিধিগুলি ঝালাই করে নিতে পারছেন। আর যাঁদের পুরনো লাইসেন্স, তাঁরাও নতুন করে বিষয়টি নিয়ে সচেতন হতে পারছেন।

Road safety Driving License Seminar Workshop
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy