সাহেবখালি নদীর পাড়ে রয়েছে নেবুখালি পার্ক। সেখানে দেখা গেল, তারস্বরে বক্স বাজিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে পিকনিক করতে আসা যুবকরা হুল্লোড় করছেন। পার্কের একদম পাশে থাকা একটি জলাশয়ের দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল, গোটা জলাশয় জুড়ে থার্মোকলের প্লেট পড়ে। প্লাস্টিকের বিভিন্ন বর্জ্যও রয়েছে যত্রতত্র। যেখানে এত মানুষের আনাগোনা, রান্না খাওয়া-দাওয়া চলে, সেখানে বর্জ্য ফেলার জন্য ডাস্টবিন চোখে পড়ল না।
বিরাটি থেকে এসেছিলেন সঞ্জিত জানা, তপন মজুমদার। বললেন, ‘‘এখানে আমাদের কেউ বলেনি, প্লাস্টিক বা থার্মোকলের জিনিস ব্যবহার করা যাবে না। তাই থার্মোকলের থালা ও প্লাস্টিকের গ্লাস ব্যবহার করছি। যদি এখানে কেউ বারণ করতেন, কলাপাতা বা শালপাতা পাওয়া যেত— তবে আমরা সে সব ব্যবহার করতাম।’’
এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, বিভিন্ন জায়গায় দোকান বা হোটেলের আশেপাশেও থার্মোকল, প্লাস্টিকের বর্জ্য জমে রয়েছে। এক হোটেলের মালিক লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘এখানে পাঁচটা হোটেল রয়েছে। বিভিন্ন দোকান রয়েছে। বর্জ্য ফেলার একটা নির্দিষ্ট পাত্র রাখতে বারবার ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু তা করা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে সামনের জলাশয়ে সব ফেলি।’’
সামশেরনগরেও থার্মোকলের প্লেট পড়ে থাকতে দেখা গেল। তা-ও আবার একেবারে সুন্দরবনের জঙ্গলের পাশ দিয়ে বয়ে চলা কালিন্দী নদীর চরে। জোয়ারের সময়ে সে সব নদীতে মেশার অপেক্ষা মাত্র। সামশেরনগরের বাসিন্দারা জানালেন, বিশেষ করে ক্ষতিকর বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ে পর্যটকদের হাত ধরে।
হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘কালীতলা পঞ্চায়েত ও বন দফতর যথেষ্ট তৎপর, জঙ্গল-লাগোয়া গ্রামগুলিতে যাতে থার্মোকল বা প্লাস্টিকের বর্জ্য যত্রতত্র পড়ে না থাকে সে ব্যাপারে। তবে যদি কোথাও এমনটা হয়ে থাকে, তবে তা যাতে আর না হয়— তা দেখা দরকার পঞ্চায়েতগুলির।’’ কিন্তু প্লাস্টিক বা থার্মোকল ব্যবহারের উপরে নিয়ন্ত্রণ আনতে ব্লক প্রশাসনের তরফে প্রচার কোথায়? হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অর্চনা মৃধা বলেন, ‘‘প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে দ্রুত ব্লক প্রশাসন প্রচার চালাবে। সেই সঙ্গে পিকনিক পার্টি যাতে থার্মোকল বা প্লাস্টিকের জিনিস সুন্দরবন এসে ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য কড়া পদক্ষেপ করা হবে কয়েক দিনের মধ্যেই।" হিঙ্গলগঞ্জের কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, ‘‘সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে শুধু সরকার নয়, সেই সঙ্গে স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। এ ভাবে চলতে থাকলে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য দ্রুত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে।’’ তাঁর মতে, সুন্দরবনকে রক্ষার স্বার্থে থার্মোকল ও প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদেরও এ বিষয়ে যুক্ত করা যেতে পারে।
তবে পিকনিকের মরসুম মাঝপথে। চলতি শীতে এ নিয়ে প্রশাসনের ঘুম ভাঙবে বলেই মনে করছেন না স্থানীয় মানুষজন।