উদ্বোধনের পরে কেটে গিয়েছে এক বছর। এখনও তৈরি হয়নি নিজস্ব ভবন। ভাড়া বাড়িতেই চলছে থানার কাজকর্ম। — নিজস্ব চিত্র।
এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য থানা হয়েছে। জানেনই না অনেক গ্রামবাসী।
যাঁরা জানেন, যাতায়াতের ঝক্কি সামলাতে তাঁদের অনেকেই থানামুখো হচ্ছে না।
পুলিশও শান্তিতে নেই। তাঁরা না পেয়েছেন থানার নিজস্ব ভবন। না পর্যাপ্ত গাড়ি, না জলযান। সমস্যা রয়েছে বিস্তর। এই অবস্থাতেই চলছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার তিন উপকূলবর্তী থানা— পারুলিয়া, গোবর্ধনপুর এবং সাগর। মুম্বইয়ের জঙ্গি হানার পরে উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য রাজ্যগুলিকে থানা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র। সেই নির্দেশমতো ২০১৪ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে পারুলিয়া কোস্টাল, পাথরপ্রতিমায় গোবর্ধনপুর কোস্টাল এবং সাগরের সাগর কোস্টাল থানার উদ্বোধন করেন। কিন্তু থানাগুলির পর্যাপ্ত পরিকাঠামো আজও গড়ে ওঠেনি।
সমস্যা যে রয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পঞ্চিম) অর্ণব বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘ওই থানাগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’
পারুলিয়া গ্রামের শরিফ মোল্লার বছর দশেকের ছেলে রফিকুল প্রতিবন্ধী। সে তার প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্র হারিয়ে ফেলায় দিন কয়েক আগে বাবার সঙ্গে ডায়মন্ড হারবার থানায় যায় ডায়েরি করতে। কিন্তু শরিফ সেখানে গিয়ে শোনেন, তাঁদের এলাকা আর ডায়মন্ড হারবার থানার এক্তিয়ারে নেই। গ্রাম চলে গিয়েছে পারুলিয়া কোস্টাল থানার এক্তিয়ারে। একই অভিজ্ঞতা হয়েছে গ্রামের আরও কয়েক জনের।
পারুলিয়া কোস্টাল থানাটি তৈরি হয়েছে পারুলিয়া ও কামারপোল— দু’টি পঞ্চায়েত নিয়ে। ওই দুই পঞ্চায়েতের জনসংখ্যা প্রায় ৪১ হাজার। থানা চলছে কালীচরণপুর গ্রামের একটি দোতলা ভাড়াবাড়িতে। সেখানে ওসি-সহ ১৬ জন পুলিশ কর্মীর বসার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু স্থানাভাবের সমস্যা হয় বলে জানাচ্ছেন পুলিশকর্মীরাই। রয়েছে পানীয় জল এবং শৌচাগারের সমস্যাও। পরিবহণ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় ওই থানা এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। কামারপোল পঞ্চায়েতে হিংচেবেড়িয়া, খামারকুর, পাটদহ, পীতম্বরা-সহ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা অটো। কিন্তু একটু রাত বাড়লেই আর অটো মেলে না। রাস্তার অবস্থাও তথৈবচ।
সাগর কোস্টাল থানাটির শুরু থেকে কাজ চলছে বঙ্গোপসাগর লাগোয়া ধবলাট গায়েনবাজারের একটি তিন তলা ভবনের ফ্ল্যাটে। ধবলাহাট ও সাগর— দু’টি পঞ্চায়েত নিয়ে ৭৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ওই কোস্টাল থানাটি তৈরি হয়। জনসংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। কিন্তু নতুন থানা হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন সাগর পঞ্চায়েতের বিষ্ণুপুর ও চণ্ডীপুর এলাকার বাসিন্দারা। আগে তাঁরা সরাসরি বাসে সাগর থানায় পৌঁছতে পারতেন। এখন কচুবেড়িয়া গঙ্গাসাগর রোডে মিশন মোড় বা ছয়েরঘেরি মোড়ে নেমে মোটরভ্যানে প্রায় দেড় ঘণ্টা পথ অতিক্রম করে তাঁদের পৌঁছতে হচ্ছে থানায়। সন্ধ্যার পর ওই রাস্তায় ঠিকমতো গাড়ি চলে না। সে কারণে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সময়মতো থানায় যেতে পারেন না অনেকেই।
একই অবস্থা গোবর্ধনপুর কোস্টাল থানারও। জি-প্লটের উত্তর সুরেন্দ্রগঞ্জ বাজারের পাশে একটি দোতলা ভাড়াবাড়িতে কাজ চলছে থানার। সেখানে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ হয়নি। এই গরমে তাঁদের প্রায় রাত জেগেই কাটাতে হচ্ছে বলে পুলিশকর্মীরা জানান। পানীয় জলের ব্যবস্থাও খারাপ। শ্রীধরনগর ও জি-প্লট, দু’টি পঞ্চায়েত নিয়ে ১৪২ বর্গকিলোমিটার থানার এলাকা। জনসংখ্যা প্রায় ৭৪ হাজার। যাতায়াতের সমস্যায় শ্রীধরনগরের বাসিন্দারা ইতিমধ্যে কয়েক দিন প্রয়োজনেও থানামুখো হননি। পরে সর্বদলীয় সভা ডেকে বিষয়টি মেটানো হয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই থানায় যেতে হলে কয়ালের ঘাট থেকে জগদ্দল নদী পার হয়ে সবুজ বাজারের ঘাটে নামতে হয়। সেখান থেকে মোটরভ্যানে থানায়। সন্ধ্যার পর নদী পারাপারে নৌকা মেলে না।
পুলিশও জানাচ্ছে, ওই থানা এলাকার মধ্যে পড়ে সুন্দরবনের লুথিয়ান ও ধুনচি জঙ্গল। ট্রলার দুর্ঘটনা, কুমিরের কামড় বা বাঘের হানা ঘটেই থাকে। তখন ঘটনাস্থলে পৌঁছনো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
তিন কোস্টাল থানাই মূলত জলপথ পাহারার জন্য গড়া হয়েছিল। কিন্তু থানাগুলি এখনও কোনও জলযান পায়নি। নদীতে টহল দেওয়ার জন্য তাঁদের ভাড়া করা জলযান নিয়ে বেরোতে হচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে কত দিন চলবে, সেই চিন্তাই ভাবাচ্ছে তিন থানার পুলিশকর্মীদের। গ্রামবাসীদেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy