মদনমোহন ও অর্চনা।
ঘরে ঢুকে এক বৃদ্ধ দম্পতিকে কুপিয়ে, গলার নলি কেটে খুন করে পালাল দুষ্কৃতীরা।
রবিবার রাতে অশোকনগরের দিঘড়া-মালিকবেরিয়া পঞ্চায়েতের হাট ন’পাড়া শ্মশান এলাকায় ওই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। নিহতেরা হলেন মদনমোহন নন্দী (৯০) এবং তাঁর স্ত্রী অর্চনা (৬৭)। ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও সোমবার রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি। খুনের কারণ নিয়ে ধন্দে রয়েছে পুলিশ। অন্ধকারে নিহতদের পরিবার, পড়শিরাও। খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার এবং এলাকায় নিরাপত্তার দাবিতে এ দিন দু’দফায় পথ অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, ‘‘খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষীদের খোঁজ চলছে। সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ না কি অন্য কোনও কারণে খুন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ মদনবাবুর দ্বিতীয় পক্ষের একমাত্র ছেলে দীপঙ্কর। তিনিই বাবা-মা’র সঙ্গে থাকতেন। মদনবাবুর প্রথম পক্ষের চার ছেলেমেয়ে অন্যত্র থাকেন। রবিবার সন্ধ্যায় দীপঙ্কর পাড়ার ক্লাবের টিভিতে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তিনি বাড়ি ফিরে দেখেন, ঘরের দরজা খোলা। ভিতরে আলো জ্বলছে। ঘরের মেঝেতে বাবা-মা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। ঘরের জিনিসপত্র লন্ডভন্ড। দৌড়ে গিয়ে তিনি ক্লাবে খবর দেন। আশপাশের লোকজনও চলে আসেন। খবর দেওয়া হয় অশোকনগর থানায়। পুলিশ এসে দেহ দু’টি উদ্ধার করে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানান।
ঘর থেকে কোনও জিনিস খোওয়া গিয়েছে কিনা, তা দীপঙ্কর বলতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘কিছুই বুঝতে পারছি না। বাবার কোনও শত্রু ছিল বলে তো জানতাম না। কারও সঙ্গে কোনও বিবাদও ছিল না। পুলিশ তদন্ত করে খুনের কিনারা করুক।’’ রবিবার সকালে বাবা-মাকে দেখতে এসেছিলেন মদনবাবুর প্রথম পক্ষের এক মেয়ে এবং তাঁর স্বামী। সোমবার তাঁরা ফের আসেন। তাঁরাও এই খুনের ঘটনায় স্তম্ভিত।
মদনবাবুর টালির চালের এক কামরার বাড়িটি নির্জন এলাকায়। আশপাশে বাড়িঘর নেই। তবে, বাড়ির কাছ দিয়ে পাকা রাস্তা গিয়েছে। শ্মশানের মন্দিরটির দেখাশোনা করতেন অর্চনাদেবীই। মন্দিরের চাবি তাঁর কাছেই থাকত। ভিটে বাড়ি-সহ মদনবাবুর প্রায় ১ বিঘে ৫ কাঠা জমি রয়েছে। গ্রামবাসীর কারও কারও সন্দেহ, চুরি-ছিনতাই করতে ঢুকে বাধা পেয়ে দুষ্কৃতীরা ওই দম্পতিকে খুন করেছে।
এ দিন তদন্তে গিয়ে পুলিশ মদনবাবুর বাড়ি লাগোয়া আমবাগান থেকে মদের বোতল এবং প্লাস্টিকের গ্লাস উদ্ধার করেছে। গ্রামের কয়েকজন জানান, ওই বাগানে বাইরে থেকে লোকজন এসে নেশা করে, জুয়া খেলে। অর্চনাদেবী কয়েকবার তার প্রতিবাদ করেছিলেন। সে কারণেও এই খুন হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। রাতে গ্রামে বাইরের লোকজনের আনাগোনা বাড়ে বলে এ দিন সকালে মহিলারা মদনবাবুদের বাড়ির কাছের রাস্তা অবরোধ করেন। পুলিশ গ্রা্মে টহল দেয় না বলে অভিযোগ তোলেন তাঁরা। পরে রাজীবপুর মোড়ে ফের একদফা অবরোধ হয়। মিনিট চল্লিশ পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy