Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশে অভিযোগ, তবু অধরা টিএমসিপি নেতা

টিএমসিপি নেতার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। কিন্তু শুক্রবার রাত পর্যন্ত পুলিশ তাঁকে ধরেনি। মন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়নি ওই ছাত্রনেতাকে। মাঝখান থেকে তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দল সামনে চলে এসেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোপালনগর শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০০:৪৫
Share: Save:

টিএমসিপি নেতার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। কিন্তু শুক্রবার রাত পর্যন্ত পুলিশ তাঁকে ধরেনি। মন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়নি ওই ছাত্রনেতাকে। মাঝখান থেকে তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দল সামনে চলে এসেছে।

ছাত্র ভর্তির টাকা কমানোর দাবি তুলে বৃহস্পতিবার গোপালনগরের ন’হাটা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল স্মৃতি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ কামালউদ্দিনকে তাঁর ঘর থেকে কার্যত বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ভাঙচুর করা হয় চেয়ার-টেবিল। রাতে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক মন্টু সরকার এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক শিবম ভৌমিক-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

গোপালনগর থানা সূত্রের খবর, কলেজের এক কর্মীকে দিয়ে অভিযোগপত্রটি থানায় পাঠিয়েছেন কামালউদ্দিন। তবে মন্টুর বিরুদ্ধে জামিনঅযোগ্য কোনও ধারায় মামলা রুজু করা হয়নি। এ দিন ফোনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘রাতে পরিচালন সমিতির সভাপতির সঙ্গে কথা বলেই লিখিত অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২৩ জুন সমিতির বৈঠক এই নিয়ে আলোচনা হবে।’’ উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত হচ্ছে।’’

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বা মূল অভিযুক্ত মন্টু— কেউই এ দিন কলেজে আসেননি। তবে মন্টুর অনুগামীরা তাঁর এবং শিবমের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যে মামলা’ প্রত্যাহারের দাবিতে মিছিল করেন। নানা দুর্নীতির অভিযোগও তোলা হয়েছে। পোস্টার সেঁটে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ‘ইউজিসির টাকায় কেনা রড কোথায় গেল? বই কেনার কয়েক লক্ষ টাকা কোথায় গেল?’’ কলেজে বিধায়ক ও সাংসদ তহবিলের টাকায় তৈরি নতুন ভবন ভেঙে পড়ছে কেন, তার জবাবও চাওয়া হয়েছে। ‘কামালউদ্দিন দূর হঠো’ বলে যেমন পোস্টার পড়েছে, পরিচালন সমিতির সদস্য তথা গোপালনগর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অলোক নন্দীকে ‘চোর’ বলা হয়েছে।

কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অনেক দিন ধরেই নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আসছেন পড়ুয়াদের একাংশ। আন্দোলনও হয়েছে। মন্টুর অনুগামীদের অভিযোগ, ল্যাপটপ ও বই কেনা, নতুন ভবন তৈরি এবং তফসিলি জাতি-জনজাতির পড়ুয়াদের বাড়তি ক্লাসের টাকা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ছাত্র ভর্তির ফি কমানো ছাড়াও দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে। সদুত্তর দিতে না পেরে তিনি ‘নাটক’ করে চলে গিয়েছেন। মন্টু ও অন্যদের নামে মামলা প্রত্যাহার করা না হলে আমরণ অনশন শুরু হবে বলেও তাঁরা হুমকি দেন।

দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে কামালউদ্দিনের বক্তব্য, ‘‘জিনিসপত্র যা কিছু কেনা হয়েছে, সবই ক্রয় উপ-সমিতির মাধ্যমে। নতুন ভবন তৈরির জন্য একটি ভবন উপ-সমিতি তৈরি করা হয়েছিল। তারা দরপত্র চেয়ে নিয়ম মেনে ভবন তৈরি করেছে। এই সব বিষয় নিয়েই ২৩ জুন পরিচালন সমিতির বৈঠকে আলোচনা হবে।’’ অলোকবাবুর দাবি, ‘‘দুর্নীতির এই সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে পিঠ বাঁচাতে ওরা এখন এগুলো সামনে আনতে চাইছে।’’ পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক সুরজিৎ বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘ল্যাপটপ বা বই কেনা সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে তদন্ত কমিটি তৈরি হয়েছে। তারা এখনও রিপোর্ট না দিলেও দুর্নীতির প্রমাণ মেলেনি বলে জানিয়েছে। ভবনের বিষয়টি পরিচালন সমিতির বৈঠকে আলোচনা করব।’’

বৃহস্পতিবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নিগ্রহের ঘটনার পরেই জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছিলেন, মন্টু সরকারকে যাতে বহিষ্কার করা হয়, তার জন্য টিএমসিপির রাজ্য নেতৃত্বের কাছে তিনি সুপারিশ করবেন। এ দিন পর্যন্ত মন্টুর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি জয়া দত্ত বলেন, ‘‘রাজ্য সভাপতির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উনি জানিয়েছেন, কলেজে গিয়ে তদন্ত করে ওঁকে রিপোর্ট দিতে। শনিবার আমি ওই কলেজে যাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police gopal nagar college trinamool tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE