E-Paper

কোথাও ভেঙেছে সিলিং ফ্যান, কোথাও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা 

ছোট ছোট শিশুদের যাতায়াত অঙ্গনওয়াড়িতে। স্বাস্থ্য-শিক্ষার একেবারে প্রাথমিক ভিত্তি তৈরি হয় সেখানেই। অথচ, কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামোয় দৈন্যতা স্পষ্ট।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:২৪
Ceiling Fan collapsed at a Anganwadi center of Habra

ভেঙে পড়েছিল এই পাখাটি। 

মায়ের সঙ্গে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গিয়েছিল ৩ বছরের শিশু। ক্লাসঘরে ঢুকতেই সিলিং পাখা ভেঙে পড়ে তাদের গায়ের কাছে। মা মিতু ঘোষের ঘাড়ে ও কপালে আঘাত লাগে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে কপালে তিনটি সেলাই পড়েছে। বিউটি নামে শিশুটিও মাথায় আঘাত পায়। শুক্রবার সকালে হাবড়া পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ডরহথুবা এলাকায় একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ওই ঘটনার পরে এলাকার অন্যান্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির বেহাল পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবকেরা।

ডহরথুবার ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, একটি ঘর ভাড়া নিয়ে চলছে কাজকর্ম। ২০ ফুট লম্বা, ১০ ফুট চওড়া ঘরটি পুরোটাই টিনের। এই কেন্দ্রে ২৫-৩০ জন শিশুরা পড়াশোনা করতে আসে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ভেঙে পড়া পাখাটি বাঁশের আড়ার সঙ্গে বাঁধা ছিল বিপজ্জনক ভাবে। ঘটনার পরে অভিভাবকেরা পাকা ক্লাস রুমের দাবি তুলেছেন। তাদের কথায়, ‘‘পাকা ঘর হলে পাখা এ ভাবে খুলে পড়ত না। শিশুদের পড়াশোনা করতে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়।’’ মিতু বলেন, ‘‘ওই দিনের ঘটনায় মেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছে। বিকল্প উপায় নেই। তাই মেয়েকে বুঝিয়ে ফের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবড়া শহর এলাকায় ১৯৮৫ সাল থেকে এখানে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলছে। বর্তমানে ১১০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থাকলেও একটি কেন্দ্রেরও নিজস্ব ভবন নেই। বেশিরভাগই চলছে বাড়ি ভাড়া করে। অনেক ঘরই কাঁচা। ক্লাব ঘরেও কিছু কেন্দ্র চলছে। সব কেন্দ্রে শৌচালয় নেই। শিশুরা রাস্তার ধারেই শৌচকর্ম করতে বাধ্য হয়। শিক্ষিকাদের পড়শিদের বাড়ি যেতে হয়। কেন্দ্রগুলিতে শিক্ষকের সংখ্যাও অপর্যাপ্ত। ১১০টি কেন্দ্রের জন্য শিক্ষিকার সংখ্যা ৮৬ জন। সব কেন্দ্রে স্থায়ী শিক্ষিকাও নেই। কোনও কোনও শিক্ষিকা একাধিক অঙ্গনওয়াড়িতে ক্লাস করান। অন্য দিকে, বেশ কিছু বাড়ির মালিকেরা দাবি করেছেন, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য নিয়মিত ভাড়া পান না তাঁরা।

হাবড়ার আয়রা এলাকায় একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আছে। অভিভাবকেরা জানালেন, সেখানে রাঁধুনি অপর্ণা অধিকারী ক্লাস করান। এটিও ভাড়া বাড়িতে চলছে। দু’টি ঘর অবশ্য পাকা। ক্লাসে ঢুকে দেখা গেল, আড়ার সঙ্গে বিপজ্জনক ভাবে কাপড়ের দড়ি দিয়ে সিলিং পাখা বাঁধা। সে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এক পড়ুয়ার মা বলেন, ‘‘ক্লাসে দড়ি দিয়ে ফ্যান বাঁধা রয়েছে। ওই ফ্যান খুলে পড়লে বড় বিপদ ঘটতে পারে। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে শিশুরা ক্লাস করছে।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবড়া শহর এলাকায় ৪ জন সুপারভাইজার থাকার কথা। আছেন মাত্র ১ জন। তিনি আবার চলতি মাসেই অবসর নেবেন। সুপারভাইজারদের কাজ কেন্দ্রগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করা। কর্মীর অভাবে সে কাজ ঠিকঠাক হয় না বলে অভিযোগ। হাবড়া শহরের সিডিপিও তাপস বিশ্বাস বলেন, ‘‘দু’টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রকে প্রাথমিক স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। চেষ্টা করা হচ্ছে অন্যান্য কেন্দ্রগুলিকে কাছাকাছি স্কুল ঘরে নিয়ে যেতে। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকির আশঙ্কা কমানো যাবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Habra Anganwadi center poor condition

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy