না তো বোর্ড উল্টে যেতে পারে। না বড়সড় রাজনৈতিক বদলের ইঙ্গিত দিতে পারে একটি মাত্র ওয়ার্ডে উপনির্বাচনের ফলাফল। এমনিতে শাসকদলের জেতা ওয়ার্ডেই ভোট। সচরাচর এমন ভোট নিস্তরঙ্গ কাটে। কিন্তু রবিবার বনগাঁ পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে যে পরিমাণ গোলমাল ছড়াল, যত বহিরাগতদের দাপাদাপি দেখলেন ওয়ার্ডের মানুষ— তাতে তাঁরা বিস্মিত। উপনির্বাচনে এমন উত্তেজনার পরিবেশ মনে করতে পারছেন না কেউ। আগামী বছর রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। অনেকের মতে, এ দিনের ভোটের পরিবেশ আদতে বুঝিয়ে দিচ্ছে, কী রক্তগঙ্গা বইতে পারে আসন্ন সেই ভোটে।
এদিন গোলমালের ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিরোধীদের অভিযোগ শাসকদলের বিরুদ্ধে। তাদের বক্তব্য, দুর্নীতির একের পর এক অভিযোগে ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছে ঘাসফুল শিবির। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির চাপে কার্যত দিশেহারা অবস্থা সরকারেরও। আমজনতা উঠতে বসতে কটাক্ষে বিঁধছে সরকার তথা দলকে। সোশ্যাল মিডিয়া ভরে গিয়েছে ‘চোর চোর’ ধ্বনিতে। এই পরিস্থিতিতে মানুষের উপরে আর ভরসা রাখতে পারছে না তৃণমূল। বলপ্রয়োগ করেই ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া তারা। ইতিমধ্যে অন্তরালে থেকে ছ’মাসের মধ্যে ‘উন্নততর তৃণমূল’ গড়ার ডাক দিচ্ছে কারা, তা নিয়ে শাসক শিবিরের মধ্যেও কৌতূহল তৈরি হয়েছে। জল কোন দিকে গড়ায়, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে দলের অন্দরেও।
বনগাঁয় আবার তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইতিহাসও বহু পুরনো। গতবারই দলের প্রার্থী দিলীপ দাসকে পছন্দ না হওয়ায় নির্দলে দাঁড়িয়ে যান তৃণমূলেরই প্রাক্তন কাউন্সিলর কবিতা বালা। এ বার তৃণমূল প্রার্থী পাপাই রাহার নাম ঘোষণা করা হয়েছে একেবারে শেষ মুহূর্তে, মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় ফুরোনোর ঠিক আগে। পাপাইকে নিয়ে একাংশের কথা দলের নেতৃত্বের অজানা ছিল না। কেউ যাতে ফের নির্দলের টিকিটে দাঁড়িয়ে না পড়েন, সে কারণেই নেতৃত্ব এই কৌশল নিয়েছিলেন বলে মনে করছে দলেরই একাংশ।
পাপাইকে আগে তৃণমূল করতে দেখেননি ওয়ার্ডের মানুষ। বরং বিরোধী দলের সঙ্গেই তাঁর ঘনিষ্ঠতা সুবিদিত। এ বার প্রার্থী হওয়ার দাবিদার অনেকেই ছিলেন। বিরোধীদের দাবি, অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। সে জন্যই গণতান্ত্রিক পদ্ধতির উপরে ভরসা না রেখে ছাপ্পার আশ্রয় নিতে হল।
সিপিএমের বনগাঁ শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুমিত কর বলেন, ‘‘ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। আমাদের প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টকে মারধর করা হয়েছে। অবাধে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে তৃণমূল। উল্টে পুলিশ আমাদের এক কর্মীকে আটক করে নিয়ে গিয়েছে।’’ কংগ্রেস প্রার্থী প্রভাস পালকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রভাস বলেন, ‘‘তৃণমূল প্রার্থী নিজে আমাকে বলেছেন, বুথ থেকে চলে যাও। বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট করা হয়েছে। তৃণমূল গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। পুলিশের সাহায্য চেয়েও পাইনি।’’ বিজেপি প্রার্থী অরূপকুমার পাল নিজে আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ। মারধর খেয়েছেন বিজেপি বিধায়ক-সহ নেতা-কর্মীরা। বিজেপির বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন মজুমদার বলেন, ‘‘শনিবার রাত থেকে তৃণমূল বহিরাগতদের এনে সন্ত্রাস চালিয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনকে বার বার বলা সত্ত্বেও তারা ছিল নির্বিকার। আমাদের প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট-সহ নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। পুলিশকে বলার পরেও ছাপ্পা বন্ধ হয়নি।’’ তৃণমূল অবশ্য বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে। তৃণমূলের দাবি, শনিবার রাত থেকে বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার তৃণমূল কর্মীদের ফোন করে হুমকি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। রবিবার সকালে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বহিরাগতদের সাহায্যে বুথ দখল করার চেষ্টা করেছেন স্বপন। স্থানীয় মানুষ তা প্রতিরোধ করেন। এই অভিযোগ মানেনি বিজেপি।
ছাপ্পা-সন্ত্রাসের অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘এ দিনের ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কেউ ভোট দিতে এসে ফিরে যাননি। উৎসবের পরিবেশ ছিল। বিরোধীরা হার নিশ্চিত বুঝতে পেরে পোলিং এজেন্ট তুলে নিয়ে নাটক করেছে।’’ পুলিশ-প্রশাসনেরও দাবি, ভোট মিটেছে শান্তিতেই।
গোষ্ঠীকোন্দলের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিশ্বজিতের দাবি, ‘‘বিরোধীরা হেরে যাবে বুঝে এ সব অযৌক্তিক কথাবার্তা বলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy