এমনই দশা পুলিশ ফাঁড়ির। নিজস্ব চিত্র।
ঘরের মাথায় শাখাপ্রশাখা মেলেছে বট-অশ্বত্থ।
ফাটল দিয়ে মুখ বাড়ায় তক্ষক।
অল্প বৃষ্টিতেই সেই ফাটল দিয়ে জল পড়ে ঘরে। তখন বিছানা-মাদুর নিয়ে বাসিন্দাদের ঘর ছেড়ে বারান্দায় বেরোতে হয়।
এটাই বসিরহাট মহকুমার সবচেয়ে বড় পুলিশ ফাঁড়ির বর্তমান হাল। ফাঁড়িটি অবশ্য চলে ভাড়াবাড়িতে। এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব যাদের হাতে, সেই পুলিশকর্মীরাই এমন একটি বাড়িতে থাকতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আগেই তাঁরা বাড়িটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন দফতরের কর্তাদের কাছে। কিন্তু বছরের পর বছর বাড়িটির অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকায় চিন্তিত পুলিশকর্মীরা। সেখানকার এক পুলিশকর্মীর আক্ষেপ, ‘‘নিজেরাই যখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, তখন কী ভাবে যে এলাকাবাসীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব মাঝেমধ্যে সেটাই ভেবে পাই না।’’
ওই ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা সাব-ইন্সপেক্টর মানিকচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘ছাদ থেকে জল পড়ে বলে থাকার অসুবিধা-সহ বাড়ির হাল সম্পর্কে পদস্থ কর্তাদের লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।’’ বসিরহাট থানার আইসি গৌতম মিত্র জানান, পুরনো বাড়ি। সংস্কার জরুরি। প্রশাসনিক ভাবে যাতে দ্রুত মেরামতির কাজ শুরু যায় তার চেষ্টা চলছে।
উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) গৌবর লাল বলেন, ‘‘ওই ফাঁড়ি সংস্কারের ব্যাপারে সমস্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বসিরহাট মহকুমায় ৯টি থানা এলাকায় কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। তার মধ্যে বসিরহাট পুর এলাকার এস এন মজুমদার রোডের ওই ফাঁড়িটিই সবচেয়ে বড়। মূল ভবনের প্রায় দোতলা সমান উচুঁ একটি বড় ঘরই পুলিশকর্মীদের থাকার জায়গা। সেখানে দুই অফিসার, কনস্টেবল, হোমগার্ড, গাড়ির চালক-সহ ৩০-৩৫ জন থাকেন। বারান্দার দু’পাশের তিনটি ঘরের একটিতে পুলিশকর্মীদের অস্ত্র থাকে, একটিতে অফিস চলে এবং আর একটিতে গাড়ির যন্ত্রাংশ, তেল, রং-সহ নানা জিনিসপত্র রাখা হয়। সব ঘরগুলিই প্রায় একই রকম বেহাল। সব ক’টি ঘরেরই ছাদ ফেটে জল পড়ে। তিনটি ঘরে এ জন্য পলিথিন টাঙানো হলেও পুলিশকর্মীদের থাকার বড় ঘরটির ছাদ অনেকটা উঁচু হওয়ায় সেই ব্যবস্থা করা যায় না। ফলে, বৃষ্টিতে মেঝে ভাসে। তখন বিছানা, মাদুর, বালিশ নিয়ে বারান্দায় আশ্রয় নিতে হয় পুলিশকর্মীদের।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৩২ সালে স্থানীয় দালাল পরিবারের সদস্য সারদাপ্রসাদ ওই বাড়িটি তৈরি করান। উদ্বোধন করেছিলেন বসিরহাটের তৎকালীন মহকুমাশাসক এম সি মজুমদার। সেখানে এক সময়ে হরিসভা বসত। নাম সংকীর্তন শুনতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসতেন। পরে ওই বাড়িতে বসিরহাট মূল ডাকঘরের কাজ শুরু হয়। প্রায় ৪০ বছর ধরে অবশ্য ওই বাড়িতে ফাঁড়িই চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই যাকে ‘সাঁইপালা পুলিশ চৌকি’ বা ‘পুলিশ লাইন’ বলেও চেনেন।
বসিরহাট মহকুমার থানাগুলির অনেক গাড়িও ওই ফাঁড়ির চৌহদ্দিতে থাকে। অথচ, এমন একটি ব্যস্ত ফাঁড়ির পুলিশকর্মীদের দিন কাটে আতঙ্কে। ফাঁড়ির বাথরুম, রান্নাঘরের অবস্থাও তথৈবচ। তা দেখিয়ে এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘ঘরের মাথায় বট-অশ্বত্থ বড় হচ্ছে। বিষাক্ত সাপ মাঝেমধ্যেই ঘরে ঘোরে। দেওয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে। কড়ি-বরগার ছাদ থেকে খসে পড়ে সুরকির চাঁই। তাই অনেকেই মাথা বাঁচাতে খাটিয়ার উপর চাদর টানিয়ে রাখি।’’
পুলিশকর্মীরা যখন বাড়িটি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন, তখন কিছুটা ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ বাড়িটি ‘হেরিটেজ’ ঘোষণারও দাবি তুলেছেন। দালাল পরিবারের বর্তমান সদস্য বৈদ্যনাথ দালালও মেনে নিয়েছেন বাড়িটি সংস্কার জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy