Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
জলপথে বাংলাদেশ যাতায়াতও হবে এক দিন, দাবি মন্ত্রীর
Ichamati River

পলি তুলে সংস্কার  শুরু ইছামতী নদীর 

এ দিন শান্তনু জানিয়েছেন, স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়া থেকে গাইাঘাটার কালাঞ্চি পর্যন্ত ২৩.৮১ কিলোমিটার নদীবক্ষে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে পলি তুলে নদী সংস্কারের কাজ করা হবে।

Ichamati river

বেড়িগোপালপুর থেকে তেঁতুলিয়ার দিকে কচুরিপানামুক্ত ইছামতী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট, বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৪৮
Share: Save:

দীর্ঘ দিন অপেক্ষার পরে আবার ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পলি তোলা শুরু হল ইছামতী থেকে।

বুধবার দুপুরে স্বরূপনগরের তেতুঁলিয়া শ্মশান এলাকায় নদী সংস্কারের কাজের সূচনা করেন বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় বন্দর, জাহাজ ও জলপথ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। তার আগে তিনি শ্মশানের কালীমন্দিরে পুজো দেন। সংস্কারের কাজ করছে, কেন্দ্রের ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ় অথরিটি (আইডব্লুআই)। শান্তনু ছাড়াও এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইডব্লুআই-এর চেয়ারম্যান সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়।

সংস্কারের অভাবে অনেক দিন হল আন্তর্জাতিক নদীটি স্রোত, নাব্যতা হারিয়ে মৃতপ্রায়। বনগাঁ ও বসিরহাট মহকুমার একাংশে বছরের বেশিরভাগ সময়ে নদী কচুরিপানায় ভরা থাকে। নদীর এই অবস্থার ফলে জীবিকা হারিয়েছেন বহু মানুষ। কচুরিপানার কারণে স্নান করাও প্রায় বন্ধ। নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি আছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। সেই দাবি অবশ্য আজও পূরণ হয়নি।

এ দিন শান্তনু জানিয়েছেন, স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়া থেকে গাইাঘাটার কালাঞ্চি পর্যন্ত ২৩.৮১ কিলোমিটার নদীবক্ষে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে পলি তুলে নদী সংস্কারের কাজ করা হবে। সেই কাজের সূচনা হয়েছে এ দিন। এই কাজে খরচ ধরা হয়েছে আনুমানিক ৫ কোটি টাকা। নদীবক্ষ থেকে দেড় মিটার থেকে পৌনে ২ মিটার পর্যন্ত গভীর করে পলি তোলা হবে।

কয়েক মাস আগে এই ২৩.৮১ কিলেমিটার নদীপথ পরিষ্কার করার কাজের সূচনা করেছিলেন শান্তনু। তাঁর দাবি, প্রথম পর্যায়ে নদী কচুরিপানা ও শ্যাওলামুক্ত করা হয়েছে। এ বার পলি তোলা হচ্ছে। ওই কাজের সূচনা করা হয়েছিল গাইঘাটার বেড়ি গোপালপুর এলাকা থেকে। বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, কচুরিপানা তুলে নদী সাফ হয়েছে। জল দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর আশা, অদূর ভবিষ্যতে ইছামতী নদীর সংস্কারের কাজ শেষ হলে জলপথে বাংলাদেশের যশোর বড়িশাল, খুলনা-সহ বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। জলপথে মানুষ কলকাতা থেকে বাংলাদেশে যাতায়াত করতে পারবেন। এতে পরিবহণ খরচ কমবে। ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। সর্বোপরি, মৎস্যজীবীরা জীবিকা ফিরে পাবেন। অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবেন। নদী সংস্কারের পাশাপাশি নদীর উপরে কয়েকটি সেতু তৈরি করা হবে বলেও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন।

বনগাঁ ও বসিরহাট মহকুমার বাসিন্দারা জানান, অতীতে বিক্ষিপ্ত ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্যের পক্ষ থেকে কয়েক বার পলি তুলে নদী সংস্কারের কাজ হলেও ইছামতীর হাল ফেরেনি। খাতায়-কলমে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের পাবাখালি এলাকায় চূর্ণী ও মাথাভাঙা নদীর সংযোগস্থলে মাথাভাঙা নদী থেকে ইছামতীর সৃষ্টি। যদিও নদীর এখন কার্যত কোনও উৎসমুখ নেই। অগভীর নদীর কারণে ভারী বৃষ্টি হলে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।

ব্রিটিশ আমলে পাবাখালিতে ইছামতী নদীর উপরে একটি রেলব্রিজ তৈরি হয়েছিল। যুক্তিবাদী মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, "১৯১০ সাল নাগাদ রেলব্রিজের সংস্কার কাজ করার সময়ে সেখানে বড়বড় বোল্ডার ফেলা হয়েছিল। যা আর তোলা হয়নি। জলের চাপ সামলাতে দেওয়া হয়েছিল গার্ডওয়াল। এর ফলে ধীরে ধীরে নদীবক্ষে পলি জমতে থাকে। গাইঘাটায় নদী সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু আমাদের দাবি, নদীর উৎসমুখ সংস্কার করতে হবে।"

বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাম আমলে বেড়ি গোপালপুর এলাকায় নদী সংস্কার করা হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, পলি নদীর পাড়ে রাখা হয়। বৃষ্টিতে সেই পলি ফের নদীতে মিশে গিয়েছিল। বুধবার সংস্কারে কাজ দেখতে এসেছিলেন বহু গ্রামবাসী। তাঁরা খুশি। কয়েক জন জানালেন, নদী মরে যাওয়ায় চাষাবাদ প্রায় বন্ধ। নদী সংস্কার হলে ফের চাষাবাদ শুরু হতে পারে।

নদী সংস্কার নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, "গত পাঁচ বছর শান্তনুকে এখানে দেখা যায়নি। এখন মানুষের চোখে ধুলো দিতে নদী সংস্কারের নাটক করছেন। বিক্ষিপ্ত ভাবে নদী সংস্কার করে মানুষের কোনও কাজে আসবে না। নদীর উৎসমুখ সংস্কার করতে হবে।"

নদীর বাকি অংশের সংস্কারের কী হবে?

শান্তনু বলেন, ‘‘ইছামতী সংস্কারে রাজ্য সরকারের ভূমিকা আছে। রাজ্য যদি আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে, তা হলে বাকি অংশের সংস্কারও আমরা করে দিতে পারব। তার আগে নদীর বাকি অংশ আইডব্লুআই-এর অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। সেটা রাজ্য সরকার আমাদের দিন। আমরা সংস্কার করব।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ichamati River Bangaon Basirhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE