এই পড়ে কী ওই পড়ে!
অশ্বত্থ, জিউলি, ডুমুরগাছের ঝোপে মুখ ঢেকেছে দেওয়াল। মাথার উপর থেকে সিমেন্টের চাঙড় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা— তবু এই পরিস্থিতিতেই চলছে শিশুদের স্কুল। বৃষ্টি হলে জল পড়বে বলাইবাহুল্য। ঝোপঝাড় থেকে বিষাক্ত পোকামাকড়, সাপ ঢোকাও অস্বাভাবিক নয়।
দরজা-জানালা ভাঙা এ হেন বাড়িতে একটি নয়, চলছে দু’ দু’টি স্কুল। সকালে শিশুশিক্ষা প্রকল্পের স্কুল (এসএসপি)। দুপুরে আইসিডিএসের পড়াশোনা।
বাদুড়িয়া পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড, রুদ্রপুরে শিবমন্দির পাড়ায় জজ সাহেবের প্রাচীন বাড়িতেই চলছে এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি।
শিশুশিক্ষা প্রকল্পের প্রধান শিক্ষিকা (শিক্ষা সহায়িকা) শিখা দাস বলেন, ‘‘পুরসভা পরিচালিত জরাজীর্ণ এই স্কুলটিতে সকালে ৮০ জন পড়ুয়া আর ৪ জন শিক্ষিকাকে নিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতেই কাজ চালাতে হয়। বিপদের ঝুঁককি তো আছেই। প্রায়ই ছাদের প্লাস্টারের চাঙড় খসে পড়ে। স্কুলের ছাদে গাছগাছালি জন্মেছে। সাপখোপ ঢোকে।’’ বিপজ্জনক বাড়ির বিষয়টি পুরপ্রধানকে জানানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাদুড়িয়ার পুরপ্রধান তুষার সিংহ বলেন, ‘‘২০০২ সালে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের শিশুশিক্ষা প্রকল্পে যৌথ উদ্যোগে কারও বাড়িতে, ক্লাবে বা পরিত্যক্ত ঘরে শিশুদের নিয়ে ক্লাস শুরু হয়েছিল। শিক্ষিকাদের বেতন ছাড়া সরকারি ভাবে কোনও বরাদ্দ আসে না। তবে পুরসভার উদ্যোগে পড়াশোনার সরঞ্জাম দেওয়া হয়।’’
পুরপ্রধান জানান, বাদুড়িয়া পুরসভার অধীনে এমন ২০টি স্কুল চলছে। তবে রুদ্রুপুরের স্কুলবাড়ির যে ভগ্নদশা, সে খবর উঠেছে পুরপ্রধানের কানে। পুরসভার সীমিত সাধ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
পুর প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রুদ্রপুর বাজার এলাকার শিবমন্দির পাড়ায় দীর্ঘ দিন ধরে ‘জজ সাহেবের বাড়ি’ (শৈলেন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি) বলে পরিচিত ওই বাড়িতে শিশুদের স্কুলটি চলছে। এলাকাবাসীর দাবি, শিক্ষিকাদের সুখ্যাতি আছে ভাল পড়ানোর জন্য। তাই বিপদ জেনেও অভিভাবকেরা পাঠান ছেলেমেয়েদের।
দিপালী বালা নামে এক অভিবাবক বলেন, ‘‘একে তো ভাঙাচোরা বাড়ি, তাতে আবার পরিবেশের জন্য মশা-মাছি-সাপ-পোকামাকড়ের ভয় আছে। বাড়ি ভেঙে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তো রয়েছেই। তবুও ভাল পড়াশোনার কথা ভেবে সন্তানদের স্কুলে পাঠাই।’’ ভবনের সংস্কার করা দরকার বলে মনে করেন তিনি। না বলে স্কুল অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত বলেও অভিবাবকদের অনেকেরই মত।
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বহু বছরের পুরনো কড়ি-বরগার ছাদের বাড়িটির হতশ্রী দশা। দু’টি মাত্র ঘর। পলেস্তারা খসা ছাদ। সামনের বারান্দার উপরে কোনও রকমে টিন দিয়ে আটকানো।
ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা পুরসভার বাস্তুকার সুভাষ চৌধুরী বলেন, ‘‘বাড়িটির অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ। দ্রুত সংস্কার জরুরি।’’ স্কুলের শিক্ষিকা মিনা মণ্ডল, মঞ্জুলা ঘোষ, আওয়ারা বেগমের কথায়, ‘‘স্কুলবাড়িটি একেবারেই বেহাল। বর্ষার দিনে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তেই পারে। ঝ়ড় হলেও ভয় ভয় করে। পুর কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে বিষয়টি।’’
কিন্তু ছোট ছোট ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি যেখানে জড়িয়ে, সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে আর কত গড়িমসি চলবে, প্রশ্ন থেকে যায় সেটাই।