নিহত ছাত্রের বাড়িতে মৌসুমী কয়াল ও টুম্পা কয়াল। নিজস্ব চিত্র।
আইটিআই ছাত্র কৌশিক পুরকাইতকে পিটিয়ে মারার অভিযোগে এ পর্যন্ত পুলিশ ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদের গ্রেফতার এবং তৃণমূল নেতা তাপস মল্লিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রবিবার ডায়মন্ড হারবারের হরিণডাঙার পশ্চিমপাড়ায় একটি মৌন মিছিল করেন আমরা আক্রান্তের সদস্যরা।
এই মিছিলে পা মেলান সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, আমরা আক্রান্তের অম্বিকেশ মহাপাত্র, কামদুনি কাণ্ডের প্রতিবাদী মুখ মৌসুমী কয়াল ও টুম্পা কয়াল, শিল্পী সমীর আইচ, অভিনেত্রী পাপিয়া অধিকারী। মিছিলে হাঁটেন কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র, এলাকার সিপিএম নেতৃত্ব এবং নিহত ছাত্রের বাবা কার্তিক পুরকাইত। শুধু সুবিচারের দাবিতে ওই মিছিলে মানুষ হেঁটেছেন বলে জানান ওমপ্রকাশবাবু। প্রায় চার কিলোমিটার পদযাত্রার পর ডায়মন্ড হারবার বাসস্ট্যান্ডে একটি পথসভাও করা হয়।
পূর্ব বাহাদূরপুরে কৌশিকের মাসির বাড়িতেও মিছিলটি গিয়েছিল। নিহত ছাত্রের মাসতুতো ভাই সুমন হালদার আমরা আক্রান্তের সদস্যদের বলেন, ‘‘আমাদের ফোনে নানারকম ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা লড়ব।’’ এ দিন মন্দিরবাজারের গুমকি গ্রামে ওই ছাত্রের বাড়িতে যান আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চৌধুরী। জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি জানার পর এই পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। এখনও পর্যন্ত সবাইকে ধরতে পারেনি পুলিশ। যত দেরি করে পুলিশ আসামিদের ধরবে আইনি জটিলতা তত বাড়বে।’’
১০মে মন্দিরবাজারের গুমকি গ্রামের যুবক আইটিআই পড়ুয়া কৌশিক পুরকাইত ওরফে শুভকে পশ্চিমপাড়ার লোকজন মোষ চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারে। মাসির বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়েছিলেন কৌশিক। রাতে একটি নির্জন গাছতলায় বসে ফোনে কথা বলছিলেন নিরীহ ওই যুবক। তখনই পশ্চিমপাড়া থেকে একদল লোক এসে তাঁকে মোষ চোর সন্দেহে পেটাতে শুরু করে। ওই দিনই কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হয় কৌশিকের। স্থানীয় হরিণডাঙা পঞ্চায়েতের সদস্য তথা তৃণমূল নেতা তাপস মল্লিকই গণপিটুনিতে ইন্ধন দিয়েছিল বলে অভিযোগ। এমনকী ওই নেতা নিজেও মারধর করেছে বলে এলাকাবাসীর একাংশ জানান। এরপর এলাকা ছেড়ে পালায় তাপস। দু’দিন পর উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর থেকে গ্রেফতার করা হয় তাপসকে।
এ দিন নিহত কৌশিকের মা চন্দ্রাদেবী ঘটনার কথা বলতে গিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন আইনজীবীর কাছে। তিনি জয়ন্তবাবুকে জানান, তাঁর ছেলেকে যারা পিটিয়ে মেরে ফেলল তাদের অনেকেই এখনও গ্রেফতার হয়নি। অথচ ঘটনার পরের দিন ছেলের দেহ নিয়ে ওই গ্রামে গিয়েছিল গ্রামবাসীরা। পুলিশ তাদের গণ্ডগোল বাধানোর অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। চন্দ্রাদেবী আইনজীবীকে বলেন, ‘‘আপনি অবিলম্বে তাঁদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করুন।’’ সিআইডি প্রসঙ্গে নিহত ছাত্রের বাবা কার্তিক পুরকাইত বলেন, ‘‘সিআইডি তদন্ত আমরা চাইনি ঠিকই। কিন্ত তাঁরা আমাদের কথা দিয়েছেন একমাসের মধ্যে সিআইডি থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ নিহত ছাত্রের পরিবারের মতো জয়ন্তবাবুও চান এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত হোক। তাই তিনি উচ্চ আদালতে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাবেন বলে জানান।
কামদুনি কাণ্ডের প্রতিবাদী মুখ মৌসুমী কয়াল, টুম্পা কয়াল ও সমীর আইচও নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। নিহত ছাত্রের মায়ের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তাঁরা। তবে এ দিন বহু মানুষ মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। মিছিলটি দেখার জন্য রাস্তার দু’ধারে লোকের ভিড় জমে যায়। মিছিলে হাঁটার সময় অনেকেই কার্তিকবাবুকে এসে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। কার্তিকবাবু বলেন, ‘‘যতই হুমকি আসুক না কেন আমরা পিছু হটব না। এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy