Advertisement
E-Paper

তিন দিন খাটে পড়ে মৃত ছেলে, মেঝেতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা

ছেলেই ছিলেন তাঁর একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু সেই ছেলের দেহ পড়ে রয়েছে বিছানার উপরে। আর বিছানার পাশে মেঝেতে মুখ গুঁজে পড়ে আছেন মা। গুমোট ঘরের ভিতরে কটু গন্ধে কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকাও দায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৪৫
মর্মান্তিক: এ ভাবেই মাটিতে পড়ে ছিলেন অশক্ত গৌরীদেবী। বিছানায় ছেলে পার্থসারথি ঘোষের দেহ। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

মর্মান্তিক: এ ভাবেই মাটিতে পড়ে ছিলেন অশক্ত গৌরীদেবী। বিছানায় ছেলে পার্থসারথি ঘোষের দেহ। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

ছেলেই ছিলেন তাঁর একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু সেই ছেলের দেহ পড়ে রয়েছে বিছানার উপরে। আর বিছানার পাশে মেঝেতে মুখ গুঁজে পড়ে আছেন মা। গুমোট ঘরের ভিতরে কটু গন্ধে কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকাও দায়।
কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘণ্টা নয়, দিন তিনেক গরমের মধ্যে ওই ভাবেই মৃত ছেলের পাশে পড়ে ছিলেন মা। তেমনই জানিয়েছেন তিনি। খাবার তো দূর, এক ফোঁটা জলও খেতে পাননি। কারণ, তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত। নড়াচড়ারও ক্ষমতা নেই। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমান, ছেলের মৃত্যুর খবর জানানোর জন্য খাট থেকে নামতে গিয়েই সম্ভবত মেঝেতে পড়ে যান ওই বৃদ্ধা।
শুক্রবার সকাল থেকে কটু গন্ধ পাওয়ায় বরাহনগরের শশিভূষণ নিয়োগী গার্ডেন লেনের বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ওই বাড়িতে এসে দরজা ভেঙে দেখে, খাটে পড়ে মৃত ছেলে, যাঁর শরীরে পচন ধরে গিয়েছে। মেঝেতে মা। দু’জনের শরীরেই পিঁপড়ে, পোকামাকড় ঘুরে বেড়াচ্ছে। মৃতের নাম পার্থসারথি ঘোষ (৪৬)। তাঁর ৭১ বছরের মায়ের নাম গৌরী ঘোষ।
মৃতের স্ত্রী রূপা ঘোষ জানান, পার্থসারথির বাবা বিভূতিনাথ ঘোষ আসানসোলে চাকরি করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পরে গৌরীদেবী ওই চাকরি পান। রূপা ন’বছরের ছেলেকে নিয়ে কয়েক বছর ধরে অন্যত্র থাকেন। ওই বাড়িতে থাকতেন শুধু গৌরীদেবী ও পার্থসারথি।
এ দিন পার্থসারথির দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশ সেটি স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। গৌরীদেবীকে ঘর থেকে বাইরে বার করে জল খাওয়ান বাসিন্দারা। তাঁকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, একতলা বাড়ির চার দিকের দরজাই কয়েক দিন ধরে বন্ধ ছিল। খোলা ছিল শুধু কয়েকটি জানলা। এ দিন সকাল থেকে কটু গন্ধে ওই বাড়ির
ধারেকাছে যাওয়া যাচ্ছিল না। বাসিন্দারা দরজায় বারবার ধাক্কা দিয়েছেন। জানলা থেকে ডাকাডাকিও করেছেন। কিন্তু সাড়া মেলেনি কারও। অথচ, জানলা দিয়ে পার্থসারথিকে বিছানায় পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। পুলিশ উদ্ধার করার পরে ওই বৃদ্ধা জানান, মঙ্গলবার রাতে তাঁর ছেলে মারা গিয়েছেন। তিনি প্রতিবেশীদের ডাকার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে সেই শব্দ কেউ শুনতে পাননি। এ দিন সকালেও প্রতিবেশীরা ডাকাডাকি করার সময়ে সম্ভবত উত্তর দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর কথা শোনা যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই পরিবার পাড়ায় সে ভাবে মেলামেশা করত না। পার্থসারথি আগে বাড়িতেই কম্পিউটার শেখাতেন। কিন্তু পরে ছেড়ে দেন। মূলত গৌরীদেবীর পেনশনের টাকাতেই সংসার চলত।
পড়শিরা জানান, সোমবার পার্থসারথিকে শেষ বারের জন্য দেখা গিয়েছিল স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানে। সেখানকার এক কর্মী জানান, ওই ব্যক্তি সম্ভবত জন্ডিসে ভুগছিলেন। তাঁকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছিল। স্থানীয় এক মহিলা পার্থসারথিকে রিকশায় বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন।
পার্থসারথির স্ত্রী রূপা জানান, ২০০৫ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। ছেলে জন্মানোর পর থেকে দু’জনের প্রায়ই অশান্তি হত। তাই তিনি ছেলেকে নিয়ে অন্যত্র চলে যান। রূপা আইসিডিএস-এর কর্মী। নিজের আয় দিয়েই কোনও মতে সংসার চালান তিনি। এখন কী ভাবে স্বামীর শেষকৃত্য করবেন, জানেন না। তবে পাড়ার বাসিন্দারা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন বলেই জানান তিনি। বাসিন্দাদের মনে একটাই প্রশ্ন: বৃদ্ধা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে কে তাঁর দেখভাল করবেন?

Death Mystery Pathetic
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy