এই হাল হয়েছে হাসিবুরের। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
শিক্ষকের হাতে প্রহৃত হল পঞ্চম শ্রেণিক এক ছাত্র। তবে পড়া না পারা, কিংবা ক্লাসে দুষ্টুমির মতো কারণে নয়। ‘জিন তাড়াতে’ জুটেছে চড়-থাপ্পর। অভিযোগ, তাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে উস্তির আল আমি মিল্লি মিশনের পঞ্চম শ্রেণির প়ড়ুয়া হাসিবুর রহমান।
ডায়মন্ড হারবার থানায় ডায়েরি করেছে ছেলেটির পরিবার। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার আশ্বাস মিলেছে মিশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও। ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার পরে হাসিবুর আপাতত বাড়িতেই আছে।
এখনও আতঙ্ক কাটেনি বছর দ’শেকের কিশোরের। মঙ্গলবার ডায়মন্ড হারবারের বামনপাড়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, গাল, গলায় কালশিটে দাগ। সারা গায়ে ব্যথা। মারধরের ঘটনাটি ঘটেছিল রবিবার রাতে। ছেলেটি বলে, ‘‘আমি বিছানায় বসে পড়ছিলাম। হঠাৎ স্যার এলেন। আমাকে জিনে ধরেছে বলে শুরু হল চড়-থাপ্পর।’’ ছেলেটির অভিযোগ, হস্টেলের কেয়ারটেকারও মারধরে হাত লাগান।
কেন মনে হল ‘জিন’ ভর করেছে হাসিবুলকে?
মিশনেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, ক’দিন ধরে অসংলগ্ন কথা বলছিল হাসিবুর। সে জন্যই ধরে নেওয়া হয় ‘জিনে ধরেছে’ তাকে। কিন্তু এমন কুসংস্কার ও অলীক ধারণাকে কী ভাবে প্রশ্রয় দিতে পারেন একজন শিক্ষক?
মিশনের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফ্ফর-সহ কয়েকজন সহশিক্ষক এ দিন এসেছিলেন ছেলেটির বাড়িতে। গফ্ফর বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। যে বা যারা ছেলেটিকে মারধর করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ তাঁর মতে, ‘জিনে ধরা’ অন্ধবিশ্বাস। এ সবের বিরুদ্ধে মানুষের সচেতনতা বাড়ানো দরকার। অভিযুক্ত চিকিৎসক ও কেয়ারটেকার বেপাত্তা বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। পুলিশ জানায়, খোঁজ চলছে অভিযুক্তদের।
যদিও ঘটনা হল, প্রহৃত ছেলেটির পরিবারও ধরে নিচ্ছে, জিনেই ধরেছে হাসিবুলকে। যে কারণে, সোমবার ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে চিকিৎসার পরে মঙ্গলবার হাসিবুলকে ঝাড়ফুঁকের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় ওঝার কাছে!
হাসিবুলের মা আসমিনা মোকামি বলেন, ‘‘সোমবার খবর পেয়ে হস্টেলে গিয়ে দেখি, ছেলে বিছানায় শুয়ে রয়েছে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেননি। ছেলেকে এনে হাসপাতালে চিকিৎসা করাই।’’ কিন্তু হাসপাতালে যদি চিকিৎসা করালেন, তবে ওঝার কাছে ছুটলেন কেন? জানেন না, ‘জিনে ধরা’ ব্যাপারটা সবটাই কুসংস্কার? আসমিনা আমতা আমতা করে বলেন, ‘‘আসলে পাড়ার লোকজন বলল, তাই একবার নিয়েই গেলাম। তবে শরীর ভাল না হলে বুধবার হাসপাতালেই নিয়ে যাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy