Advertisement
E-Paper

স্যার চলে গেলে অনেক কিছু হারাব

এ দিকে এই দিনই মানিকবাবুর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়ি থেকে বার বার ফোন আসে। তাঁর মাকে বাড়ির লোক হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন।

সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৫
ছেড়ে-দেব-না: এই স্যারকেই যেতে দিতে চায় না পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

ছেড়ে-দেব-না: এই স্যারকেই যেতে দিতে চায় না পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

সকাল ১০টা। স্কুলে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের ভিড়। পড়ুয়াদের হাতে প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা ‘মানিক স্যারকে স্কুল থেকে যেতে দেব না।’ তার সঙ্গে চলছে স্লোগান। খুদে পড়ুয়াদের সঙ্গে গলা মেলান অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। কেউ কেউ আবার ডুকরে কেঁদেও উঠছে।

মঙ্গলবার গোসাবার রাধানগর কালীবাড়ি হাইস্কুলে এমন দৃশ্য দেখে অবাক শিক্ষক মণিশঙ্কর নায়েক নিজেই। ওই স্কুলের শিক্ষক মণিশঙ্করবাবু বারুইপুরের চম্পাহাটিতে বদলি হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তা মেনে নিতে পারছেন না কচিকাঁচাদের দল। তাদের কাছে মণিশঙ্করবাবু ‘মানিক স্যার’ বলেই পরিচিত। সম্প্রতি তাঁর বদলির চিঠি আসে। কিন্তু প্রিয় স্যারের বদলির কথা শুনে ছাত্রছাত্রীরা কান্নায় ভেঙে পড়ে। তাদের কথায়, ‘‘স্কুলের উন্নয়ন করেছেন মানিক স্যার। স্যার চলে গেলে আমরা অনেক কিছু হারাব।’’

এ দিকে এই দিনই মানিকবাবুর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়ি থেকে বার বার ফোন আসে। তাঁর মাকে বাড়ির লোক হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের ভালবাসার বাধন ভেঙে ওই দিন বেরোতে পারেননি মণিশঙ্করবাবু। হাতজোড় করে বার বার পড়ুয়া ও অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। অভিভাবকেরা বুঝলেও কচিকাঁচাদের দল নাছোড়। মণিশঙ্করবাবু বলেন, ‘‘আমার মা খুব অসুস্থ। এতদূরে স্কুল থেকে যাতায়াতে সমস্যা হয়। মায়ের অসুস্থতার কারণেই আমাকে বদলি নিতে হয়েছে। কিন্তু ছাত্ররা আমাকে এতটা ভালবাসে তা জানতাম না। ওদের কথা খুব মনে পড়বে।’’

খবর পেয়ে স্কুলে এসে বোঝান পরিচালন সমিতির সভাপতি বলরাম মণ্ডল। কিন্তু তাতেও তেমন লাভ হয়নি। দিনভর ছাত্রদের ভালবাসার ঘেরাটোপে বসে থাকেন মণিশঙ্করবাবু। জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে মণিশঙ্করবাবুর বিষয়টি দেখা হচ্ছে বলে জানানো হলে বিকেলের পরে যেতে দেওয়া হয় ওই শিক্ষককে।

২০০৬ সালে ইংরেজির শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন মণিশঙ্করবাবু। অল্পদিনের মধ্যেই ছাত্রদের প্রিয় শিক্ষক হয়ে ওঠেন তিনি। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রণবকুমার জানা প্রায় দু’বছর ধরে শারীরিক অসুস্থতার জন্য স্কুলে আসতে পারেন না। ২০১৬ সালে পরিচালন সমিতি থেকে মণিশঙ্করবাবুকে স্কুলের দায়িত্ব ভার সামলানোর কথা বলা হয়। তারপর থেকে মণিশঙ্করবাবু স্কুলের উন্নতি করেন। তাঁর কাজ এলাকার মানুষের মন জয় করে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (ডিআই) বাদল পাত্র বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। খোঁজ নিয়ে দেখছি। সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

স্কুল সূত্রের খবর, প্রধান শিক্ষক প্রণবকুমার জানার আমলে স্কুলে তেমন উন্নতি হয়নি। অথচ কম সময়ের মধ্যে মণিশঙ্করবাবু যে ভাবে স্কুলের পঠনপাঠন থেকে শুরু করে স্কুলের উন্নতি করেছেন তা সকলের নজর কেড়েছে। তবে তাঁকে স্কুল সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সিল বা পদ ব্যবহার করতে পারতেন না। অথচ তাঁকেই সব দায়িত্ব সামলাতে হতো। যা নিয়ে তিনি নানা ভাবে অপমানিত হতেন। তাই তিনি স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে কেউ কেউ মনে করেন।

বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক খুব অসুস্থ। তিনি হাঁটতে পারেন না। তাঁর বেতন যদি বন্ধ হয়ে যায় পুরো পরিবার ভেসে যাবে। এটা একটি মানবিক দিক। তবে ওই শিক্ষক ভাল কাজ করে মানুষের মন জয় করেছেন। পারিবারিক সমস্যার কারণেই মণিশঙ্করবাবু বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে চলে যেতে চান। সেটাও আমাদের দেখতে হবে।

Students Teacher Transfer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy