Advertisement
E-Paper

স্কুলে পুষ্টি জোগাচ্ছে খুদেরাই

ছুটির ঘণ্টা পড়ে গেলেই ওদের মুখ ভার। সব জায়গায় দেখা যায় স্কুল ছুটি হলে কচিকাঁচাদের দৌড়ে বেরিয়ে আসার দৃশ্য। গাইঘাটার শশাডাঙা এফপি স্কুল যেন ব্যতিক্রম। স্কুল ছেড়ে ফিরতেই চায় না খুদেরা।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৫
স্কুলের সব্জি বাগানে খুদেরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

স্কুলের সব্জি বাগানে খুদেরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

ছুটির ঘণ্টা পড়ে গেলেই ওদের মুখ ভার। সব জায়গায় দেখা যায় স্কুল ছুটি হলে কচিকাঁচাদের দৌড়ে বেরিয়ে আসার দৃশ্য। গাইঘাটার শশাডাঙা এফপি স্কুল যেন ব্যতিক্রম। স্কুল ছেড়ে ফিরতেই চায় না খুদেরা।

কেন?

শশাডাঙা এফপি স্কুলের পডু়য়ারা সব্জি চাষ করে। স্কুলেরই দেড় কাটা জমিতে তাদের ফলানো সব্জি ব্যবহার হয় মিড-ডে মিলে। শীতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, লঙ্কা, লাল শাক, পালং শাক। গরমে বেগুন, পেঁপে। তা ছাড়া, বিনামূল্যে কম্পিউটার শেখা, দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশের কাজ, আবৃত্তি, নাটক শেখা তো আছেই!

বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা এ স্কুলে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। পড়ুয়ার সংখ্যা ১২৯। পাঁচ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও এক জন পার্শ্বশিক্ষক রয়েছেন। এলাকাটি কৃষিপ্রধান। ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে সব্জি চাষ শুরু হয় ২০১০ সালে। উদ্যোগের পিছনে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাই। আশপাশের অন্য স্কুেলর মিড-ডে মিলে যখন সয়াবিন, ডিম, খিচুরি বা বাজার থেকে কেনা সব্জি খাওয়ানো হয়, তখন শশাডাঙা এফপি স্কুলের পড়ুয়াদের পাতে পড়ে জৈব সারে তাদেরই ফলানো সব্জি। শিক্ষকদের উৎসাহে প্রতিদিন চাষের কাজে নামা পডুয়াদের কাছে এখন নেশার মতো!

প্রধান শিক্ষক বাবুলাল সরকার বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের মধ্যে মিড-ডে মিলে আগ্রহ বাড়াতে ও তাদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতেই ওই পরিকল্পনা।’’ স্কুলের এই ব্যতিক্রমী প্রয়াসের কথা জানেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সম্রাট চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকার আন্তরিক চেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। স্কুলের কাজকর্ম আমাদের কাছে একটি মডেল।’’

স্কুল সূত্রে জানা যায়, পড়ুয়াদের অনেকেই পরিবারের বড়দের সঙ্গে খেতের কাজে হাত লাগায়। ফলে, আগে অনেক সময়েই মিড-ডে মিল ছেড়ে তারা পরিবারের চাষের কাজে চলে যেত। এতে তাদের পড়াশোনার ক্ষতি হত। সেই কারণেই এই উদ্যোগ। স্কুলে ফলানো সব্জি বাইরে বিক্রি হয় না। পুরোটাই ব্যবহার হয় মিড-ডে মিলে। মাটি কোপানো থেকে সার দেওয়া, বীজ লাগানো থেকে আগাছা পরিষ্কার—শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে সব প্রক্রিয়ায় হাত লাগায় খুদেরা। স্কুলেই রয়েছে জৈব সার তৈরির ব্যবস্থা। তরতাজা সব্জি নিজেরা কেটে রাঁধুনিদের হাতে তুলে দেয় পড়ুয়ারা।

দিনকয়েক আগে স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, নিজেদের ফলানো কপির তরকারি দিয়ে ভাত খাচ্ছে দ্বিতীয় শ্রেণির তৃষ্ণা মণ্ডল, চতুর্থ শ্রেণির সৌমিক মণ্ডলেরা। তারা বলে, ‘‘বাড়িতেও সব্জি খাই। কিন্তু নিজেদের তৈরি সব্জির স্বাদ যেন অন্য রকম!’’ স্কুল থেকে শিখে অনেকে বাড়ির ছোট্ট জমিতেও সব্জি চাষ করছে বলে জানায়। শিক্ষক দীপঙ্কর মণ্ডল জানান, সব্জি চাষের আগেও পড়ুয়ারা মিড-ডে মিল খেত। এখনকার মতো উৎসাহ ছিল না। অভিভাবক অজয় দাস, নবকুমার মণ্ডল জানান, এখন বাচ্চারা বাড়ির খাবারের থেকে মিড-ডে মিল খেতে বেশি আগ্রহী। ছেলেমেয়েরা যে চাষবাস ও অনেক কিছু শিখছে, তাতে তাঁরা খুশি। শিক্ষকেরা জানান, কচিকাঁচারা যাতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, সে জন্য তাদের সব রকম প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ছুটির পরে তাই কেউ চাষের কাজে, কেউ আবৃত্তি, কেউ নাটকের মহলায় দৌড়য়।

Students cultivating vegetables School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy