বিচারাধীন বন্দি হিসেবে অভিযুক্তকে জেল খাটতে হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন বছরের বেশি। ধাপে ধাপে মামলা এগিয়েছে, শুনানির দিন পড়েছে। কিন্তু রায়দানের সময় যখন আর হাতে গোনা কয়েকটা মাত্র দিন, তখনই জানা গেল, ওই মামলায় রায়দানের এক্তিয়ার বিচারকের আদৌ নেই। মামলা পাঠাতে হবে আলিপুরের বিশেষ পকসো আদালতে। আবার নতুন করে শুনানি হবে অগস্ট থেকে। এই পরিস্থিতিতে একই মামলা দু’বার করে লড়ার খরচ জোগাতে হবে অভিযুক্ত পরিবারকে। সুবিচার পাওয়ার প্রক্রিয়া পিছিয়ে গেল অভিযোগকারী পরিবারেরও।
কাকদ্বীপে এ হেন মামলায় বিতর্ক দানা বেঁধেছে বিচারপ্রক্রিয়া ঘিরেই। জানা গিয়েছে, নামখানার দেবনগরের বাসিন্দা পেশায় পান বরজ শ্রমিক বরুণ নায়েকের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। জানুয়ারিতেই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপর থেকে সাড়ে তিন বছর ধরে বিচারাধীন বন্দি হিসেবেই আছেন তিনি। মামলা চলছিল কাকদ্বীপ আদালতে। অবিবাহিত বরুণের বয়স এখন প্রায় ৩৫ বছর।
চার্জশিটে পুলিশ সে সময়ে নাবালিকা ধর্ষণের মামলা (পকসো) যুক্ত করলেও তৎকালীন এসিজেএম আদালত সেটিকে গুরুত্ব না দিয়ে এডিজে আদালতে পাঠিয়ে দেয়। তৎকালীন এডিজে বিচারক রীতা মুখোপাধ্যায় চার্জ গঠনের সময় পকসো আইনের ধারা বাদ দিয়ে দেন। বিচার শুরু হয়।
এর মধ্যে বিচারক বদল হয়েছে। এডিজে আদালতের নতুন বিচারক হয়েছেন পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী। প্রায় ৮ মাস ধরে মামলার শুনানি চলেছে। সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ। ১২ জুলাই রায়দানের দিনও ঠিক হয়ে যায়।
কিন্তু তারপরেই সামনে আসে নতুন গোলমাল। বিচারক খতিয়ে দেখেন, ওই মামলা পকসো আইনেই বিচার হওয়ার কথা ছিল। এই মামলার শুনানি বা রায়দানের এক্তিয়ার এডিজে আদালতের আদৌ নেই। মামলাটি পাঠাতে হবে বিশেষ আদালতে। কেন না, চার্জ গঠন প্রক্রিয়াই ভুল হয়েছে।
নজিরবিহীন এই ঘটনায় পুরো বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে বির্তক দেখা দিয়েছে। এখন দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপের পালা শুরু হয়েছে। ও দিকে, মামলা চালাতে গিয়ে সাড়ে তিন বছরে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে অভিযুক্তের ভাই, পেশায় পানবরজের শ্রমিক তরুণ নায়েক। তাঁর কথায়, ‘‘জমি বন্ধক রেখে মামলা চালাচ্ছি। চারবার আইনজীবী পাল্টেছি। সাড়ে তিন বছরেও বিচার পাইনি। এখন যদি নতুন করে আলিপুরে ছুটতে হয়, তা হলে আমার যেটুকু বসত রয়েছে, সে সব বিক্রি করে সপরিবার পথে বসতে হবে।’’ তরুণবাবুর আক্ষেপ, ‘‘যাঁরা এই ভুল করলেন, তাঁরা কী জানেন, আমাদের সমস্যা কতটা বেড়ে গেল?’’
অভিযুক্তের আইনজীবী দেবাশিস দাস বলেন, ‘‘চার মাস হল মামলা লড়ছি মক্কেলের হয়ে। হাকিমের উচিত ছিল, পকসো আইনে মামলার চার্জ গঠন করা। কিন্তু আদালত বিচার-বিবেচনা করেই ওই ধারা বাদ দিয়েছে বলে আমরা আর কথা বলিনি।’’
এ ব্যাপারে সরকারি আইনজীবীরা কেন বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন না চার্জ গঠনের সময়, উঠছে সেই প্রশ্ন।
কাকদ্বীপ এডিজে আদালতের সরকারি আইনজীবী অমিতকুমার দাস বলেন, ‘‘ভুল যদি হয়ে থাকে, তবে সকলেরই হয়েছে। কেবলমাত্র এডিজে আদালতের সরকারি আইনজীবীদের দোষারোপ করলে হবে না।’’ তাঁর প্রশ্ন, কেন এসিজেএম আদালতের তৎকালীন সরকারি আইনজীবী, পকসো ধারা বাদ দিয়ে মামলাটি এডিজে আদালতে পাঠানোর সুপারিশ করলেন? এসিজেএম আদালতের সরকারি আইনজীবী সত্যরঞ্জন মাইতি বলেন, ‘‘কেন এ রকম হল, তা খতিয়ে দেখে বলতে পারব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy