Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ভবিষ্যতে অঙ্ক নিয়ে পড়তে চায় সুদীপ্ত

আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের মতো তার সুযোগ হয়নি ভাল পোশাক পরার। ইচ্ছে মতো আনন্দেও মেতে উঠতে পারেনি সে। পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করেই পিছিয়ে আসতে হয়েছে তাকে। পড়তে পড়তে অনেক বাধার মুখেও পড়েছে সে।

বাবা ও মায়ের সঙ্গে সুদীপ্ত। ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার।

বাবা ও মায়ের সঙ্গে সুদীপ্ত। ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০১:১৯
Share: Save:

আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের মতো তার সুযোগ হয়নি ভাল পোশাক পরার। ইচ্ছে মতো আনন্দেও মেতে উঠতে পারেনি সে। পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করেই পিছিয়ে আসতে হয়েছে তাকে। পড়তে পড়তে অনেক বাধার মুখেও পড়েছে সে। কিন্তু সব বাধা পেরিয়ে আজ ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে কাকদ্বীপ শিশু শিক্ষায়তনের ছাত্র সুদীপ্ত ভাণ্ডারী।

বাবার আয় বলতে সামান্য একটি সবজির দোকান। যা থেকে চলে ছ’জনের সংসার। কাকদ্বীপের হরিপুরের বাসিন্দা সুদীপ্তের বাবা প্রশান্ত ভাণ্ডারী নিজেও এমএ প্রথমবর্ষ পর্যন্ত পড়েছেন। কিন্তু অভাবের তাড়নায় পড়া শেষ করতে পারেননি। তিনি চান, ছেলে পড়াশোনা করে বড় হোক। কিন্তু এই আয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তার মধ্যে তাঁর স্ত্রী অসুস্থ। প্রত্যেক মাসে ওষুধের খরচ চালাতেই হিমসিম খেতে হয়। সুদীপ্ত চায় বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করতে। কী ভাবে পড়ার টাকা জোগাড় হবে সেই নিয়ে চিন্তিত প্রশান্তবাবু। সুদীপ্ত বলে, ‘‘বাবা একটা কথা বলে দিয়েছিল, আমরা গরিব, আমায় যা করতে হবে নিজের চেষ্টায়। সেটাই মাথায় রেখে পথ চলছি।’’ সুদীপ্তর স্কুল এবং স্কুলের শিক্ষকরা সবসময় তাকে সাহায্য করেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপকুমার প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমরা ওর পড়ার খরচ মকুব করতে পেরেছি। গ্রন্থাগারের সমস্ত বই ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে পেরেছি। আমাদের স্কুলে ভর্তি হলে তাকে আরও খানিকটা সাহায্য করব।’’ সুদীপ্ত অঙ্কের শিক্ষক হতে চায়। এখন বিজ্ঞান নিয়েই ভর্তি হচ্ছে সে। আর বাবা ব্যবসায়ী সমিতি থেকে শুরু করে নানা জায়গায় সাহায্যের জন্য যাচ্ছেন। সুদীপ্তকে নিয়ে আশাবাদী তার মা জ্যোৎস্নাদেবীও।

এরকম দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের ভাল পড়াশোনার জন্য আরও ভাল পরিকাঠামো প্রয়োজন কাকদ্বীপের বড় স্কুলগুলির। বীরেন্দ্র বিদ্যানিকেতন, শিশু শিক্ষায়তনের মতো স্কুলগুলিতে রয়েছে গবেষণাগারের সমস্যা। কয়েক বছর হল নতুন সিলেবাস হলেও সেই অনুসারে ল্যাবে নতুন যন্ত্রপাতি আসেনি। সরকারি টাকায় যা পাওয়া গিয়েছে, তা বেশ অপ্রতুল। এ সব পরিকাঠামোগত ত্রুটি সারিয়ে তোলা গেলে আরও ভাল ফল কাকদ্বীপ মহকুমা থেকে হতে পারে বলে মনে করছেন অভিভাবকেরাও।

কাকদ্বীপ শিশুশিক্ষায়তনের এক ছাত্রের অভিভাবক আব্দুল মণির লস্কর বলেন, ‘‘আমার ছেলেও এ বছর মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ পেয়েছে। কিন্তু এখন মাধ্যমিক ছেলেমেদেরও অনেক ক্ষেত্রে ল্যাব ব্যবহার করতে হচ্ছে। এখানে ল্যাবের অবস্থা খুব খারাপ।’’ আরও এক অভিভাবক অশোক কুমার গায়েন বলেন, ‘‘আমার ছেলে ২০১৭ তে মাধ্যমিক দেবে। কিন্তু স্কুলে অনেক বেশি ছাত্র বলে এখনও দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হয়। পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই।’’ তাঁদের আশা, মহকুমার এগিয়ে থাকা স্কুলগুলিতে পরিকাঠামোগত ত্রুটি সারিয়ে তুললে হয়তো আরও ভাল ফল হবে ছেলেমেয়েদের। মাধ্যমিকের পর কাকদ্বীপেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mathematics student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE